শহরের সমস্ত সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হবে। জোর দেওয়া হবে নিরাপত্তার ওপর। সেইমতো শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন সুইমিং পুলের পর্যবেক্ষনের কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভার তরফে মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশীষ কুমার আশ্বাস দেন, "পর্যবেক্ষনের ফলাফল যা হবে তার ওপর ভিত্তি করেই আগামী দিনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় পাশ না করলে প্রাথমিক ভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল হতে পারে পুলের ছাড়পত্র।"
চলতি মাসের ৪ তারিখ সাঁতার শিখতে গিয়ে কলেজ স্কোয়ার সুইমিং পুলে ডুবে মৃত্যু হয় ১৭ বছরের মহম্মদ শাহবাজের। ঘটনার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় কলেজ স্কোয়ারের ছয়টি সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। শুক্রবার সকাল দশটায় কলেজ স্কোয়ারে পৌঁছে যায় লাইফ সেভিং সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া এবং ক্যালকাটা ডিসট্রিক্ট সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের দুই প্রতিনিধি দল। আট সদস্য ঘুরে দেখেন কলেজ স্কোয়ার। এদিন জলের গভীরতা, জলের গুণগত মান, পুলের দৈর্ঘ্য, ডাইভিং বোর্ডের উচ্চতা সহ মোট ১২ টি বিষয় পরীক্ষা করে দেখা হয়। জানা যাচ্ছে, এই বিষয়গুলি পর্যবেক্ষনের জন্য কলকাতা পুরসভার নিজস্ব কোনো বিশেষজ্ঞ বা ব্যবস্থা নেই। তাই এই দুই বেসরকারি সংস্থার সাহায্য নিয়েছে পুরসভা।
আরও পড়ুন: নাটকীয় ইস্তফা, পার্থর বাড়িতে বৈশাখী
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মেয়র পারিষদ দেবাশীষ কুমার বলেন, "চলতি মাসের ১২ তারিখের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে পর্যবেক্ষণের কাজ। কলেজ স্কোয়ার, হেদুয়া, টালা, পদ্মপুকুর সহ কলকাতার সমস্ত সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘুরে দেখবেন বেসরকারি সংস্থা লাইফ সেভিং সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া এবং ক্যালকাটা ডিসট্রিক্ট সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের আটজন সদস্য।" তিনি আরও বলেন, " লাইফ গার্ড সার্টিফিকেট ছাড়া কোনোরকম প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে না, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাঁতারে বৈধ সংস্থা থেকে সার্টিফকেট থাকলে তবেই কেউ সাঁতার শেখাতে পারবেন"।
আরও পড়ুন: উধাও ফোর্থ স্টেজের ক্যান্সার, নজির গড়ল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
পর্যবেক্ষনের পর ফলাফল যদি আশঙ্কাজনক হয়, তাহলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে কলেজ স্কোয়ার। পাশাপাশি কলকাতার অন্যান্য যে সমস্ত সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে, তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই বহাল থাকবে সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানোর ছাড়পত্র।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে কলেজ স্কোয়ারেই জলে ডুবে মৃত্যু হয় ৬৭ বছর বয়সী সাঁতার প্রশিক্ষক কাজল দত্তের। খবরে প্রকাশ পায় যে তিনি কুচো চিংড়ি খুঁজতে জলে নেমেছিলেন। সেই ঘটনার পর পুর আধিকারিকরা শহরের প্রতিটি ক্লাবের কাছে নির্দেশ পাঠান যেন প্রশিক্ষণ চলাকালীন সর্বসময়েই 'লাইফ সেভার' হাতের কাছে মজুত থাকে। শাহবাজের ক্ষেত্রে দুজন প্রশিক্ষক থাকলেও ছিলেন না কোনও লাইফগার্ড, যার ফলে শিক্ষানবীশদের জন্য তিন ফুটের অগভীর পুল থেকে প্রশিক্ষিত সাঁতারুদের জন্য ১২ ফুটের গভীর পুলে গিয়ে সাঁতার কাটার চেষ্টা করে শাহবাজ। দুজন প্রশিক্ষক জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়েও বাঁচাতে পারেন নি তাকে।