শহর কলকাতার বউবাজার চত্বর বিখ্যাত সোনাপট্টি হিসেবে। এ রাস্তার দুধারে, ছোট-বড় সোনার দোকান - বিয়ের মরশুম হোক কিংবা নববর্ষের শুভক্ষণ - কলকাতার বেশিরভাগ মানুষ, কিন্তু বউবাজারেই ঢুঁ মারেন। তেমনই এই চত্বরের অলিগলিতে উঁকি মারলে, আরেকটি পেশাও কিন্তু নজরে আসে। ধুলো ঝেড়ে সোনা বের করার জীবিকা- এ জায়গার অনেক দিনের পুরনো এক কর্মকাণ্ড।
Advertisment
রাতের বেলা দোকানপাট বন্ধ হতেই, রাস্তাঘাট ঘুরে ঝাড়ু দিয়ে, দোকানের সামনের অলিগলি পরিষ্কার করেই বহু মানুষ জড়ো করেন সোনার কুচি। যদিও সেই সময় সোনার কুচি মিলেমিশে থাকে ধুলোবালির সঙ্গে। কড়াই ভর্তি করে, সেগুলিকে জড়ো করা হয়। তারপর ধীরে ধীরে, জল দিয়ে ছেঁকে নেওয়া হয় সেই কাদামাটি। পাথর, স্টোনচিপ ফেলে দিয়েই থিতিয়ে নেওয়া হয়। স্বল্প পরিমাণ- ৩০০ মিলিগ্রাম থেকে ৫০০ মিলিগ্রামের মতো সোনার কুচি তাঁদের রোজকার প্রাপ্য।
এই জীবিকার সঙ্গেই যুক্ত এক যুবক জানালেন, যেটুকু সোনা পাওয়া যায় সেটিকে অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে, তারপর পারদের সঙ্গে মেশানো হয়। তারপর সেই স্বল্প সোনাকে সম্বল করেই এই কাজ করা হয়। কম করে ২০-২২ বছর ধরে এই কাজ তাঁরা করছেন। বিশাল কিছু আয় তাদের হয় না। অত্যধিক কষ্ট করেই তারা এই কাজ করেন। বদলে কোনওদিন সোনার পরিমাণ বেশি হয় আবার কোনওদিন কম। অন্যদিকে এই কাজ আসলে যুক্ত সোনার ব্যবসার সঙ্গে। যেসময় সোনার ব্যবসা ভাল হয়, সেই সময় এই কাজও ভাল হয়।
প্রসঙ্গেই, সোনা ব্যবসায়ী সুজিত পাল বলছেন, "এই ব্যবসা কলকাতার অন্যতম একটি পুরনো পেশা। দোকানের জানলা দরজা, তার সামনের অলিগলি এসব ঝাড়ু দিয়েই ওঁরা যা পায়, সেই দিয়েই পেট চালায়।" ব্যবসা কেমন এখন? উত্তরে তিনি বললেন, "বিয়ের মরশুম হলেও ফাঁকাই। এসময় নববর্ষের আশেপাশেও ব্যবসা হয়নি। সোনার দাম এতটাই বেড়ে গেছে মানুষ আসছেও না। এখানে দিনরাত কাজ হয়, লোকজন ভর্তি থাকে, এখন দেখা যাবে বেশিরভাগ মানুষ বসেই আছেন, কাজ নেই! যেহেতু আমাদের নিজেদের অবস্থাই ভাল নয় তাই স্বাভাবিক ওঁদেরও বাজার খুবই খারাপ।"
তবে এঁরা ছাড়াও আরও একদল আছেন যাঁরা সোনার কুচি নিয়ে ব্যবসা করেন। তাঁরা রাস্তাঘাট নয় বরং দোকানের থেকেই নিয়ে যান মাসের শেষে। তাঁরাও স্বল্প টাকার বিনিময়ে এই কাজ করেন।