কলকাতা পুরসভায় 'বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর' নিয়োগ করল রাজ্য সরকার। মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ১৪ সদস্যের বোর্ডের চেয়ারপার্সন নিয়োগ করা হয়েছে। বুধবার পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব এক নির্দেশিকায় জানিয়ে দিয়েছেন, এই বোর্ড ৮ মে থেকে কাজ শুরু করবে। উল্লেখ্য়, রাজ্য়ের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বর্তমান মেয়র ফিরহাদ ছাড়া বোর্ডে রয়েছেন পুরবোর্ডের বর্তমান ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ সহ ১২ জন মেয়র পারিষদ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে মহানগরে স্বাভাবিক পরিষেবা বজায় রাখতে এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে। পুরভোটের পর প্রথম সভা পর্যন্ত এই নতুন বোর্ড কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে। কর্পোরেশনের কমিশনার সহ অন্যান্য পদাধিকারীদের এই বোর্ড দায়িত্ব দেবে।
উল্লেখ্য, ৭ মে কলকাতা পুরসভার পুরবোর্ডের দায়িত্ব শেষ হচ্ছে। মঙ্গলবার রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছিল, মেয়র ফিরহাদ হাকিমই ফের কলকাতা পুরসভার অন্তবর্তীকালীন দায়িত্ব পেতে চলেছেন। মেয়র অবশ্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। জানা যায়, কলকাতা পুরসভার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে প্রশাসক নিয়োগ করার কোনও নিয়ম নেই। পুরভবনে চর্চা চলে করোনা পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন পরিষেবা সচল রাখা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে কাউন্সিলররা স্থানীয়ভাবে যোগাযোগ রেখে কাজ করেন। ফিরহাদ হাকিমের নামই আলোচনায় ঘুরে-ফিরে আসে। শেষমেষ এদিন ফিরহাদকে চেয়ারপার্সন করে ১৪ সদস্যের বোর্ডের কথা জানিয়ে দেয় রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে ফিরহাদেরই হাতে থাকা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। নতুন বোর্ডে বর্তমান মেয়র ও ডেপুটি মেয়র ছাড়াও রয়েছেন অন্য মেয়র পারিষদরা। দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিষ কুমার, মঞ্জুর ইকবাল, সামসুজ্জামান আনসারি, তারক সিং, ইন্দ্রানী সাহা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন মজুমদার, আমিরুদ্দিন(ববি), রতন দে, রাম পেয়ারী রাম, অভিজিত মুখোপাধ্যায় এবং বৈশ্বান্বর চট্টোপাধ্য়ায়।
এদিকে, বিজেপি ও সিপিএম এই বোর্ড গঠনের তীব্র বিরোধিতা করেছে। প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, "কোভিড-১৯ মহামারীকে ঢাল করে এই নিয়োগ করা হয়েছে। পুরবোর্ডে এর কোনও বিধান নেই, ঘুরপথে এই মেয়াদ উত্তীর্ণ বোর্ডকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করা হল। আইনের কোনও ধারা প্রয়োগ করতে গেলে কনফিউশন থাকলে ৩৬৪ ধারা ব্যবহার করা যায়। এই নির্দেশ দলীয় ধান্দার জন্য করা হয়েছে।" বিশিষ্ট এই আইনজীবীর মতে, "পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি নিজেই নিজেকে নিয়োগ করেছেন।"
অন্যদিকে, প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। দলের সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, "যে ভাবে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া বোর্ডকে সম্প্রসারিত করা হল তা অন্যায়। এটা হতে পারে না। রাজ্য সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও কি এভাবে এক্সটেন্ড করা যায়? এই নিয়োগ মানা যায় না। নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হবে।" এদিকে পুরসভার কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা প্রকাশ উপাধ্যায়ের বক্তব্য, "পুর কাউন্সিলরদেরও দায়িত্ব দেওয়া উচিত। করোনা মোকাবিলায় তাঁরাই সরাসরি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ রাখছেন।"