Advertisment

কলকাতাতেই আবিষ্কারের পথে করোনার ওষুধ, বিশ্বকে আশার আলো দেখাচ্ছেন বাঙালি গবেষকরা

কীভাবে এই ভাইরাসের গ্রাস থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করা যায় সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে চিকিৎসক-বিজ্ঞানী মহলের।স্বস্তি দিতে চলেছে কলকাতার এই ইনস্টিটিউট।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অলঙ্করণ- অভিজিৎ বিশ্বাস

করোনাকে রুখতে সর্বস্তরেই চলছে লড়াই। কীভাবে এই ভাইরাসের গ্রাস থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করা যায় সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে চিকিৎসক-বিজ্ঞানী মহলের। এই বিষয়েই এবার স্বস্তি দিতে চলেছে কলকাতার এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্স। সম্প্রতি এখানে তৈরি করা হয়েছে করোনা প্রতিরোধকারী একটি ‘ন্যানোমেডিসিন’। কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম হবে এই ওষুধ, এমন আশ্বাসবাণীই দিচ্ছেন সংস্থার গবেষকরা।

Advertisment

তবে বিশ্ব যেখানে প্রতিনিয়ত চরিত্র বদলানো করোনার প্রতিষেধক খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে কলকাতার গবেষকরা কীভাবে এই প্রতিষেধক নিয়ে এতটা আত্মবিশ্বাসী? জানা গিয়েছে, এই ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে ন্যানোটেকনোলজির উপর ভিত্তি করে। আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাস কোভিডের বাড়বাড়ন্ত রোধের জন্য এই ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে বেশ কিছু ন্যানোপার্টিক্যাল। ইতিমধ্যেই প্রাণীদেহে সাড়া দিয়েছে এই ওষুধ। তবে এখনও মানবশরীরে এর প্রয়োগ হয়নি, সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

এক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে এক জায়গাতেই তা হল সময়। কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে ভাইরাস থেকে স্ট্রেন তৈরি করা হবে তারপর তা প্রাণী দেহে ফের প্রয়োগ করা হবে। তবে এই কাজ করতে সময় লাগবে দেড় কিংবা দু'বছর। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রাক্তন অধ্যাপক এবং ডিপার্টমেন্ট অফ কেমিক্যাল বায়োলজিকাল অ্যান্ড ম্যাক্রোমলিকুলার সায়েন্সের অধ্যাপক ডাঃ সমীর পাল জানান যে এই করোনা রোগটি থেকেই যাবে বিশ্বে। সুতরাং সেই ভাবনাকে সামনে রেখেই এই ন্যানোমেডিসিন তৈরি করা হচ্ছে।

ডা: পাল বলেন, "জানি, সকলের কাছে এই ওষুধটিকে পৌঁছে দিতে অনেকটা সময় লাগবে। কিন্তু এই মুহুর্তে এই ন্যানোমেডিসিনটির কার্যকারিতাকে পরীক্ষা করে দেখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ভাইরাসের অতিমারীত্ব শেষ হয়ে গেলেও রোগটি কিন্তু থেকে যাবে। তখন তা নিরাময়েরও প্রয়োজন হবে। আগামীতে আবারও ফিরে আসবে এই মহামারী।"

কী এই ন্যানোমেডিসিন ?

মূলত ম্যাঙ্গানিজ সল্ট এবং লেবু থেকে প্রাপ্ত সাইট্রাস নির্যাস দিয়ে ন্যানোপার্টিকাল তৈরি করে বানানো হয়েছে এই ন্যানোমেডিসিনটি। ডাঃ পালের কথায় বাজারে যে ওষুধ রয়েছে তার থেকে এই ন্যানোমেডিসিনের কার্যকারীতা অনেক বেশি। কারণ, অন্যান্য ওষুধের উপাদানগুলি অনেক সময় আমাদের নিউক্লিয়াসের বেড়াজাল টপকে আরএনএ বা ডিএনএ অবধি পৌঁছতে পারে না। কিন্তু যেহেতু এই ওষুধ ন্যানোপার্টিকালস অর্থাৎ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু দিয়ে তৈরি তাই এরা সহজেই সেই প্রাচীর টপকে মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হচ্ছে।

