চৈত্র মাস মানেই সেল। আর এ সময়ে আকর্ষণীয় ছাড়ে জিনিস কিনতে গিজগিজে ভিড় দেখা যায় নিউ মার্কেট, গাড়িয়া হাট ও হাতিবাগানে। কিন্তু এ বছর সেল শুরু হলেও মাছি তাড়াচ্ছেন দোকানদাররা। ভিড় এড়ানোর বার্তা পৌঁছতেই অঘোষিত কার্ফু দেখা গিয়েছে শহরে। প্যাচপ্যাচে গরমে, ধাক্কাধাক্কি করে, জিনিস কিনতে যাচ্ছেন না মানুষ। কারণ, করোনা। এই মারণ ভাইরাসের আতঙ্কেই ত্রস্ত শহরবাসী। আর এ জন্য বিগত চার দিন যাবৎ ব্যবসায়ীর ক্যাশবাক্সে ভাটার টান।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুল খাঁ বললেন, "দিন এনে দিন খাই, এই ভাইরাস কতটা মারবে জানি না, কিন্তু পেটে মেরেছে। মানুষ না এলে জিনিস কিনবে কে? সবারই প্রাণের ভয় রয়েছে। কিন্তু আমাদের সেই ভয় করলে চলবে না। খেতে হবে, বাচ্চাদের স্কুলের ফি দিতে হবে, মাস্টারদের মাইনে দিতে হবে। কী করে চলবে জানি না! কবে এই করোনা চলে যাবে পৃথিবী ছেড়ে তাও জানি না। চিন্তায় চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে"। ব্যবসায়ী মহম্মদ আলির কথায়, "এককালীন একটা বাজার হয় চৈত্র মাসে। তিন দিন চলে গিয়েছে। এখনও সে রকম বিক্রি হয়নি। বউনিই হচ্ছে বিকেলের দিকে। অথচ সকাল থেকেই বসে রয়েছি"।
একই সুর শোনা গেল হগ মার্কেটের সুদীপ দে'র গলায়। তাঁর বক্তব্য, "বাংলাদেশ থেকে মাল ঢোকে, সেটা বন্ধ রয়েছে। এর উপর নিউ মার্কেটে মূলত বাংলাদেশের মানুষ ও প্রতিবেশী দেশের মানুষ কেনা কাটি করে। এঁদের থেকেই মূলত আয় করতে পারি। এখন তাঁদের মার্কেটে দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়াও কলকাতার যাঁরা আসেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ আসেছেন। তাও শুধু ঘুরতে। সবাই দেখে চলে যায়, কেই কেনাকাটি করছে না"।
কেনাবেচার আঁতুরঘর নিউমার্কেট। চৈত্র মাসে যে এলাকায় ভিড়ে গুঁতোগুতি করতে পা ফেলা দায়, সেখানেই প্রেমিক প্রমিকা হাত দুলিয়ে দিব্য স্বচ্ছন্দে হেঁটে যাচ্ছেন। পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন দোকানদাররা, কিন্তু বিক্রি নেই। অন্যদিকে মন্দার বাজার ফুচকার দোকানেও। নিউ মার্কেটের ফুচকা বিক্রেতার হাতে মাখা আলুতেও এখন করোনা আতঙ্ক। নিউ মার্কেটের ফুচকা ওয়ালা সন্দীপ মালাকার বলেন, "আমি চার দিন আগে পর্যন্ত ভিড় সামলাতে পারছিলাম না। একটা লাইনের পর আরেকটা লাইনে মানুষ অপেক্ষা করত। হঠাৎ কী হল, ফুচকা খেতে আসছে না মানুষ! আমি তাও হাত ধোয়ার জল রেখেছি"।
বুধবার মধ্যাহ্ন ভোজনের সময় নিউ মার্কেটে নামী রেস্তোরার কর্মচারীদের চেয়ারে বসে পাবজি খেলতে দেখা গেল। কাউন্টারে বসে থাকা আধিকারিকের চোখ তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। নাম প্রকাশ করতে চাইলেন না তিনি। ওই আধিকারিক বলেন, "ভাগারের মাংস, ব্লাড ফ্লু, আর এখন এই করোনায় ব্যবসা লাটে উঠেছে। মালিক হিসেব চাইলে কিছু করার থাকে না। পিক টাইমে প্রত্যেকটা টেবিল ফাঁকা। দু একটা লোক খেতে এলে কি আর ব্যবসা চলে"।