সেই পুরাণ-মহাকাব্যে তাদের কথা উঠে এসেছে বার বার। মহাপ্রস্থানের পথে শেষপর্যন্ত যুধিষ্ঠিরের সঙ্গী ছিল সেই। আর তাদের-ই কি না দূর-ছাই করা! তারাও তো পরিবারের সদস্য হয়। মানুষের সুখে-দুঃখে সঙ্গী হয়, গল্প-সিনেমাতেও উদাহরণ দেখেছি বার বার। সেই সারমেয়রা কেন ব্রাত্য হবে দেবীর পুজোয়। সেই ভাবনা থেকেই এবার কলকাতার দুর্গাপুজোয় থিম ভাবনায় চার পেয়ে, মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী। দুর্গাপুজোর পুজোর মুখ এই সারমেয়ই। কলকাতার দুই প্রান্তে দুই পোষ্য-বান্ধব মণ্ডপ এবারের দুর্গাপুজোয় নতুন চমক।
পুজোতে যখন পাড়ার সবাই আনন্দে মেতে ওঠে, তখন তারা কেন ব্রাত্য থাকবে! পুজোর সময় বহু মানুষের যাতায়াতে যাতে সমস্যা না হয় সে কারণে তাদের সরতে হয়। কিন্তু উত্তর কলকাতার বিধান সরণির অ্যাটলাস ক্লাবের থিম ভাবনায় বড় চমক এই পথকুকুরই। শুক্রবার ছিল 'ওয়ার্ল্ড ডগ ডে'। আর ওইদিনই এবারের অভিনব ভাবনা প্রকাশ করেছে অ্যাটলাস ক্লাব। ৩৯ বছরের পুজোয় এবার তাদের থিম- 'অনন্ত আশ্রয়'। পুজোর মুখ এক সারমেয়। মণ্ডপও হবে পোষ্য-বান্ধব। যেখানে অনন্ত আশ্রয় পাবেন পরিবারের এই চার পেয়ে সদস্যও।
সম্প্রতি নয়ডার এক দম্পতি শিরোনামে আসেন তাঁদের পোষ্য সারমেয়কে নিয়ে কেদারনাথ দর্শনে গিয়ে। যার জেরে পবিত্র তীর্থস্থানের পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও সেই ঘটনা। সেই থেকেই এমন ভাবনা মাথায় আসে থিমশিল্পী সায়ক রাজের। তাঁর কথায়, "মহাদেব বা পশুপতির মন্দিরে যদি কোনও পশু হাজির হয় তাহলে তাতে আপত্তি কোথায়? পুরাণ থেকে মহাকাব্য, এমনকী বামা খ্যাপা থেকে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনেও সারমেয়র উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। তাহলে দুর্গাপুজোয় কেন ব্রাত্য থাকবে ওরা?"
আরও পড়ুন বুর্জ খলিফাকেও টেক্কা দেবে শ্রীভূমির ভ্যাটিকান, চোখ ধাঁধাতে তৈরি চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা
পুজোয় পোষ্য বিশেষ করে সারমেয়র উপস্থিতি নিয়ে যতই বিতর্ক হোক না কেন তা ভাবতে রাজি নন উদ্যোক্তা এবং শিল্পী। শিল্পী জানিয়েছেন, "থিম ভাবনায় কুকুরের উপস্থিতিও থাকছে। পোষ্য-বান্ধব মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। মাতৃরূপে দেখা যাবে দেবী দুর্গাকে। আর মায়ের কাছে থাকবে একটি মা কুকুর। সে নিজের সন্তানদের নিরাপত্তা প্রার্থনা করছে। অনন্ত আশ্রয় সেই ভাবনার-ই রূপ।"
এছাড়াও পুজোর থিমেই শুধু সারমেয় থাকছে তা নয়। প্রকৃত অর্থে পোষ্য-বান্ধব মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে যাঁরা পোষ্য নিয়ে ঠাকুর দেখতে আসবেন তাঁদের সুবিধার্থে। প্রতিপদ থেকে তৃতীয় পর্যন্ত মণ্ডপে যাঁরা পোষ্য নিয়ে আসবেন তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। আর পুজোর দিনগুলোতে আসতে চান, তাঁদের জন্য থাকছে হেল্পলাইন নম্বর। ১৫ মিনিট আগে পুজো পরিদর্শনের জন্য ফোন করলেই হবে। মণ্ডপে থাকবেন পশু চিকিৎসক থেকে ট্রেনাররা। সবদিক দিয়ে পোষ্যদের জন্যই থিম এবং মণ্ডপের পরিকল্পনা করেছেন সায়ক রাজ।
আরও পড়ুন দু’বছর আগের উচ্ছ্বাস উধাও, নিয়মরক্ষায় এবার দুর্গাপুজো করবে তো বিজেপি?
উত্তরের মতো দক্ষিণেও এবার থাকছে পোষ্য-বান্ধব পুজোমণ্ডপ। বেহালা ক্লাব এবার এই ভাবনা নিয়ে এসেছে। ৭৮তম বর্ষে তাদের থিম এবার আব্বুলিশ। শিশু এবং শৈশবের হারিয়ে যাওয়া নস্ট্যালজিয়া নিয়ে এবারের তাদের ভাবনা। থিমশিল্পী অদিতি চক্রবর্তী পুজোর কলকাতায় অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম। বেহালা ক্লাবের এবারের ক্যাচলাইনও হল, এবার পুজোয় বাড়ির সব সদস্য মিলে বেহালা ক্লাবের ঠাকুর দেখুন। পোষ্য়দের নিয়ে যাঁরা ঠাকুর দেখতে বেরোন তাঁদের সুবিধার্থে এই ভাবনা। মণ্ডপে পোষ্যদের জন্য থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। তবে শর্ত রয়েছে। পোষ্যকে সম্পূর্ণ টিকাকরণ করা থাকতে হবে এবং তার নথি সঙ্গে রাথকে হবে।
অন্যতম উদ্যোক্তা সায়ন্তন ভট্টাচার্য বলেছেন, "অনেকেই আছেন যাঁরা পোষ্যকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে আসেন। কিন্তু সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। আবার পোষ্যকে দীর্ঘক্ষণ বাড়িতে রেখেও আসা যায় না। সেই কারণেই পোষ্য-বান্ধব মণ্ডপ করা হচ্ছে। যাতে পরিবারের সব সদস্য মিলে আনন্দে ঠাকুর দেখতে পারেন।"