Advertisment

'ইনকিলাব জিন্দাবাদ'! নাগরিকত্ব আইন ছিঁড়ে যাদবপুরের সমাবর্তনে শংসাপত্র গ্রহণ করলেন 'গোল্ড মেডেলিস্ট' দেবস্মিতা

রাজ্যপাল ফিরে যেতেই পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সূচনা করেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ইনকিলাব ধ্বনি দিয়েই শংসাপত্র গ্রহণ দেবস্মিতার। ছবি- অরুণিমা কর্মকার

'গো ব্যাক', 'আরএসএসের দালাল' মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশের কালো পতাকা, বিক্ষোভের মুখে পিছু হটল রাজ্যপালের গাড়ি। সমাবর্তনের মঞ্চ তো দূর, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ নম্বর গেট থেকেই ফিরে গেলেন আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এদিকে রাজ্যপাল ফিরে যেতেই পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সূচনা করেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, অনুষ্ঠান শুরু হতেই মঞ্চে উঠে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি পুড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতে 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' ধ্বনি দিয়ে উপ-উপাচার্যের হাত থেকে স্বর্ণপদক নেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের 'গোল্ড মেডেলিস্ট' দেবস্মিতা চৌধুরি।

Advertisment

সোমবার যাদবপুরে বিক্ষোভের মধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে নিশানা করেন জগদীপ ধনকড়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন, "উপাচার্য বলছেন আমি নিরুপায়। আপনি যদি নিরুপায় হন তাহলে পদ ছেড়ে দিন।" সাংবিধানিক প্রধানের এহেন মন্তব্যের পর সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য বলেন, "আচার্য পদটিকে আমি সম্মান করি। আচার্যর পদ সবচেয়ে সম্মানজনক ও সর্বশ্রেষ্ট পদ। মতভেদ হতেই পারে। আচার্য যদি কিছু বলেও থাকে, আমি সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।"

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে যাদবপুরের সমাবর্তন ঘিরে তৈরি হওয়া বিক্ষোভ প্রসঙ্গে সুরঞ্জন দাস বলেন, "গত কাল একটি ঘটনা ঘটে যার ফলে আচার্য কোর্ট মিটিং-এ উপস্থিত থাকতে পারেননি। ১০৪ এ ধারা অনুযায়ী সমস্ত এক্সিকিউটিভদের সঙ্গে কথা বলেই আমরা বার্ষিক সমাবর্তন করছি, স্পেশাল সমাবর্তন করছি না। আমরা নিয়ম মেনেই আজকের প্রোগ্রাম এবং রেজেলিউশন আচার্যকে পাঠিয়ে দিয়েছি। উনি আসতেই পারেন। কিন্তু বিক্ষোভের মধ্যে ঢুকতে পারেনি। আমি, সহ উপাচার্য, রেজিস্টার আমরা বিক্ষোভকারীদের আবেদন করলেও তা কার্যকর হয়নি।"

যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন জগদীপ ধনকড়। তিনি বলেন, "রাজ্যপাল এবং আচার্য হিসেবে আমার জন্য এটা খুব দুঃখজনক একটা দিন। সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্র ভেঙ্গে পড়েছে। শিক্ষার ব্যবস্থার ডিএনএতে পচন ধরে গিয়েছে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের প্রত্যেককে এর দায় নিতে হবে। আমি সংবাদমাধ্যমের কাছে আবেদন জানাচ্ছি এই ঘটনা সকলের কাছে তুলে ধরুন। আগুন নিয়ে খেলছেন। গণতন্ত্রকে চুরমার করেছেন। রাজ্য সরকার এই জায়গায় নিয়ে গেছেন শিক্ষাব্যবস্থাকে। রাজ্যনীতি চলছে শিক্ষাঙ্গনে। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা যে রাজ্য এমন ঘটনা ঘটছে। আর উপাচার্যকে দেখুন, উনি বলছেন আমি নিরুপায়। আপনি যদি নিরুপায় হন তাহলে পদ ছেড়ে দিন। আচার্য হিসেবে আমি নিরুপায় নই। আমি এই সিস্টেমকে সংস্কার করতে চাই। আমি পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। আচার্য ছাড়া সমাবর্তন হয় কি করে?"

এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে রাজ্যপালের গাড়ি প্রবেশ করলে সেখানেই আটকে দেওয়া হয় তাঁকে। গাড়ির মধ্যে থেকেই টুইট করে তিনি জানিয়েছেন , ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতি পড়ুয়াদের সম্মান প্রদান করতে এসেছি, কিন্তু আমাকে ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আমি খুবই বীতশ্রদ্ধ এই ঘটনায়।’ প্রসঙ্গত, আজ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করার কথা রাজ্যপালের। পড়ুয়াদের পাশাপাশি তৃণমূল সমর্থিত শিক্ষাকর্মী সংগঠনের কর্মীরাও পথ অবরুদ্ধ করেন রাজ্যপালের।

আচার্যর অনুপস্থিতিতে উপাচার্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করতে পারবেন, এমনটাই জানিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে গোটা বিষয়টি এখনও আলোচনাধীন এমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ছেলে উজানের জন্য উপস্থিত ছিলেন চিত্র পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি। সময় পেরিয়ে গেলেও সমাবর্তন শুরু না হওয়া নিয়ে কৌশিক গাঙ্গুলী বলেন, "আমার ছেলে আজ এখানে উপহার পাবেন। যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে আমি এখানে বসে থাকব। আমি এখানে বাবা হিসেবে এসেছি, শিল্পী হিসেবে নয়। তাই রাজনৈতিক কোনও মন্তব্য করতে চাই না। ছাত্রছাত্রীদের বলব অহিংস পথেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান হোক। শিক্ষাঙ্গনে বজায় থাকুক ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনতা।"

সোমবার যাদবপুরে অরবিন্দ ভবনের প্রধান ফটকে এসে বিক্ষোভরত ছাত্র ছাত্রীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন রাজ্যপাল। তবে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে রাজ্যপাল সাফ জানিয়ে দেন, “দিনের ১৮ ঘণ্টা আমি পশ্চিমবঙ্গে হালহকিকত নিয়ে ভাবনা চিন্তা করি। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বহির্ভুত কোনো ঘটনা সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহালও নই।" প্রথম থেকেই সমার্বতনে রাজ্যপালকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। ২৪ ডিসেম্বর, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথায় মাথায় রেখে সমাবর্তনের বিশেষ পর্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এতে বেজায় চটে যান জগদীপ ধনখড়। সমাবর্তন বাতিলের ক্ষমতা কার হাতে? উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে রবিবার চিঠি দিয়ে সেই প্রশ্নই তুলেছেন রাজ্যপাল। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মাবলি উল্লেখ করে সমাবর্তনকে ‘বেআইনি’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এদিন বেআইনি শংসাপত্র নিয়ে পড়ুয়াদের পরবর্তীকালে সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যপাল।

Governor Jadavpur University
Advertisment