ডাঃ সমীর পাল আরও বলেন, "এই ওষুধটি থেকে রিয়্যাক্টিভ অক্সিজেন কোষের মধ্যে প্রবেশ করে, যা কোষে একটা অ্যালার্ম সিস্টেমকে জাগিয়ে তোলে। এরফলে সেই কোষগুলি নিজেদের তৈরি রাখতে পারে যেকোনও রকম ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করার জন্য। এর লক্ষ্য, যেই মুহুর্তে মানবকোষে হামলা চালাবে এই ভাইরাসরা তখনই যেন কোষগুলি নিজে থেকেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুরু করে। এমনকী যদি এই ন্যানোমেডিসিনটিকে কিছুটা বেশি পরিমাণে প্রয়োগ করা যায় সেক্ষেত্রে সরাসরি রোগটিকেও নির্মূল করতেও সক্ষম হতে পারে। আসলে এই ওষুধের এক উচ্চপ্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।"

প্রসঙ্গত, এই ইনস্টিটিউটে গত তিন বছর ধরে এই ন্যানোমেডিসিন নিয়ে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে প্রাণীদেহেও প্রয়োগ করা হয়েছে যার ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক। দেখা গিয়েছে প্রাণীদেহে জন্ডিস, নিওন্যাটাল জন্ডিস, বহুদিন ধরে কিডনি সমস্যা আছে এমন এবং নিউরাল সমস্যার বিরুদ্ধেও লড়াই করতে পেরেছে এই ওষুধ। সেই ভরসাতেই মানব শরীরে এই ওষুধ প্রয়োগ করার জন্য ডিজিসিআই-এর কাছে অনুমোদন চেয়েছে ইনস্টিটিউটটি। এখনও পর্যন্ত ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই ওষুধ প্রয়োগ হয়েছে প্রাণীদেহে। কিন্তু করোনা প্রতিরোধে নেবুলাইজারের সঙ্গে এই ওষুধটি প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন ডাঃ পাল।

কীভাবে মানব দেহে কাজ করবে এই ওষুধটি?

কৃত্রিমভাবে তৈরি এই ন্যানোমেডিসিনটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল এটি আমাদের দেহের কোষে যে জারণ (অক্সিডেশন) এবং বিজারণ (রিডাকশন) প্রক্রিয়াটি ঘটে তার সাম্য বজায় রাখে। কোষকে সজীব রাখতে গেলে এই জারণ অর্থাৎ অক্সিজেন সংযুক্তি খুবই প্রয়োজন। আর এই জারণ বিজারণ বা রেডক্স প্রক্রিয়ায় রিয়্যাক্টিভ অক্সিজেন স্পিসিস (আরওএস) তৈরি হয় এবং দেহের মূল কাঠামো অর্থাৎ লিপিড (ফ্যাট), প্রোটিন এবং নিউক্লিক অ্যাসিডকে জারণের মাধ্যমে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উজ্জীবিত করে তোলে। এই ন্যানোমেডিসিনটি এই আরওএস প্রক্রিয়াটিকেই নিয়ন্ত্রণ করবে যাতে আমাদের দেহ ভাইরাস কিংবা ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে দক্ষতার সঙ্গে লড়াই করে যেতে পারে।

ডাঃ সমীর পাল জানিয়েছেন সম্প্রতি ইঁদুরের দেহে যখন এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয় তখন দেখা গিয়েছে আড়াই ঘন্টার মধ্যে ইঁদুরের দেহে জন্ডিস সৃষ্টিকারী বিলিরুবিন রঞ্জকের পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে। এবার তাই সেই আশাতে ভরসা রেখেই কোভিড লড়াই লড়তে চলছে ন্যানোমেডিসিন।

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

kolkata coronavirus
Advertisment