কলকাতায় আসবেন, আর নকুড়ের সন্দেশ চেখে দেখবেন না, এমন মানুষ বোধহয় ভূ-ভারতে হাতে গোনা। ১৭৫ বছর ধরে কলকাতার সন্দেশ প্রস্তুতকারক 'গিরীশ চন্দ্র দে এবং নকুড় চন্দ্র নন্দী'-র ওপর এবার এল বাঙালি বিদ্বেষীর তকমা।
মঙ্গলবার দুপুরে নেতাজি ইন্ডোরে ছিল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সভা। যে কোনও রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রীরা ভিন রাজ্য থেকে এ শহরে এলে তাঁদের জন্য আগে থেকে বাংলার জনপ্রিয় মিষ্টির বিশেষ ব্যবস্থা রাখা কিন্তু কলকাতার সংস্কৃতিরই একটা অংশ। অমিত শাহের সভার ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলায় মিষ্টি মুখ করানোর বরাত পেয়েছিল উত্তর কলকাতার প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকানটি। সেই মতো বানানো হয়েছিল সন্দেশ কেক, যার পোশাকি নাম 'বাটারস্কচ সন্দেক'। মিষ্টির ওপর লেখা ছিল 'ওয়েলকাম মিস্টার অমিত শাহ'।
ছবি সৌজন্য- পার্থ নন্দী
সেই সন্দেশ কেক নিয়েই যত সমস্যার সূত্রপাত। 'গিরীশ চন্দ্র এবং নকুড় চন্দ্র নন্দী'র তরফে ফেসবুকের এক পোস্ট মারফত জানানো হয় সন্দেকের ছবি তাঁদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করার পর থেকেই 'বাঙালি বিদ্বেষী' তকমা জুটেছে বহু মানুষের কাছ থেকে। পৌনে দু'শ বছরের এক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও ফেসবুক থেকে অমিত শাহের নাম লেখা সন্দেশের ছবি মুছে ফেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ভুল প্রমাণ করা যে তাঁদের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জার, তাও জানানো হয়েছে ওই পোস্টে।
আরও পড়ুন, মিষ্টি যুদ্ধে টাই! রসগোল্লার টক্করে বাংলা-ওড়িশা সমানে সমানে
দোকানের মালিকদের অন্যতম পার্থ নন্দী এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, "ঘটনার আকস্মিকতায় আমি রীতিমত আতঙ্কগ্রস্ত। খুব খারাপ লেগেছে। আমার কাছে একাধিক ফোন এসেছে। অনেকেই বলছেন মিষ্টির বরাত নেওয়া আমার উচিত হয়নি। আমরা বড় শিল্পপতি নই, ছ'প্রজন্ম ধরে এটাই আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। আমাদের ওপর এতগুলো পরিবার, এত কারিগর নির্ভরশীল। সেখানে মিষ্টির বরাত না নেওয়ার কথা ভাবতেই পারিনা। ছোট থেকে শিখে এসেছি, খদ্দের আমাদের লক্ষ্মী। লক্ষ্মীকে ফিরিয়ে দেব কেন"?
"অমিত শাহ বাঙালিদের নিয়ে কী বলেছেন আমি জানি না। আর তাছাড়া আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে পেশাকে গুলিয়ে ফেলবই বা কেন? এর আগেও এত বছরে বহুবার ভিন রাজ্য থেকে কলকাতায় আসা নেতা মন্ত্রীর সভায় মিষ্টি বানানোর বরাত পেয়েছি আমরা, কিন্তু এমনটা আগে কখনও ঘটেনি", পার্থবাবুর গলায় তখনও কিছুটা গ্লানি, কিছুটা অবিশ্বাস। চেনা কলকাতা অচেনা ঠেকছে বোধ হয়...