ডিজিটাল যুগে এসে প্রতিদিন কত কী হারিয়ে যাচ্ছে। রোজই শৈশব-কৈশোরের নস্ট্যালজিয়া এক এক করে মিলিয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে। একটা সময় ছিল যখন কলকাতার দেওয়ালে দেওয়ালে, সিনেমার কাটআউট-বিজ্ঞাপনে রমরমা ছিল হাতে আঁকা ছবির। তখন এখনকার মতো ফ্লেক্স, ব্যানার ছিল না।
Advertisment
শিল্পীর তুলির টানে জীবন্ত হয়ে উঠতেন শাহেনশাহ-মিঠুনরা। এখন সেসব অতীত হওয়ার মুখে। পুরনো সেই নস্ট্যালজিয়াই এবার পুজোর শহরে ফিরছে শিল্পী মানস দাসের হাত ধরে। উত্তর কলকাতার নস্ট্যালজিক হাতিবাগানে নলিন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীনের এবারের থিম সেই ফেলে আসা স্মৃতি। হাতে আঁকা বিজ্ঞাপন, সিনেমার পোস্টারেই সেজে উঠেছে মণ্ডপ।
৯১তম বর্ষে পা দিয়েছে এই পুজো। এবারের থিম-- 'ফিরিয়ে দাও তুলির টান'। এখন সর্বত্রই ডিজিটাল প্রিন্টিংয়ের রমরমা। হাতে আঁকা শিল্পীদের এখন কদর নেই। অথচ আট-নয়ের দশকেও এঁরাই ছিলেন বিজ্ঞাপন জগতের রথী-মহারথী। তাঁদের হাতে আঁকা বচ্চন-শাহরুখ শোভা পেত সিনেমা হলের উপর। এছাড়াও দোকান, ব্যবসা, ভোট, রাজনীতি সর্বত্রই এঁদের নামডাক তুলির টানের জন্য।
আজ সেসব কোথায়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে শিল্পী বলেছেন, "এক সময় কলকাতার নামী বস্ত্রবিপণির বিজ্ঞাপন আঁকা শিল্পী আজ আমার কাছে দেওয়ালে থিমের আঁকিবুকি করছেন। তাহলেই বোঝা যায়, কী অবস্থা এই শিল্পীদের। তাঁদের প্রতি ভালবাসা থেকেই এই থিম। সেই তুলির টান ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আমার প্রতিবাদ থিমের রূপ নিয়েছে নলিন সরকার স্ট্রিটে।"
উত্তর কলকাতার বেশ নামকরা পুজো এই নলিন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীন। বিগত বছরে বিভিন্ন থিম ভাবনায় দর্শকদের নজর কেড়েছে এই পুজো। এবারও চমক থিমে। গোটা পাড়াটাকেই থিমের কাজে ব্যবহার করেছেন শিল্পী। দেওয়ালে দেওয়ালে পুরনো দিনের দোকানের বিজ্ঞাপন, মণ্ডপের ঢোকার মুখে অমিতাভ-মিঠুনদের হাতে আঁকা পোস্টার দেখা যাবে।
একটা সময় বিজ্ঞাপন মানেই যে রং-তুলির কাজ ছাড়া ভাবা যেত না সেটাই এখন নস্ট্যালজিয়ায় পরিণত হচ্ছে। সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনার তাগিদে শিল্পীর এই ভাবনা তাই অভিনবও বটে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন