Advertisment

পুরসভায় অপসারিত খলিল আহমেদ, এলেন নতুন সচিব, কিন্তু কবে ছন্দে ফিরবে কলকাতা?

নবান্নের তরফে সরকারিভাবে কিছু বলা না হলেও আমফান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আহমেদের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় প্রশাসন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kmc secretary removed

কলকাতার লেক মার্কেট

আমফান বিদায় নেওয়ার পর আজ তৃতীয় দিনেও কার্যত বেহাল শহর কলকাতা। রাস্তায় পড়ে থাকা অসংখ্য গাছ সরানো না হলে মেরামত করা যাচ্ছে না বিদ্যুতের খুঁটি বা টেলিফোনের লাইন। পুরসভার ভূমিকা নিয়ে উঠেছে অজস্র প্রশ্ন। এই আবহেই অপসারিত হলেন কলকাতা পুরসভার সচিব খলিল আহমেদ। তাঁর জায়গায় বহাল হলেন বিনোদ কুমার, যিনি সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। আজ, অর্থাৎ শনিবারই তাঁর দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা। তবে পুর সচিবের পদ থেকে সরলেও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব হিসেবে থাকছেন আহমেদ।

Advertisment

নবান্নের তরফে সরকারিভাবে কিছু বলা না হলেও আমফান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আহমেদের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় প্রশাসন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। নতুন পুর সচিব বিনোদ কুমারের সামনে আপাতত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, যথাসম্ভব দ্রুত কলকাতাকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানো। শুক্রবার এই কাজের জন্য এক সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছিলেন মেয়র তথা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম।

অবশ্য কলকাতা কবে যে ছন্দে ফিরবে, তা এখনও বোঝা দুষ্কর। ঘূর্ণিঝড়ের প্রায় ৬০ ঘণ্টা পরেও এখনও গাছ পড়ে অবরুদ্ধ শহরের বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, বিদ্যুৎ এবং জল নেই অসংখ্য এলাকায়। অহোরাত্র কাজ করেও এখনও পরিস্থিতি বাগে আনতে পরেন নি পুরসভা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা।

শহরের অনেকাংশেই এখনও চলছে বাসিন্দাদের বিক্ষোভ। যাদবপুর এলাকায় বিদ্যুৎ এবং জলের দাবিতে পথে নামেন এলাকাবাসীরা। পুরসভা আধিকারিকদের বক্তব্য, বহু এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ থাকায় জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সুতরাং জল সরবরাহ চালু থাকলেও পাম্প করে তা তোলা যাচ্ছে না। অবশ্য মেয়র জানিয়েছেন, আগামী দু'দিনের মধ্যে পুনর্বহাল হবে বিদ্যুৎ পরিষেবা।

Advertisment

তাঁর কথায়, "আমরা সিইএসসি-কে অনুরোধ করেছি আজ বা কালের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করতে। কলকাতার অনেক জায়গাতেই পরিষেবা প্রদান করে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ। আমি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা জানিয়েছেন আজকের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে পরিষেবা। তবে রাস্তার আলো এখনই চালু করব না আমরা, যেহেতু বহু এলাকায় ইলেকট্রিকের খুঁটি এবং তার নষ্ট হয়ে গেছে।"

"ল্যাম্পপোস্ট সরিয়ে রাস্তা সাফ করার কাজ চলছে। সিইএসসি-র কাছ থেকে ছাড়পত্র পেলে রাস্তার আলো ধাপে ধাপে ঠিক করা হবে। বেহালা, টালিগঞ্জ, যাদবপুরে মাথার ওপর দিয়ে যায় বিদ্যুতের তার, সেখানে সিইএসসি বলছে বিদ্যুৎ চালু করতে আরও দুদিন লাগবে। আমি লাগাতার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।"

শুক্রবার এবং শনিবার জুড়ে বিক্ষোভ দেখান অজয়নগর, বিজয়গড়, শকুন্তলা পার্ক, পঞ্চসায়র, আনন্দপুর, বাঘাযতীন, টালিগঞ্জ, বেহালা, এবং এয়ারপোর্ট এলাকার বাসিন্দারা। দমদম এবং হাওড়ার বালি ও বেলুড় থেকেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছে।

"এভাবে কী করে থাকব আমরা? গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে কারেন্ট নেই। তার ওপর জল নেই। মুখ-হাত ধোয়ার জল পর্যন্ত নেই," বলেন টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের এক বাসিন্দা। সঙ্গে এও যোগ করেন যে বিদ্যুৎ না থাকার ফলে চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না মোবাইল ফোনেও।

অজয়নগরে আধঘণ্টা ধরে ইস্টার্ন বাইপাস অবরোধ করেন বাসিন্দারা। এক বাসিন্দার বক্তব্য, "ঝড়ের দুদিন পরেও কেন কানেকশন চালু করতে পারছে না সিইএসসি? কী করছে ওরা? বিদ্যুৎ না থাকার ফলে জলও নেই।"

যাদবপুর এবং বেহালার জেমস লং সরণি থেকেও মিলেছে রাস্তা অবরোধের খবর। এক বিক্ষোভকারীর কথায়, "আমরা পুলিশের সাহায্য চাইতে যাই। পুরসভা থেকে কয়েকজন এসেছিলেন, কিন্তু কাজের মাঝখানেই ফের চলে যান।"

দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ অঞ্চলের অভিজাত এলাকা ম্যান্ডেভিল গার্ডেনসের আবাসনগুলিতে ঘূর্ণিঝড়ের দু'দিন পরেও জল জমে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাসিন্দারা। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে শান্ত করেন তাঁদের। "পাম্প নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আমি কেএমসি-কে বলেছি পাম্পিং স্টেশনগুলো ফের চালু করতে," বলেন সুব্রতবাবু।

অন্যদিকে ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছগুলি কাটার কাজ চললেও যানবাহন চলাচল ব্যাহত রয়েছে শহরের বহু অংশে, যেখানে এখনও গাছ কাটার কাজ শুরু হয় নি। ঝড়ের পর তৃতীয় দিনেও আলিপুর, নিউ আলিপুর, ময়দান, বালিগঞ্জ, গলফ গ্রিন, ভবানীপুর, টালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, সল্ট লেক, এবং উত্তর কলকাতার কিছু অংশে এখনও রাস্তা জুড়ে রয়েছে বিশাল বিশাল গাছ।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment