Advertisment

হাওড়ায় অবলীলায় মণ্ডপসজ্জার দায়িত্ব নিয়ে এগোচ্ছে ভিন্নভাবে সক্ষম ছাত্রছাত্রীরা

"এদেরকে কাচের গ্লাসে জল পর্যন্ত দেয় না কেউ, পাছে ভেঙে ফেলে তারা। সেখানে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ সাজানোর ভার তুলে দেওয়া হয়েছে ওদের হাতে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
durga puja 2019

ক্যালেন্ডার বলছে হাতে মাত্র আর সাতদিন। ঢাকে কাঠি পড়ার অপেক্ষায় আমবাঙালি। নিম্মচাপের ভরা বৃষ্টিতে শেষ মূহুর্তে নাজেহাল পটুয়াপাড়া। পাড়ার দাদা কাকারা কারিগরদের হুড়ো দিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মন্ডপের বাকি কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। এমন সময় নিজেদের ছন্দে চলছে জনা কুড়ি ছেলেমেয়ে। যারা মানসিক ও শরীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। যাদের কাঁধে রয়েছে সার্বজনীন দূর্গাপুজোর মন্ডপ সাজানোর মতো গুরুদায়িত্ব। হ্যাঁ, ঠিক পড়েছেন। ওরাও পারে। কেবলমাত্র সুযোগের অপেক্ষা করে। নিজেদের সাধ্যমত তৈরি করেছে কাগজ, কাঠ ও কাপড়ের নানা ধরনের মডেল। যা দিয়ে সাজবে দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল।

Advertisment

publive-image

হাওড়া কল্যাণপল্লী সার্বজনীন দুর্গোৎসব ইয়ুথ ক্লাবের পুজো কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবছর তাঁরা থিমের প্রতিযোগিতায় নাম না লিখিয়ে বরং মানবিকতার চিত্র তুলে ধরতে চান। এক কর্মকর্তার কথায়, "কেউ শুনেছেন কখনো, ভিন্নভাবে সক্ষম ছাত্রছাত্রীরা দুর্গাপূজার গোটা একটা মন্ডপ নিজেরাই বানিয়ে ফেলছে? ব্যতিক্রমী ভাবনা নিয়ে এবার এমনটাই হবে হাওড়া কল্যাণপল্লী ইয়ুথ ক্লাবে। ওরা যা পারবে, যেমনটা পারবে, ঠিক তেমনটা দিয়েই সাজিয়ে দেবে আমাদের ক্লাবের পুজোকে।"

publive-image

মাস দুয়েক ধরে শ্যামবাজারে সংবেদন এর কর্মশালায় ওই ছাত্রছাত্রীরা বানিয়ে চলেছে মন্ডপ সাজানোর আনুষঙ্গিক সামগ্রী। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সংবেদনের সদস্য সমিত সাহা বলেন, "শুধু মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী নয়, অন্ধ, মূক ছেলেমেয়েরাও রয়েছে কল্যাণপল্লী সার্বজনীন দুর্গোৎসবের মন্ডপ তৈরির কাজে। এদেরকে কাচের গ্লাসে জল পর্যন্ত দেয় না কেউ, পাছে ভেঙে ফেলে তারা। সেখানে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ সাজানোর ভার তুলে দেওয়া হয়েছে ওদের হাতে। সত্যি কথা বলতে, এরকম সুযোগ তো কেউ ওদের কোনোদিন দেয় নি। নিজেদের দক্ষতা তুলে ধরার সুযোগ পায় না ওরা। তাই এই সুযোগটা যে দেওয়া হয়েছে, এতে আমরা খুব খুশি।"

দয়া-করুণা নয়, সুযোগের অপেক্ষা করে তীর্থনাথ পাল, অভিজিৎ দত্ত, মলয় চক্রবর্তী, রীতম পার্থ বসাক, নিরঞ্জন পাল, স্বর্ণালী পালের মত ছেলেমেয়েরা। ছোটবেলা থেকে টুকটাক হাতের কাজ করে থাকে। কিন্তু পুজোয় তাবড় তাবড় শিল্পীদের তো আর টেক্কা দেওয়া সম্ভব নয় ওদের পক্ষে। তবুও দিনের অনেকটা সময় ধরে মনের মাধুরি মিশিয়ে সাধ্যমত জিনিস বানিয়ে চলেছে।

publive-image

publive-image

তৃতীয়ার দিন উদ্ধোধন হবে এই পুজো মন্ডপ। রূপান্তরকামী আইনজীবি মেঘ সায়ন্তন থিমের নাম দিয়েছেন,  'সহানুভূতি নয়, সমানুভূতি'। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে মেঘ সায়ন্তন জানান, "পুজোর মুখ হিসাবে সবসময় চেনা সফল মুখগুলোই উঠে আসে। যেখানে দুর্গাপুজো এমন একটা পুজো যেখানে আমরা ওরা এরকম বিভাজন হয় না। তাই দয়া-করুণা করে নয়, আমাদের সমাজে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করা হোক। সে কারণেই ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই নামকরণ করেছি আমি।"

Durga Puja 2019
Advertisment