করোনা আতঙ্কে ত্রস্ত গোটা দেশ। মাস্ক ও স্যানিটাইজারই এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু। কিন্তু চাহিদার সঙ্গে সমান তালে জোগান নেই এই দুই ভরসার। শহরে হন্যে হয়ে খুঁজেও মিলছে না মাস্ক ও স্যানিটাইজার। আর যদিও বা কিছু ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু দাম শুনে চক্ষু চড়ক গাছ ক্রেতাদের। দোকানদাররা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, 'নিতে হলে নিন, নাহলে যান'। অগত্যা বেশি দাম দিয়েই মাস্ক ও স্যানিটাইজার কিনতে হচ্ছে আমজনতাকে। কিন্তু যাঁরা গরিব মানুষ, যাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাঁরা কি করবেন? তাঁদের কাছে মাস্ক ও স্যানিটাইজার কেনা বিলাসিতা! অথচ সংক্রমণের ভয় তো ষোল আনা বিদ্যমান। তাহলে উপায়? এই ভাবনাই নাড়া দিয়েছে গাঙ্গুলি বাগান ৪ নং বিদ্যাসাগর কলোনির থিম পার্কের বাসিন্দা পরিমল দে-কে। আর এরপরই উপায় খুঁজে বের করেছেন পরিমলবাবু।
কাপড় দিয়ে চলছে মাস্ক বানানোর কাজ
গরিব মানুষদের হাতে বিনামূল্যে তুলে দিতে চান মাস্ক ও স্যানিটাইজার। তাই ইউটিউব থেকে তিনি শিখেছেন মাস্ক ও স্যানিটাইজার বানানোর প্রক্রিয়া। এরপর পাড়ার মহিলাদের নিয়ে সেই পদ্ধতিতেই মাস্ক ও স্যানিটাইজার বানিয়ে বিলি করছেন গরিব মানুষদের মধ্যে।
মাস্ক বানাচ্ছেন পাড়ার মহিলারা
আরও পড়ুন:করোনার কোপ চৈত্র সেলে
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে পরিমল দে বলেন, 'প্রথমে পরীক্ষার জন্য কাগজ দিয়ে বানিয়েছি, এরপর ধুয়ে ফেলা যায় এমন কিছু কাপড় দিয়ে মাস্ক বানিয়েছি। মাস্ক আর স্যানিটাইজার খাবারের চেয়েও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে এখন। শহরের একাধিক দোকান খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না এগুলি। আর পেলেও সেগুলির যা দাম তা গরিব মানুষের সাধ্যের বাইরে। ঠিক তখনই নেটে আমরা দেখি কীভাবে ঘরেই বানানো সম্ভব মাস্ক ও স্যানিটাইজার। এরপর আমি থিম পার্ক ৪ নম্বরের মেয়েদের নিয়ে বসে ঠিক করলাম মাস্ক ও স্যানিটাইজার বানানোর বিষয়টি। সহজে বানাতে পারলে এগুলি বিনা পয়সায় মানুষকে দিতে পারব'।
আরও পড়ুন: বাংলার উচ্চপদস্থ আমলার পরিবারেই করোনা, উঠছে তদন্তের দাবি
পরিমল দের কথায়, 'টিসু পেপার দিয়ে তৈরি মাস্ক মানুষ একদিনের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। আর কাপড় দিয়ে তৈরি মাস্ক ধুয়ে নিয়ে দিন দশেক ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া স্যানিটাইজারও বানিয়েছি। ৫০০ গ্রাম মিনারেল ওয়াটারের সঙ্গে আফটার সেভ লোশন মিশিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্যানিটাইজার তৈরি হয়েছে'।
ঘরে তৈরি স্যানিটাইজার
ইতিমধ্যে বহু মানুষের হাতে একেবারে বিনামুল্যে তুলেও দেওয়া হয়েছে মাস্ক ও স্যানিটাইজার। পরিমলবাবুর সঙ্গে রয়েছেন ডাঃ রমিতা দে, পান্না নস্কর, শুকলা মন্ডল, রুনা-সহ আরও অনেক মহিলা। তাঁরা সংসার সামলে, অফিসের কাজের ফাঁকে এসে মাস্ক ও স্যানিটাইজার তৈরি করছেন।