Advertisment

"বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফাইকর্মীর হাত থেকে সার্টিফিকেট নেব তবু রাজ্যপালের হাত থেকে নয়"

উপাচার্য সহ বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকরাও মঞ্চে উঠে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তবে সবার নজর পড়ল, উপাচার্যর পাশের ফাঁকা আসনটিতে। নামের ফলকটি কে যেন উল্টে রেখেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

সমাবর্তন মঞ্চের আসনে ক্রমানুসারে সাজানো রয়েছে প্রত্যেক পদাধিকারির নামফলক। উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্টার সব নাম ফলক গুলো সঠিক অবস্থায় থাকলেও উল্টানো ছিল আচার্যের ফলকটি। এই একটি দৃশ্যই মঙ্গলবারের যাদবপুরকে বর্ণনা করার জন্য যথেষ্ট।

Advertisment

এদিন রাজ্যপালকে বয়কটের, কালো পতাকা দেখানোর ঘণ্টা দেড়েকের টানটান উত্তেজনা শিথিল হতেই ওপেন এয়ার থিয়েটারে জোরালো হল মাইকের শব্দ। হঠাৎই হাসি ও স্বস্থির চাহনিতে মিলিয়ে যেতে থাকল এতক্ষনের ক্রোধ ও হুঁশিয়ারির আভা। ইতিমধ্যে সমাবর্তনের বিশেষ পোশাক পরে ভিড় জমাতে শুরু করলেন ছাত্র ছাত্রীরাও। উপাচার্য সহ বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকরাও মঞ্চে উঠে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তবে সবার নজর পড়ল, উপাচার্যর পাশের ফাঁকা আসনটিতে। নামের ফলকটি কে যেন উল্টে রেখেছে। শেষ পর্যন্ত, আচার্যের নামের এই উল্টানো ফলক এবং ফাঁকা আসন নিয়েই শুরু হল সমাবর্তন। আর বিশেষ ভাবে চোখে পড়ল, রাজ্যপালকে আটকে দিতে পারায় একটা বিশেষ বড় অংশের ছাত্র ছাত্রীর সাফল্যের হাসি।

শুরু হল সমাবর্তন পর্ব। এক এক করে নাম ডাকা শুরু হল। লাইন দিয়ে মঞ্চে উঠে শংসাপত্র গ্রহণ করতে শুরু করলেন ছাত্র ছাত্রীরা। অন্যদিকে গ্যালারিতে তখন সমাবর্তনের বিশেষ পোশাক পরে সেলফি, গ্রুপফি তোলার হিড়িক। সব মিলিয়ে হাসি আড্ডার মেজাজে মেতে থাকল ছাত্র ছাত্রীরা।এ দৃশ্য দেখে মনেই এল না, রুদ্ধশ্বাসে কাটিয়ে আসা বিগত দেড় ঘণ্টার কথা। হঠাৎ সবার নজর গেল সমাবর্তন মঞ্চের দিকে। এক ছাত্র ডিগ্রি ও শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করছেন। কিন্তু কেন? রাজ্যপাল তো নেই! সেই পড়ুয়া জানান, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপর পুলিশি নির্যাতনের বিরোধিতা করতেই তাঁর এই পদক্ষেপ। আরও দুই ছাত্রও এই সিদ্ধান্তের শরিক হন। এরপর, নিজের গতিতেই এগোতে থাকে সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এরপর ফের সকলের চোখ আটকায় যখন আন্তর্জতিক সম্পর্ক বিভাগের স্বর্নপদক প্রাপ্ত দেবস্মিতা চৌধুরি মঞ্চে উঠে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ছিঁড়ে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত শূন্যে তুলে 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' স্লোগান দেন।

আরও পড়ুন: যাদবপুর থেকে কালো পতাকা দেখে ফিরে এসে উপাচার্যদের বৈঠক ডাকলেন ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল

এদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন এয়ার থিয়েটারের বাইরে তখনও জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই সমর্থক দেবরাজ দেবনাথ বলেন, "এটা স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। ওঁকে (রাজ্যপাল) ঢুকতে বাধা দিতে চাইনি আমরা। বরং চেয়েছিলাম আচার্য নিজের অধিকারে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করবেন। কিন্তু আমরা কালো পতাকা দেখাব ও কালো ব্যাজ পরে থাকব। যাঁরা আচার্য তথা রাজ্যপালের হাত থেকে ডিগ্রি নিতে চাইবেন না, তাঁরা নেবেন না। কিন্তু পাঁচ নম্বর গেটেই ওঁকে আটকে দেওয়া হয়। মূলত, তৃণমূল সংগঠনের পড়ুয়ারাই এই কাজ করেছেন"। তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের সদস্য সঞ্জীব বলেন, "সোমবার সমস্ত সংগঠনের পড়ুয়াদের নিয়ে যে বৈঠক হয়, তাতে রাজ্যপালকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল পড়ুয়ারা নয়, প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মীরা এগিয়ে যায় রাজ্যপালের গাড়ি আটকাতে। এরপর যোগ দিতে থাকেন বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারাও"।

বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে রাজ্যপাল তথা আচার্যের উপর বিদ্বেষ যে কী চরম মাত্রায় পৌঁছেছে তা বোঝা যায় মেবার হোসেনের কথায়। স্বর্ণপদক প্রাপ্ত এই ছাত্র বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফাইকর্মীর হাত থেকে শংসাপত্র নেব তবু রাজ্যপালের হাত থেকে নয়"। রাজ্যপালের এদিন উপস্থিত থাকা আইনসঙ্গত, তাতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন না আপনি? উত্তরে মেবার সাফ জানিয়ে দেন "না, কারণ আচার্য হিসেবে তাঁর যা দায়িত্ব, তা তিনি পালন করতে অক্ষম। তিনি যে গেরুয়া শিবিরের দালাল, তা স্পষ্ট। উনি যতই নিরপেক্ষ বলে নিজের প্রচার করুন, তা যে কতটা সত্য তা সকলের জানা। সোমবার আমাদের প্রশ্নের যথাযথ জবাব না দিয়ে বারবার রাজভবনে গিয়ে চর্চা করার কথা বলছেন উনি। এখানে নিশ্চই কোনো পরিকল্পনা আছে ওঁর। তিনি আরও বলেন, "রাজ্যপালকে জামিয়া মিলিয়া ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি এই বিষয়গুলো নিয়ে ওয়াকিবহাল নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে এই বিষয়গুলিতে যদি উনি ধর্তব্যের মধ্যেই না ধরেন, তাহলে ওঁর হাত থেকে আমরা ডিগ্রি নেব না"। সমাজবিদ্যায় গোল্ড মেডালিস্ট হিরন্ময় মালাকার বলেন, "কোনো আইন তো ভঙ্গ হয়নি। বিশেষ সমাবর্তন থাকলে আচার্যর আমন্ত্রণ থাকে। সেক্ষেত্রে এ বছর বিশেষ সমাবর্তন হচ্ছে না। আচার্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের হিংসার চোখে দেখেছেন, বিরোধী পক্ষের চোখে দেখেছেন। যা একজন আচার্যর থেকে কাম্য নয়"।

Jadavpur University
Advertisment