করোনা ভাইরাসের জেরে গৃহবন্দি হয়েছে শহর, রাজ্যে। বন্ধ হয়েছে দোকানপাট-বাজার। একসময় যে বাজার সরগরম শ্রমিক, আড়তদার, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগমে, আজ সেখানে একরাশ শস্যের মাঝে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছেন গৌরিদেবী। দিনটা আজ একেবারে অন্যরকম সত্তর বছরের গৌরিদেবীর কাছে। আর চার-পাঁচটা দিনের ব্যবস্থা নেই। তবে কী আছে রাজ্যের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজারে? উত্তর একটাই নিস্তব্ধতা!
কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন হয়েছে দেশে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সেই ঘোষণার পর দেশের খুচরো ব্যবসায়ী এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের বন্ধ করতে হয়েছে ব্যবসা। কলকাতার পোস্তার বাজারে যে সেই দীর্ঘনিঃশ্বাসই কানে আসছিল। পোস্তার ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান চন্দন চক্রবর্তী বলেন, "কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে আমরা যেন বাজার খুলি এবং জিনিষপত্রও ঠিকমতো সরবরাহ করা হয়। আমরা এখন পর্যায়ক্রমে দোকান খুলছি। যাতে বেশি ভিড় না হয়।"
যদিও পূর্ব ভারতের বৃহত্তম বাজারের চিত্র অনেকটাই ম্রিয়মাণ। চন্দন চক্রবর্তী বলেন, "এখানে কোনও শ্রমিকেরা নেই। এই বাজারে একচেটিয়া কাজ করতেন প্রায় ৫ হাজার জন। সেখানে এখন কাজ করছেন মাত্র ৩৫০ জন। খুচরো বিক্রেতারা দোকান খুলছেন ঠিকই কিন্তু বিক্রি নেই। লকডাউন যতদিন চলবে ততদিন পণ্য মজুত আছে, কিন্তু পরবর্তীতে কী হবে তা ঠিক করতেই হবে আমাদের।"
গৌরিদেবী পঞ্চাশ বছর ধরে সবজি বিক্রি করছেন, কিন্তু বাজারের এমন অবস্থা দেখেননি কখনও। নিজের মুখের মাস্ক ঠিক করতে করতে বলেন, "এর আগে বন্যা হয়েছে যখন তখনও লোকে প্রয়োজনীয় কিনতে এখানে ভিড় করত। তবে এবার যেন এক অন্য দৃশ্য।" গৌরিদেবী থাকেন কাছের একটি আলুপট্টিতেই। কিন্তু গত দু'সপ্তাহে একটি পয়সাও রোজগার করতে পারেননি তিনি। কুলিরা সবজি-বস্তা নিয়ে যাওয়ার পর সেইসব জায়গা পরিস্কার করেন গৌরিদেবী। কিন্তু বিক্রি নেই যেখানে, সেখানে জমেনি কোনও ময়লা। ভারাক্রান্ত চোখে সে দিকেই তাকিয়ে থাকেন গৌরিদেবী।
তবে শুধু এ রাজ্যে নয়, আসাম, সিকিমের মতো পড়শি রাজ্য থেকেও খুচরো বিক্রেতারা আসত এই বাজারে। পোস্তায় পাইকারি মুদি দোকানের বিক্রেতা শিবু দাস বলেন, “তাঁরা কীভাবে আসবে? আসার তো সব উপায় বন্ধ। যদিও মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হবে না। কিন্তু অনেক খুচরা বিক্রেতা দূর থেকে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তাছাড়া আন্ত:রাজ্য ভ্রমণের অনুমতিও তো নেই।"
Read the full story in English