ফের বাজবে ঢাক, মিলবে ধুনোর গন্ধ, আলোর রোশনাইয়ে উজ্জ্বল হবে এলাকা। প্রায় দু'দশক পর জাঁকজমক করে উমা বন্দনায় মাতবে কলকাতার আলুমুদ্দিন স্ট্রিট এলাকা। কলকাতা ফের সম্প্রীতির নজির গড়বে।
হিন্দুদের দুর্গা পুজো আজ ধর্মীয় রীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে মিলন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলার বহু পুজোতেই দেখা যায় অন্য ধর্মের উদ্যোক্তাদের। আলিমুদ্দিনের পুজোও তার অন্যথা নয়। এখন চলছে মণ্ডপ সজ্জার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বাঁশের গায়ে কাপড়ের উপর পেরেক ঠুকতে ঠুকতে কারিগর তৌসিফ রহমান বলছিলেন, 'কলকাতার অনের পুজোতেই রাম-রহিমকে একসঙ্গে পুজো করতে দেখবেন। সেটাই এই শহরের বৈশিষ্ট।' বর্তমান কঠিন সময়ে কলকাতার এই ছবি অনুপ্রেরণার।
আলুমুদ্দিন স্ট্রিট। সিপিআইএম-র সদর কার্যলয় একানেই। রাজ্যের মানুষের তাই অজানা নয় আলুমুদ্দিন স্ট্রিট নামটা। মূলত মুসলমান মানুষজনের বাস। এলাকা ছেড়ে বহু হিন্দু পরিবার চলে গিয়েছেন। এপিসি রোড়ের উপর এই এলাকায় এখন টিম টিম করে বসবাস হিন্দুদের। ফলে বছর ১৫ আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দুর্গা পুজো। উৎসবে যখন মুখরিত কলকাতার বাকি অংশ, তখন আলিমুদ্দিন এলাকায় যেন ভিন গ্রহের অংশ বলেই মনে হত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় মুসলিম মহিলার কথায়, 'দুর্গা পুজোয় কলকাতার চেহারাটাই বদলে যায়। সবাই আনন্দে মেতে ওঠেন। কিন্তু আমাদের এলাকায় সেরকম কিছু দেখা যেত না। আবার পুজো হচ্ছে, ফলে আলো ঝলমল করবে এলাকা। আমরা খুশি।'
মূলত উৎসবে সামিল হতেই হিন্দু-মুসলিম এক হয়ে দুর্গা পুজোর আয়োজন করেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এলাকায়। অনেকের কাছেই এই পুজো নস্টালজিয়ায় ডুব দেওয়ার হাতছানি। এলাকায় সামাজিক কর্মী বলে পরিচিত তৌসিফের কথায়, 'যাঁরাই বাংলায় বসবাস করেন তাঁরা সকলেই হৃদয় থেকে বাঙালি। আমার বাবা ওয়াসিউর রহমান আগে এই পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। ছেলেবেলায় আমিও পুজোয় আনন্দ করেছি। বহু বছর পর এবার আমরা সকলে পুজোর আয়োজন করছি। আমরা ডান্ডিয়ায় অংশ নিলে কেন মণ্ডপে ঘুরতে যেতে পারব না? দুর্গা পুজো সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে, বাংলা সবসময় সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির পক্ষে।'
পুজোর জন্য এসেছেন দুই পুরোহিত। পুজোয় সহযোগিতা করবেন স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত সেন। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, 'এতদিন পুজোর সময় আমরা শুকনো মুখে বাড়িতে বসে থাকতাম। এখন ফের আমাদের পুজো হচ্ছে। হিন্দু এবং মুসলমান উভয়ই একসঙ্গে প্রতিমা আনতে গিয়েছিলাম। মণ্ডপ সজ্জা থেকে বাকি সব কিছু করছি একসঙ্গে। এবার পুজো আমাদের কাছে অন্যরকম আনন্দের, আমরা খুবই উৎসাহিত।'
খুশি ও সমান উত্তেজনা কাজ করছে জয়ন্তের বন্ধু তথা প্রতিবেশী আব্দুল রহমানেরও। তাঁর কথায়, 'আবার ছেলেবেলায় ফিরব, এই পুজো ঘিরে কত স্মৃতি। ভেবেই ভালো লাগছে। আবারও ঢাকের বোলে নাচতে পারা যাবে। আমাদের মণ্ডপ এলাকার সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আগ্রহের বিষয়, এ এক অন্য ভোলোলাগা।'
আরও পড়ুন- পঞ্চমীর দিনভর হালকা-মাঝারি বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে, আবহাওয়ার উন্নতি কবে?
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন