Advertisment

লকডাউনে কলকাতায় মাত্র ৫০ টাকায় ডায়ালিসিস

স্কুলের ব্যাচের কয়েকজন বন্ধু ও তাঁদের ঘনিষ্ঠরা উদ্যোগ নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। নানা পেশার মানুষ এখানে যুক্ত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

লকডাউনে মাত্র ৫০ টাকায় ডায়ালিসিস হচ্ছে কলকাতায়। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব। গরীব ও দুঃস্থ মানুষদের সেবায় লকডাউন চলাকালীন এত সামান্য টাকায় ডায়ালিসিস করছে কিড স্ট্রিটের এক সেবা প্রতিষ্ঠান। কয়েকজন বন্ধুর প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠান এখন নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষের ভরসার জায়গা।

Advertisment

কলকাতায় ঝাঁ-চকচকে হাসাপাতালে ডায়ালিসিসের নানা দর। তবে খোদ কলকাতায় স্বাস্থ্য পরিষেবায় এমন উদ্যোগ বিরল। সংস্থার অন্যতম কর্তা ডা: ফুয়াদ হালিম বলেন, "আমরা ডায়ালিসিস করছি প্রায় ১২ বছর ধরে। আমরা যখন এটা খুলেছিলাম, তখন লক্ষ্য ছিল গরীব ও দুঃস্থ মানুষদের কম পয়সায় ডায়ালিসিস করানো। আমরা ৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। সেখান থেকে কমিয়ে ৪৫০ টাকা করেছি। তারপর ৪০০, পরে ৩৫০ টাকা করেছি। লকডাউনের আগে পর্যন্ত ৩৫০ টাকা করেছিলাম। ২৬ মার্চ থেকে ডায়ালিসিস-এর চার্জ ৫০ টাকা করতে বাধ্য হই।"

কলকাতায় এমন একাধিক প্যাথলজিক্যাল ল্যাব রয়েছে যেখানে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতেই ৪০০ টাকা খরচ হয়।  গোটা কয়েক রক্ত পরীক্ষা করতে গেলে তো নাভিশ্বাস ওঠার যোগাড়। সেখানে মাত্র ৫০ টাকায় ডায়ালিসিস হচ্ছে। ডা. ফুয়াদ বলেন, "যেদিন লকডাউন ঘোষণা করা হয়, তার পরের দিন রোগীদের তরফ থেকে পরিস্থিতি জানতে পারি। ট্রেন, বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে রোগীর পরিবারের লোকেরা বিপাাকে পড়েন। যাতায়াতের খরচ সাঙ্ঘাতিক বেড়ে যায়। এই সমস্যা শুনে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ডায়ালিসিসের জন্য ৫০ টাকা করে নেব। ২৬ মার্চ থেকে ৫০ টাকাতেই ডায়ালিসিস করছি।"

কিড স্ট্রিটে চিকিৎসক ফুয়াদ হালিমের বাড়ি সংলগ্ন প্রায় আড়াই হাজার স্কোয়ার ফিটের 'কলকাতা স্বাস্থ্য সংকল্প'-র এই ডায়ালিসিস সেন্টার। সেখানে ন'টি মেশিন আছে। সাধারণত পাঁচটি শিফটে কাজ হয়। ইমার্জেন্সি হলে রাতের শিফট চালু রাখতে হয়। দিনে প্রায় ৩০-৩৫ জনের ডায়ালিসিস হয় এখানে। এই সংস্থার ফাউন্ডার সেক্রেটারি ডা. ফুয়াদ। তিনি জানান, তাঁদের স্কুলের ব্যাচের কয়েকজন বন্ধু ও তাঁদের ঘনিষ্ঠরা উদ্যোগ নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। নানা পেশার মানুষ এখানে যুক্ত। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়মিত এখানে রোগী আসেন।

কিন্তু কীভাবে সম্ভব হচ্ছে এত কম টাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া? তিনি জানান, এই সেন্টারে আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনা কিছু নেই। এয়ারকন্ডিশনিং নেই, ওয়েটিং এরিয়া নেই, কোনও লাউঞ্জ নেই, ঝাঁ চকচকে ক্যান্টিন নেই, এমনকী কোনও লিফ্টও নেই। ডায়ালিসিস ছাড়া বাড়তি কোনও খরচ নেই। ফুয়াদের কথায়, "এখানকার টেকনিশিয়ানরা যথেষ্ট দক্ষ। তাঁরা মাল্টিপারপাস কাজ করতে অভ্যস্ত। ডায়ালিসিস মেশিন সরবরাহকারীরা বাজারদরের থেকে কম দামে জিনিস দেন। ডোনারদের পুরো অর্থ রোগীদের জন্য ব্যায় করতে পারি।"

এদিকে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইন্সটিটিউটের অর্থনীতির অধ্যাপক ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত বলেন, "কীভাবে স্বল্প অর্থে নির্দিষ্ট উপভোক্তাদের পরিষেবা দেওয়া যায়, তার একটা উদাহরণ ডা. ফুয়াদ হালিমদের সংস্থা। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর সময় আর পাঁচটা উদাহরণের মতো এই সংস্থার কার্যপদ্ধতি তুলে ধরা হয়।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

corona Lockdown COVID-19 corona virus covid
Advertisment