Advertisment

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন রাজ্যপাল

আজ বিনা আমন্ত্রণে কোর্ট মিটিংএ অংশগ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে গিয়েছেন আচার্য জগদীপ ধনখড়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।

রুদ্ধশ্বাস দু'টি ঘণ্টার সাক্ষী থাকল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার ৪৫ মিনিট ঠায় বসে থেকে কোনোও রকম বৈঠক না করে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে এলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনখড়। সপ্তাহের প্রথম দিন অরবিন্দ ভবনের প্রধান ফটকে এসে বিক্ষোভরত ছাত্র ছাত্রীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন রাজ্যপাল। এদিন ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের আগেই তিনি নিজের পদাধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, 'আমি রাজ্যপাল, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দেব আমি'।

Advertisment

তিনি আরও বলেন, 'যেকোনো পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পড়ুয়ারা আমার কাছে সময় চেয়েছে, আমি সময় দিয়েছি। কিন্তু আমার কিছু বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে আমি কথা বলতে রাজি'। ছাত্র-ছাত্রীরা এদিন প্রথমেই এনআরসি ও সিএএ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং এতে রাজ্যপালের কী ভুমিকা তা জানতে চান। রাজ্যপাল জানান, এনআরসি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমি পড়ুয়াদের রাজভবনে আমন্ত্রণ করছি। আমি এই বিষয়ে চর্চার জন্য তৈরি।

উল্লেখ্য, ১৯ সেপ্টেম্বর বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল যাদবপুর। সেদিন রাজ্যপালের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে জগদীপ ধনখড় বলেন, 'তিনবার করে গোটা ঘটনা বিশদে বিধানসভার কাছে লিখিতভাবে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনোরকম সদুত্তর পাইনি। আগেও বলেছি এখনও বলছি, কোনো হিংসাত্মক ঘটনার পক্ষে আমি নই'।

তবে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে রাজ্যপাল সাফ জানিয়ে দেন, "দিনের ১৮ ঘণ্টা আমি পশ্চিমবঙ্গে হালহকিকত নিয়ে ভাবনা চিন্তা করি। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বহির্ভুত কোনো ঘটনা সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহালও নই। ছাত্র-ছাত্রীদের কথা আমি ভাবি। যদি তোমরা চাও মাঝ রাতেও আমার সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারো। আমি নিরপেক্ষভাবে আমার কাজ করে থাকি।"

রাজ্যপালকে নিশানা করে এক পড়ুয়া প্রশ্ন করেন, পশ্চিমবাংলার কোনো পড়ুয়া এনআরসি নিয়ে রাজভবনে গেলে আপনি কোন পক্ষ নেবেন? জগদীপ ধনকড় জানান, "সরকারের বা পড়ুয়াদের পক্ষ হয়ে না, সবদিক বিবেচনা করে, তবেই মতামত জানাব"।
তিনি আরও বলেন, 'আমার সঙ্গে চর্চা করতে চাইলে আমি প্রস্তুত। যা আমার অধিকার ও ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে আমি তা করব। যা নেই সেদিকের কোনো দায়িত্ব নিতে পারব না। যে কোনো পরিস্থিতিতে খোলামেলা আলোচনায় রাজি রয়েছি। আমি চাই, এনআরসি ও সিএএ নিয়ে পড়ুয়ারা প্রতিনিধিত্ব করুক। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারিকরণের বিরুদ্ধে'।

উল্লেখ্য, সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পড়ুয়ারা। জগদীপ ধনখড়কে ঘিরে ধরে কালো পতাকা দেখায় বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্যকে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে দাবি করেন সমবেত ছাত্র-ছাত্রীরা। বিনা আমন্ত্রণে কোর্ট মিটিংএ অংশগ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছন আচার্য জগদীপ ধনখড়। সমার্বতনে রাজ্যপালকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় যাদবপুরের একাংশের ছাত্র-ছাত্রীরা। এরপর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান রাজ্যপাল। এই ঘটনার পর আজই প্রথম  যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন রাজ্যপাল। অরবিন্দ ভবনের সামনে শুরু হয় বিক্ষোভ। গো-ব্যাক স্লোগান শুনতে পাওয়া যায় বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের মুখ থেকে। বিক্ষোভকারীদের এক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল। জানা যাচ্ছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্র সংগঠন একজোট হয়ে এদিন বিক্ষোভ দেখায়।

প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তথা এসএফআই ছাত্র সংগঠনের সদস্য দেবরাজ দেবনাথ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, “গত কয়েকমাসে রাজ্যপালের বিভিন্ন কার্যক্রমে এটা স্পষ্ট যে তিনি লাগাতার বিজেপি- আরএসএস-এর দালালি করে ফ্যাসিবাদের একনিষ্ঠ প্রচারকের ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কাছে আমাদের আহ্বান যে একসঙ্গে আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাব ও জগদীশ ধনকড়কে বয়কট করব। এদিন কালো পতাকা ও কালো ব্যাজ পরে আমরা আওয়াজ তুলব সিএএ, এনআরসি, এনপিআর-এর বিরুদ্ধে, আওয়াজ তুলব দেশজুড়ে চলা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং জগদীশ ধনকড়দের বিরুদ্ধে”। ২৪ ডিসেম্বর, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথায় মাথায় রেখে সমাবর্তনের বিশেষ পর্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এতে বেজায়  চটে যান জগদীপ ধনখড়। সমাবর্তন বাতিলের ক্ষমতা কার হাতে? উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে রবিবার চিঠি দিয়ে সেই প্রশ্নই তুলেছেন রাজ্যপাল। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মাবলি উল্লেখ করে সমাবর্তনকে 'বেআইনি' বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এদিন বেআইনি শংসাপত্র নিয়ে পড়ুয়াদের পরবর্তীকালে সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যপাল। এরপরই সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান জগদীপ ধনখড়।

Jadavpur University
Advertisment