Advertisment

মালিক ভাড়াটে দ্বন্দ্ব-সমাধান অধরা, জীর্ণ বাড়ির ধসই যেন কলকাতার ভবিতব্য

মূলত শরিকি বিবাদ, মালিক-ভাড়াটে গন্ডগোলের জেরেই বাড়িগুলি সংস্কার করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কলকাতা পুরসভা নোটিস টাঙিয়ে গেলেও কোনও পরোয়া করে না বসবাসকারীরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Dangerous house collapses is Kolkatas future

পুরনো কলকাতার জরাজীর্ণ বাড়ি। ছবি- শশী ঘোষ

অহিরিটোলার দুঃসংবাদে বুধবার কলকাতার ঘুম ভেঙেছে। কিন্তু এখানেই কী থামবে জরাজীর্ণ বাড়ির ধসে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা? লাখ টাকার এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনের অন্দরে। কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে সমাধান হওয়ার তেমন কোনও রাস্তা নেই। হেরিটেজ কমিশনের মতে, ব্যক্তিগত মালিকানার ক্ষেত্রে কী করে সমাধান হবে তা বলাও খুব সমস্যা।

Advertisment

কলকাতায় বিপজ্জনক বাড়ির সমস্যা নতুন কিছু নয়। ফি বছরই এমন জরাজীর্ণ বাড়ি ধসে, বারান্দা ভেঙে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মূলত শরিকি বিবাদ, মালিক-ভাড়াটে গন্ডগোলের জেরেই বাড়িগুলি সংস্কার করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কলকাতা পুরসভা নোটিস টাঙিয়ে গেলেও কোনও পরোয়া করে না বসবাসকারীরা। সে মালিক হোক বা ভাড়াটে। কলকাতার পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের কথায়, 'মহানগরে ১০০টি বিপজ্জনক বাড়ি যখন-তখন ভেঙে পড়তে পারে। মালিক-ভাড়াটের গন্ডগোলের জেরে বাড়িগুলি মেরামত হয় না। উচ্ছেদ করারও আইন নেই।'

publive-image
বিপজ্জনক বোর্ড সাঁটা মধ্য কলকাতার বাড়ি ছবি- শশী ঘোষ

কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, মহানগরে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার বিপজ্জনক বাড়ি রযেছে। অহিরিটোলা, বৌবাজারসহ উত্তর কলকাতাতেই অধিকাংশ বিপজ্জনক পুরনো বাড়ি। কারও বাড়ি ভাড়া ৫০ টাকা তো তো কারও ১০০টাকা। বৌবাজারে এমনই এক বিপজ্জনক বাড়িতে থাকেন অসীম বিশ্বাস। সকালের দুর্ঘটনার কথাও শুনেছেন অসীমবাবু। এমন বাড়িতে থাকেন ভয় করে না? অসীমবাবুর জবাব, 'কি আর করব। যা কপালে আছে তাতো হবেই। যখন ডাক আসবে চলে যাব।' বাড়িতে বিপজ্জনক নোটিশ সাঁটানো আছে.. 'মেরামতের টাকা কে দেবে? থাকবো কোথায়।' এর বেশি জবাব দিতে নারাজ অসীম বিশ্বাস। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন বিপজ্জনক বাড়ির ভাড়াটে তরুন পাল বলেন, 'আমরা বহু বছর ধরে ভাড়া আছি। তখন থেকেই এই অবস্থা। মালিক তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এত সস্তায় কোথায় থাকতে পারব।'

বাড়ি ভেঙে পড়ে প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হেরিটেজ কমিশনও। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাদেরও কিছু করার নেই। কমিশনের সেক্রেটারি উমাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'এসব ঘটনা আমাদেরও খুব ভাবাচ্ছে। বেশিরভাগ বাড়িই ব্যক্তিগত। সেই সব বাড়ি মেরমতি কী ভাবে হবে। সরকার টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত বাড়ি মেরামিত করবে এটা তো অসম্ভব ব্যাপার। এজন্য কিছু পরিকল্পনা প্রয়োজন। বিদেশে সাধারণত বড় ট্রাস্ট উদ্যোগ নেয়। ধনী দেশ বলে সম্ভব। পাবলিক ফান্ডিং থেকেও ওই সব দেশে রক্ষনাবেক্ষণ হয়। এখানে ব্যক্তিগত মালিকানার ক্ষেত্রে কী করে সমাধান হবে তা বলা খুব সমস্যা।'

publive-image
খসে পড়েছে পলেস্তারা, বাড়ির ইঁট বেড়িয়ে পড়েছে ছবি শশী ঘোষ

কলকাতায় বিপজ্জনক বাড়ি ধসে পড়ে শুধু ওই বাড়ির মালিক বা ভাড়াটের ক্ষতি হওয়া ছাড়াও আরও বিপদ আছে। এসব বাড়ির পাশে ফুটপাতে থাকা বাসিন্দারাও আতঙ্কে দিন কাটান। ফুটপাতে থেকেও নিস্তার নেই এমন বিপজ্জনক বাড়ি থেকে। রাজা সুবোধ মল্লিকের বাড়ির চাঁই ভেঙে পড়ে ফুটপাতে বসবাসকারী জখম হয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে কী করা যাবে। উমাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'বড় ফান্ডিংয়ের দরকার।'

আরও পড়ুন- বড় সন্তানকে হারানোর কয়েক ঘন্টায় মধ্যেই কন্যার জন্ম দিলেন আহিরিটোলার প্রসূতি

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

kolkata news kolkata KMC
Advertisment