দুর্গা পূজোর বাকি আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন। পুজোর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। চারিদিকেই এখন শুধুই পুজোর গন্ধ। আর এর মধ্যেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টিপাত। এই বৃষ্টির জেরে রাস্তাঘাটে জল জমে চরম দুর্ভোগে নিত্যযাত্রীরা। তবে পুজোর এই কয়েক দিনের মাথায়; কী অবস্থা কুমোরটুলির শিল্পীদের? কেমন আছে শিল্পীর হাতের তৈরি প্রতিমা!
গত কয়েকদিন থেকেই একটানা বৃষ্টির জেরে রাজ্য-সহ কলকাতার জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। অবিরাম হয়ে চলছে বৃষ্টি। আগামী সপ্তাহেও বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। জল জমেছে মধ্য ও উত্তর কলকাতার; কলেজ স্ট্রিট, হেদুয়া, আহিরিটোলা-সহ কুমোরটুলির বেশ কিছু অলিগলিতেও। ফলে তৈরি দুর্গা নিয়ে কুমোরটুলির শিল্পীরাও বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন।
অনবরত বৃষ্টির জেরে মাটির ঠাকুর শুকোতে লাগছে দীর্ঘ সময়। ফলে অর্ডার থাকা সত্ত্বেও কাজ এগোচ্ছে না কিছুই। আবার হাতেও সময় কম। তার মধ্যে রাস্তায় জমে থাকার ফলে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিও কিনতে যেতে সময় লাগছে। এদিকে একটানা বৃষ্টিতে নষ্টও হয়ে গিয়েছে বেশ অনেক তৈরী প্রতিমাও। ত্রিপল দিয়ে ঢেকেও বাঁচানো যায়নি। এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত কুমোরটুলির শিল্পীদের। লোকসানের চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে তাদের। আগামী রবিবার থেকে ভারী বৃষ্টির পুর্বাভাস রয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিসের। কী হবে তা জানেন না অনেকেই। সময় মতো ডেলিভারি কি সম্ভব? উত্তর জানা নেই শিল্পীদেরও।
এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে পুজোর অর্ডারেরে কাজ সম্পূর্ণ করতে আরও বেশি সময় লাগবে। এদিন কুমোরটুলির এক শিল্পী, মালা পাল জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টিতে, জল কাদায় ঠাকুর তৈরির কাজে ক্ষতি হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে পুজোর পরিস্থিতি কী হতে চলেছে তা ভেবেই আশঙ্কায় রয়েছেন শিল্পীরা। করোনা কালে এমনিতেই বাজার মন্দা, তার উপর অবিরাম বৃষ্টি কুমোর পাড়ার ব্যবসায় থাবা বসিয়েছে।
কেবলমাত্র শিল্পীরাই নয়, অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদেরও। পুজোর কেনাকাটা এই বৃষ্টিতে প্রায় বন্ধই। ঘরবন্দি হয়ে আছেন সাধারণ মানুষ জন। তাই এবার রাজ্যে অতিবৃষ্টি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রতিমা শিল্পী থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
কুমোরটুলির দুর্গা প্রতিমা প্রায় প্রতি বছরই সেরা শিরোপা পেয়ে থাকে। কিন্তু একটানা বৃষ্টির জেরে কাজ একদমই এগোচ্ছে না। তাই ভাল কাজের চাপে আরও একবার সেরা শিরোপা হাতছাড়া করতে চান না শিল্পীরা। কিন্তু বৃষ্টির উপদ্রবে পরিস্থিতি এখন ইচ্ছের বিপরিতেই চলছে। তাই মন ভাল নেই কুমোরটুলির শিল্পীদের। মাটির দাম প্রায় দ্বিগুণ, বাজার আগুন! কী করে সংসার চলবে সেটাই ভাবাচ্ছে এখানকার শিল্পীদের।
রাজ্যে অন্যসময় বৃষ্টির দাপট থাকলেও এতটা চিন্তা হয় না। বৃষ্টি প্রকৃতির উপহার স্বরূপ। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন শুধুই পুজোর গন্ধ। এদিকে একটানা মুষলধারে বৃষ্টিতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুজোর কাজ এগোচ্ছে না। তাই দুশ্চিন্তা বাড়ছে কুমোরটুলির শিল্পীদের। বড় ঠাকুরের সেভাবে চাহিদা নেই, তার উুপর প্রবল বৃষ্টিতে ত্রিপল টাঙিয়েও বৃষ্টির হাত থেকে ঠাকুর বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ তিলে তিলে গ্রাস করেছে কুমারটুলির শিল্পীদের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন