সারা বছরের অপেক্ষা। পুজোর আগে পসরা সাজিয়ে বিক্রি বাট্টার আসায় দোকান দেন কত মানুষ। কলকাতা শহরে বড় বড় শপিং মল কিংবা দোকানের চাইতে নির্দিষ্ট কিছু বাজারের উল্লেখ সকলেই করে থাকেন। ছোট থেকেই পুজোর কেনাকাটা মানেই সকলের মনে ধারণা থাকে হাতিবাগান থেকে গড়িয়াহাট।
যুগ পেরোলেও এইসব মার্কেটের জনপ্রিয়তা এবং জিনিসপত্রের কালেকশন আজও অনন্য। কথায় বলে, হাতিবাগানে খুঁজলে বাঘের চোখও পাওয়া যায়। সেই সুদূর ইতিহাস থেকে বাংলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাতিবাগান মার্কেট। কেউ কেউ আবার শুধু বলেন হাতিবাগান। পুজোর আগে আপামর বাঙালির একটাই স্লোগান, উঠল বাই তো হাতিবাগান যাই! হেন কিছু নেই যেন এখানে পাওয়া যায় না।
বাংলার ইতিহাসে সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই মার্কেট। অতীতের পাতা ঘাঁটলে জানা যায়, বাংলার নবাবের হাতি থাকত এই স্থানে, সেই থেকেই এর নাম হাতিবাগান। হাতিশাল থেকে হাতিবাগান - ১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই বাজার। শুধু তাই নয়, মজবুতিতেও এই বাজার সেরার সেরা। জাপানি বোমা পড়েছিল এই বাজারে, কিন্তু বিন্দুমাত্র কিছুই ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এমনকি দুবার অগ্নিকাণ্ডেও যে কে সেই রয়ে গেছে এই মার্কেট।
আরও পড়ুন অনলাইন শপিংয়ের দাপটে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ‘হগসাহেবের বাজার’, জানেন এর ইতিহাস?
কিন্তু পুজো মানেই কেনাকাটা, ব্যবসা-লক্ষ্মীলাভ। গত দুবছরে করোনা মহামারীর কারণে পুজোর ব্যবসায় ভাঁটা পড়েছিল অনেকটাই। দীর্ঘ অসুস্থতা কাটিয়ে এবার অনেকটাই রোগমুক্ত শহর তথা বাংলা। কীরকম বিক্রি হচ্ছে এবছর হাতিবাগান মার্কেটে? জামাকাপড়ের ব্যবসায়ী পাপ্পু সাহা বলেন, "ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। গতবছর করোনার মধ্যে তাও বিক্রি বাট্টা হয়েছিল, এবার যেন আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। কোনদিকে যে সবকিছু এগোচ্ছে বোঝা দায়। প্রায় এতবছর ধরে ব্যবসা করছি, এরকম আগে দেখিনি"।
পুজোর ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে হাতিবাগান মার্কেটের সেক্রেটারি শ্রী রঞ্জন রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, "বাজার মোটামুটি রয়েছে। যাঁদের বাড়িতে অনেক লোকজন আছেন বা পুজো হয় তাঁরা কেনাকাটা করছেন। একটা অর্থনৈতিক ডামাডোল বলা যেতে পারে। আর তার সঙ্গে কিছুদিন আগে ব্যবসা ভাল জমেছিল কিন্তু এই বৃষ্টির কারণে অনেকটাই সমস্যা দেখা দিয়েছে। শেষের দিকে, আশা করছি ব্যবসা ভাল দিকে যাবে। এখনও কিছুদিন তো বাকি, দেখা যাক"। তবে অনলাইন শপিংয়ের জেরে খুব একটা পরিবর্তন হাতিবাগান মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আসেনি বলেই তাঁর দাবি।
এদিকে, শাড়ি সবসময় ইন ফ্যাশন! এর জনপ্রিয়তা কিংবা এর প্রতি নারীদের ভালবাসা একেবারেই কমে না। ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের কর্ণধার আর কে সাহা বললেন, "শাড়ির চাহিদা অনেকটা কমেছে। বিশেষ করে দামি শাড়ি। এখন মেয়েরা ইন গোয়িং শাড়ি বেশি পরছে। হ্যান্ডলুম-মটকা, পিওর সিল্ক এগুলো বেশি পরছে। তবে ব্যবসায় একটু মন্দা বলা যেতে পারে। পুজোর যে ক্রেজ সেটা এখনও আমরা পাচ্ছি না"।
চারিদিকে পোশাক-গয়নার সম্ভার। হাতিবাগান মানেই মানুষ যা চান তাই পাবেন। নতুন জিনিসের সমাহার হোক কিংবা খাবার, পুজোর আগে যে মার্কেট জমেনি তার কারণ হিসেবে মানুষের পকেটে টান এবং বৃষ্টিকেই দায়ী করছিলেন ব্যবসায়ীরা।