ইতালি, আমেরিকা ছাড়িয়ে এগোতেই দেখা মিলবে বিশাল বঙ্গবন্ধুর কাটআউট। অর্থাৎ বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক কাটআউট। হ্যাঁ, এটা বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় এই প্যাভেলিয়নে যেতে গেলে পার করতে হবে ইতালি, আমেরিকার প্যাভেলিয়ন। এবার কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। আগে এত বড় বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন দেখা যায়নি।
কেমন করে সেজে উঠেছে সেটি? এখানে পৌঁছতেই দেখা মিলবে মুক্তিযুদ্ধের একাধিক ঐতিহাসিক কাটআউট। সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তো রয়েছেই। সন্ধ্যে নামতেই নিয়ন আলোয় গোটা বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন যেন আন্তরিকতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রবেশপথেই বঙ্গবন্ধুর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের সেই কাটআউট বলে দিচ্ছে এপার–ওপারে কোনও বিভেদ নেই। মাঝের একটা বছর করোনাভাইরাসের জন্য বন্ধ ছিল কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। এবার আবার নিজস্ব মেজাজে তা শুরু হয়েছে। ওপার বাংলা থেকে অনেকেই এসেছেন এপারে বইমেলার স্টলে। আর বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন থেকে বাইরে বেরোলেই মিলবে ভেটকি মাছের ফ্রাই, ফিশ ফিঙ্গারের গন্ধ। কারণ বাংলাদেশে প্যাভেলিয়নের গায়েই করা হয়েছে দিঘা মৎস্য দফতরের স্টল। সবমিলিয়ে ভিড় বাড়ছে বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নে।
সেই সঙ্গে এবারের বইমেলার বাড়তি আকর্ষণ ‘জাগো বাংলা’ স্টল। ‘লক্ষীর ভাণ্ডারের’ আদলে গড়ে তোলা হয়েছে এই স্টল। তবে কী রাজ্যে লক্ষীর ভান্ডারের সাফল্যকে তুলে ধরতে লক্ষীর ভান্ডারের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে 'জাগো বাংলা' স্টল? কী বলছেন স্টলের দায়িত্বে থাকা দোলা সেন। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, ‘এই বছর করোনার মধ্যে বইমেলা আয়োজন করা সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। আর মেলা শুরু হতেই বইপ্রামী মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন বইমেলায়। তবে এবারের বইমেলার বাড়তি আকর্ষণ লক্ষীর ভান্ডারের আদলে গড়ে ওঠা ‘জাগো বাংলা স্টল’। মমতা বন্দোপ্যাধ্যায় সবসময় মানুষের কাছে সেরা ও প্রথম পছন্দ। তাই জাগো বাংলা স্টলে ভিড় স্বভাবতই বেশি। সেই সঙ্গে তিনি জানালেন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের লেখা বইয়ের চাহিদাও সাধারণের মধ্যে আকাশছোঁয়া’। আর সঙ্গে অবশ্যই তুলে ধরলেন ‘লক্ষীর ভান্ডারের’ সাফল্যকে।
এবছর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) এক ডজন বই। বইমেলায় মুখ্যমন্ত্রীর এই বই ঘিরে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বই প্রেমীদের মধ্যে। এর মধ্যে দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে ইংরেজি ভাষায়। বাকি ১০টি বই বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী, লহ প্রণাম মহীয়সী ছড়ায় ছড়ায়, কলম, খেলা হবে, কলকাতার দূর্গোৎসব, কবিতাবিতান, কোভিডের দিনলিপি, দুয়ারে সরকার, শিশুমন, গদ্যসমগ্র এই ১০টি বই বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। বাকি দুটি ইংরেজি বই SHE ও DUARE SARKAR প্রকাশিত হয়েছে।এর মধ্যে অন্যধরণের বই হচ্ছে 'কোভিডের দিনলিপি'।আর একটি অন্য ধরণের বই হচ্ছে, "লহ প্রণাম মহীয়সী ছড়ায় ছড়ায়"। এই বইয়ে বাংলার ৫০ জন মহীয়সী'কে নিয়ে কবিতার সংকলন। ভগিনী নিবেদিতা, মাতঙ্গিনী হাজরা, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, আরতি সাহা, সুচিত্রা ভট্টাচার্যর কথা। এই বইয়ে উল্লেখ আছে সদ্য প্রয়াত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কাহিনীও। কলকাতার দূর্গোৎসব বই আসলে কলকাতার পুজো নিয়ে ইতিহাস। সর্বজনীন দূর্গোৎসবের বিশ্বজনীন হয়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে। তাই ‘লক্ষীর ভান্ডারের’ আদতে গড়ে ওঠা জাগো বাংলা স্টল দেখতে আপনাকে পৌঁছে যেতেই হবেই কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়।
অতিমারির ধাক্কা সামলে শুরু হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। ইতিমধ্যেই সল্টলেক করুণাময়ী সেন্ট্রাল পার্কে ৪৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার প্রাঙ্গণ সেজে উঠছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত চলবে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে সন্ধে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলাপ্রাঙ্গণ। সমস্ত কোভিডবিধি মেনেই মেলা আয়োজিত হবে বলেই জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়ে গিল্ডের তরফে জানানো হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে বইমেলার আয়োজন করা খুবই চ্যালেঞ্জের। মাস্ক ছাড়া কোনওভাবেই প্রবেশ করা যাবে না মেলা প্রাঙ্গণে। বাস্তবে হয়েছেও তাই।
এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের ৪২ জন প্রকাশক। থাকছে ৮৫টি বাংলাদেশি স্টল। এছাড়াও থাকবে ২০০টি লিটল ম্যাগাজিনের স্টল। মেলার মোট স্টলের সংখ্যা ৬০০। বইমেলায় থাকছে মোট ৯টি গেট। বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নিচ্ছেন ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইতালি, ইরান, স্পেন, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো এবং আরও বেশকিছু লাতিন আমেরিকান দেশের প্রকাশকরা। পাশপাশি রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রকাশকরাও নিয়েছেন মেলায়। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ৬ মার্চ উদযাপন করা হবে শিশুদিবস। ১১ এবং ১২ মার্চ উদযাপিত হবে কলকাতা লিটারেচর ফেস্টিভ্যাল।