শেষমেষ লকডাউনের পথেই হাটছে কলকাতা। রাজ্যের কয়েকটি জেলায় সম্পূর্ণ ও বাকিগুলি জেলার বেশ কয়েকটি মহকুমায় চলবে এই লকডাউন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা অনুযায়ী জনতা কার্ফু যে লকডাউনের ট্রায়াল ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিন মোদির আবেদন অনুযায়ী কলকাতা দেখল কাঁসর, ঘণ্টা, থালার ধ্বনিও। বাড়ির বাইরে পা রাখেন নি অধিকাংশ আমজনতা।
চিনের উহান প্রদেশে প্রথম আবির্ভূত করোনাভাইরাস বা COVID-19 এখন শুধু বিশ্ব বা দেশ নয়, কলকাতা-সহ সারা রাজ্য়ের কাছেও আতঙ্কের। ইতিমধ্য়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সর্বস্তরের পরীক্ষাও স্থগিত। এবার বন্ধ রাখতে হচ্ছে ট্রেন, মেট্রো, বাস, সহ সমস্ত যোগাযোগের মাধ্যম। কেন্দ্রের প্রস্তাব অনুযায়ী লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কলকাতা ও রাজ্য়ের প্রতিটি পুর এলাকায় সোমবার বিকেল থেকেই লকডাউন হয়ে যাবে।
সাধারণ মানুষ যে রবিবারের জনতার কার্ফুকে সমর্থন করেছেন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বনধের কলকাতায়ও এমন জনমানব শূন্য়তা দেখা যায় না। কাউকে জোরজবরদস্তি করা হয়নি। সকালে থেকে এই দৃশ্য় দেখার পর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সরকারও লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেনি। মহানগরে এবং অন্যান্য পুরসভা এলাকায় লকডাউন চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। কলকাতা ও পুর এলাকাগুলির লকডাউনের পর সম্পূর্ণ শাটডাউনের পথেও হাঁটতে পারে রাজ্য়। এমনটা মনে করছেন ইন্সটিউট অফ চাইল্ড হেল্থের চিকিৎসক সুমন পোদ্দারও। তবে তিনি মনে করেন, শুধু লকডাউন করলেই হবে না, প্রশাসনিক ভাবে কড়া হতে হবে।
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ: দেশের ৭৫টি জেলা চিহ্নিত
ডাঃ পোদ্দার বলেন, "এখনও পুরোপুরি লকডাউনে যায়নি। তবে আজকের ঘোষণা সফল। সাধারণ মানুষ এটা গ্রহন করেছে। আমার মনে হচ্ছে এক-দু'দিনের মধ্য়েই টোটাল শাটডাউন হবে। আংশিক লকডাউনে পুরোপুরি ফল মিলবে না। কিছুটা হয়ত মিলবে। আড্ডার ভিড় হালকা করতে প্রয়োজনে পুলিশকে নামাতে হবে। ১৪৪ ধারা জারি না হলেও পুলিশকে সতর্ক হতে হবে। আমরা আমাদের হাসপাতাল চালানো নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। সমস্যাটা হলো, হাসাপাতাল খোলা থাকবে, কিন্তু যোগাযোগ কীভাবে হবে? কর্মীরা কীভাবে হাসপাতলে আসবেন? সুতরাং জরুরি পরিষেবা চালু রাখার জন্য় বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে সরকারকে বিশেষ উদ্য়োগ নিতে হবে।"
তবে সরকারি এই ঘোষণার সমর্থন করলেও করোনা প্রতিরোধে সরকার সর্বতোভাবে সক্ষম বলে মনে করেন না চিকিৎসকদের একাংশ। বিশিষ্ট চিকিৎসক সৌমেন দাস বলেন, "ভাইরাস প্রতিরোধের রাস্তা আনেক আছে। এটাও একটা রাস্তা। কিন্তু আমরা সবার জন্য় স্যানিটাইজেশন, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে পারছি না। কেরালা যেমন সব জায়গায় আলাদা করে হাত ধোওয়ার ব্য়বস্থা করেছে। এখানে তো কিছুই হয়নি। এগুলো একটা পদ্ধতি। এগুলোতে একটা খরচের ব্য়াপার আছে। লকডাউনে সেই খরচ নেই। একাট নোটিশ দিল। বন্ধ হয়ে গেল। মাস্ক, স্য়ানটাইজেশন নিয়ে সমস্য়ায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। লকডাউনের সময় মানুষের খাওয়াদাওয়ার সহজ সমাধান করা জরুরি।"
এদিন কলকাতা সহ রাজ্যের চিত্রে পরিষ্কার, মানুষ করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মজা এখন উধাও হয়ে গিয়েছে। করোনা এখন সত্য়ি 'সিরিয়াস'। তাই যেন এদিন জনতার কার্ফু দাবি তুলে দিল আগামী লকডাউনের।