ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জনের থেকে কোনও অংশে কম যান না জাল সিবিআইয়ের আইনজীবী পরিচয়ে ধৃত সনাতন রায়চৌধুরি। গতকালই তাঁর বাড়ি থেকে বিজেপির প্রাথমিক সদস্যপদের রশিদ, দলীয় ভিজিটিং কার্ড বাজেয়াপ্ত হয়। তবে এখানেই শেষ নয়, সরকারি প্রতিনিধি সেজে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়া এবং ভোটের রাজনীতিতেও যুক্ত ছিলেন এই আইনজীবী।
পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, ২০০৯ সালে রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টির টিকিটে দমদম লোকসভা কেন্দ্রে ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের নথি থেকে সেই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। পাঁচ হাজারের বেশি ভোটার তাঁকে ভোটও দেন। তবে তালিকায় সবার শেষে ছিলেন সনাতনের। রাজনীতিতে থাকার সুবাদে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তাঁর। সেই সূত্রেই সিবিআইয়ের আইনজীবী সেজে প্রতারণার জাল বিস্তার করেছিলেন তিনি, এমনটাই অনুমান গোয়েন্দাদের।
এদিকে, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসাবে ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে BRICS সম্মেলনে গিয়েছিলেন সনাতন। ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। তাও আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পুলিশের কাছে জেরায় সে কথা স্বীকারও করেছেন সনাতন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি হিসাবে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। তার আগে ২০১৩ সালে টোকিওতে ইন্দো-জাপান ব্যবসায়িক সম্মেলনেও অংশ নেন তিনি।
আরও পড়ুন সিবিআই স্টিকার লাগানো নীলবাতি গাড়ি, কলকাতায় ধৃত আরও এক ভুয়ো আধিকারিক
এই সব আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রমাণ হিসাবে ছবি হাতে এসেছে পুলিশের। কিন্তু আদৌ সেই সব প্রমাণ সত্যি কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কারণ ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে সনাতন যোগ দিলেন তা নিয়ে খটকা রয়েছে। কীভাবে বিদেশে সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুমতি পেলেন, আমন্ত্রণ পত্র এল কোথা থেকে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশের অনুমান, কেন্দ্রের উচ্চস্তরের আমলারাও সনাতনের সঙ্গে যুক্ত। নাহলে এত বড় মঞ্চে ঢোকা, প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো কীভাবে সম্ভব! সেই সব যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ। তাঁর সহযোগীদের খোঁজ চালানো হচ্ছে। প্রসঙ্গত, সনাতন রায়চৌধুরি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের আইনজীবী হিসাবে প্রভাব খাটিয়ে ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তাঁকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন দেবাঞ্জন তৃণমূলের আইটি সেলের আহ্বায়ক ছিল, দাবি দিলীপ ঘোষের
গত ৩০ জুন তাঁর বিরুদ্ধে গড়িয়াহাট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে তালতলা থানাতেও ভুয়ো পরিচয়ে সম্পত্তি সংক্রান্ত জালিয়াতির অভিযোগ দায়ে হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তাঁর। সেই প্রভাব খাটিয়েই প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ।
সনাতন নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সিবিআইয়ের বিশেষ কৌঁসুলি হিসাবে পরিচয় দিতেন বলে জানা গিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল ও সিবিআইয়ের আইনজীবী হিসাবে পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে গড়িয়াহাট থানা এলাকার ১০ কোটি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ। ভুয়ো আইএএস পরিচয়ে দিয়ে দেবাঞ্জন দেবের প্রতারণা কাণ্ডের রেশ কাটার আগেই আরও এক ভুয়ো আধিকারিকের পর্দাফাঁস হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন