একই অঙ্গে ভিন্ন রূপে, কালী নামেই আছে মোক্ষ। তা সে যেমনই হোক। শহর থেকে গ্রাম নানান জায়গায় রয়েছে মায়ের মহিমার অপার কাহিনী। শুধু বিখ্যাত কিছু মন্দির নয়, বেশ কিছু বাড়ির পুজোতে কিন্তু এমন বেশ কিছু ইতিহাসের ঝলক মেলে। ঠিক এরকমই একটি বাড়ি কলেজ স্ট্রিটের ভোলানাথ চাটুজ্জের চট্টোপাধ্যায় বাড়ি।
Advertisment
মায়ের বিগ্রহের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু অভিনবত্ব। এরকম ভাবের নিদর্শন সহজে মেলে না। টানা চোখ, ছোট্ট মাতৃ মূর্তি, সঙ্গে জোরালো চালার আবহ, তিনি সত্যিই মৃন্ময়ী। তবে বৈশিষ্ট রয়েছে দেবীর চার হস্তের মধ্যেই। এক হাতে খড়গ সঙ্গেই মুণ্ডমালা, অন্যহাতে ত্রিশূল ন্যায় বর্শা, আরেক হাত আশীর্বাদ স্বরূপ, অন্যটি রয়েছে মুখের কাছে। এই প্রসঙ্গেই পরিবারের সদস্য সৌরভ চট্টোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "এই হাত নির্দেশ করে অসুর নিধনের পর রক্ত পানের বৈশিষ্ট্যকে। পদ্মের আসনে দেবী মহাদেবের উপর পঞ্চমুণ্ডের আসনে অধিষ্ঠিতা। দুইপাশে এবং দুইকাধে সমহিমায় রয়েছেন ডাকিনী এবং যোগিনী।"
ইতিহাস প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, "এটি বাড়ির প্রতিষ্ঠিত কালী মূর্তি। যথারীতি মায়ের বিসর্জন হয় না, শুধুই ঘট ভাসান দেওয়া হয়। নিত্যপুজো দিব্য চলে।" ইতিহাস বলছে, বাড়ির এবং এলাকার পরিচিত মুখ শ্রী ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় এই মাতৃমুর্তির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি স্বয়ং রাজ তিলক নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তন্ত্রসাধনা এবং শক্তির আরাধনায় ছিল গভীর সংযোগ। বছর দশেক তার হদিশ ছিল না। বাড়ি থেকেই উধাও হয়েছিলেন। ফিরে আসেন বাঁশের উপর মায়ের মুখ নির্মিত কাঠামো নিয়ে। এসেই কারওর সঙ্গে কোনও কথা না বলে, প্রায় এক সপ্তাহ মতো সময় ব্যয় করেই নিজে হাতে সাজিয়ে তোলেন মা-কে। মনের ইচ্ছে অনুযায়ী, তাঁর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে আদিশক্তির আরাধনা শুরু করেন। যদিও পরবর্তীতে অষ্টধাতুর কালীমূর্তি স্থাপন করে বর্তমানে পুজো করা হয়।
বাড়িতে শাক্ত মন্ত্রেই পুজো হয়। নেই কোনওরকম বলিপ্রথার চল। জানা যায়, ঘোরতর প্রাণী হত্যার বিরোধী ছিলেন ভোলানাথবাবু। তাঁর ইচ্ছে অনুসারে মায়ের মূর্তি ঠিক তখন যেমন ছিল, আজও কিন্তু একেবারেই বদল আনেননি পরিবারের সদস্যরা। তিনি নাকি মানস পুজোও করতেন। সকালের চা থেকে রাতের খাবার নিজে যা আহার করতেন মায়ের উদ্দেশ্যেও হাজির থাকত তাই। রীতি মেনেই দীপান্বিতা অমাবস্যা এবং জৈষ্ঠ্য মাসের ফলাহারিণী কালীপুজোর তিথিতে বিশেষ করে শক্তি আরাধনায় রত হন পরিবারের সকলে। বাড়ি জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন