'ঠান্ডা লড়াই' চলছে যাদবপুর ক্যাম্পাসে! এমনটাই জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। প্রচারে বাঁধা, পোস্টার ছিড়ে ফেলার মত টুকিটাকি ঘটনা ঘটেই চলছে বিগত দিন সাতেক ধরে। যার অভিযোগ পত্র পৌঁছে গিয়েছে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের টেবিলে। এবছরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ছবি যে সম্পূর্ণ আলাদা, তা বলার বাকি রাখে না। ছাত্র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন। প্রতিটি দলের প্রার্থীদের চোখ মুখে এখন টেনশন, উত্তেজনা ধরে রাখতে চোয়াল শক্ত।
এই প্রথমবার যাদবপুরের নির্বাচনের আগে উপাচার্যের তরফে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভোট শান্তিপূর্ণ হয়ে আসছে। তাহলে, কেন উপাচার্য এমন আবেদন করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছে? উপাচার্য সুরঞ্জন দাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "তিন বছর বাদে হচ্ছে ছাত্র ভোট, তাই এবছর একটু অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। এবিভিপি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। সে বিষয়েও আমরা গতকাল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছি। এখনও পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ আছে"।
এবছর, প্রথম যাদবপুরের ছাত্র নির্বাচনে লড়ছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই কপালে ভাঁজ পড়েছে বাকি দলের সমর্থকদের। সবার মুখে একটাই কথা এবারের নির্বাচন নিয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কোন দিকে দাড়িপাল্লা ভাড়ি তা নিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য।
আরও পড়ুন:যাদবপুরের পড়ুয়া মানেই বামপন্থী নয়, ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র নেই, আশা করি জিতব: এবিভিপি প্রার্থী শুভদীপ
লড়াইয়ের ময়দানে এসএফআই, আইসা, ডিএসও ডিএসএ, আরএসএফ, টিএমসিপি-র সঙ্গে রয়েছে নবাগত এবিভিপি। কিন্তু, লাল রঙা যাদবপুরে কি গেরুয়া রঙ আঁচড় কাটতে পারবে? ক্যাম্পাসে বাবুল সুপ্রিয়র আসা নিয়ে যে বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। ইউনিয়ন রুম ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল এবিভিপির বিরুদ্ধে। এই আবহে বরাবরের বাম প্রভাবিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা করেছেন এবিভিপি সমর্থকরা।
এবিভিপির অন্যতম প্রার্থী শুভদীপ কর্মকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেছেন,'আমাদের প্রচার করতে বাধা দিয়েছে বাম সংগঠন। বার বার বিদ্যার্থী পরিষদের পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে। সৃষ্টি করা হচ্ছে অশান্তি। আমাদের কাছে অডিও রেকর্ড রয়েছে। যেখানে স্পষ্ট যে বাম সংগঠন আমাদের প্রচার নিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সে বিষয়ে আমরা উপাচার্যকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।'
অন্যদিকে ফ্যাস সমর্থক হিমন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছে,'এবিভিপি প্রচারে জন্য ক্যাম্পাসে দেড় কোটি টাকা খরচ করেছে। এমন অনেক পড়ুয়া আছে যারা আগে নিজেদের বাম সমর্থক বলে দাবি করত তাঁরা এবিভিপির প্রচারে কাজ করছে। তাই এবছর কে জিতবে কে হারবে তা বোঝা মুশকিল'। তবে দেড় কোটি খরচের অভিযোগ অস্বীকার করেছে চেয়ারপার্সন পদে এবিভিপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শামিল ফিল্ম স্টাডিজ-এর ছাত্র শুভদীপ কর্মকার।
এদিকে এসএফআইয়ের সমর্থক ও প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে সেই চেনা হাবভাব। তাদের কথায় স্পষ্ট তারাই জিততে পারে এবছর। কিন্তু, টেনশনের আঁচ রয়ে গিয়েছে। এবিভিপি প্রার্থী শুভদীপ স্বীকার করেছেন, "যাদবপুরে বাম সংগঠনের জোর বেশি। কিন্তু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মুষ্টিমেয় কিছু পড়ুয়া রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের বাদ দিলে বাকিরা যে এখানে সবাই বামপন্থী, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তাই আমি ইতিবাচক"।