স্ট্রিট ফুড! নামটা শুনলেই যেন জিভে জল চলে আসে। বিকেলের আড্ডা হোক অথবা বৃষ্টি ভেজা কলকাতার ব্যস্ততম রাজপথ। রাস্তার দু’দিকে তাকালেই জিভে জল আনা একাধিক স্ট্রিট ফুডের ডালা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। মোমো থেকে শুরু করে চিকেন রোল, ফিস ফ্রাই, ফিস কবিরাজি, লাচ্ছা পরোটার সঙ্গে চিলি চিকেন, বার্গার, কী নেই তালিকায়। এর সঙ্গে সকলের প্রিয় ফুচকা, ঘুগনি, ভেলপুরি তো রয়েছেই। থাইল্যান্ডের ফুকেট এবং নিউইয়র্কের মতো এবার কলকাতার রাস্তাতেও ‘ফুড স্ট্রিট’ গড়ে তোলার ভাবনা কলকাতা পুরসভার।
প্রাথমিক ভাবে তিনটি ‘ফুড স্ট্রিট’গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। তবে আগামী দিনে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে সেটা নির্ভর করছে ক্রেতাদের চাহিদার ওপর। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (কেএমসি) রাজ্যের পর্যটনকে বাড়ানোর সেই সঙ্গে শহর কলকাতার মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে শহরের তিনটি ভিন্ন অংশে তিনটি ফুড স্ট্রিট স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতায় এই তিনটি ফুড স্ট্রিট গড়ে তোলা হবে। চতুর্থ ফুড স্ট্রিট কোথায় উঠবে তা এখনও ঠিক হয়নি। কলকাতা পুরসভার তরফে এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের কমিশনার, বিনোদ কুমার, বিশেষ কমিশনার, সোমেনাথ দে এবং সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে ধর্মতলা, প্রিন্সেপ ঘাট, হাতিবাগান গড়িয়াহাটে ফুড স্ট্রিট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাইপাসের ধারেও বেশ কিছু জায়গা দেখার কাজ চলছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট চারটি ফুড স্ট্রিট স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত তিনটে ফুড স্ট্রিটের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ফুড স্ট্রিটের জন্য এক কোটি টাকা খরচ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতিটি ‘ফুড স্ট্রিট’ নান্দনিকভাবে সাজানো হবে। খাবারের স্টল, সবুজ ঘেরা পরিবেশ, আধুনিক টয়লেট, পানীয় জল, স্যানিটেশন, সঠিক আলোর ব্যবস্থা, বসার ব্যবস্থা ইত্যাদি সব কিছুই থাকবে ফুড স্ট্রিটে। প্রতিটি ‘ফুড স্ট্রিটে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখবে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর।
শুধু কলকাতার মানুষ নয়। দেশের ও বিদেশের পর্যটকদের কাছে ‘স্বাস্থ্যসম্মত’ খাবার পরিবেশনের লক্ষ্যেই গড়ে উঠবে ‘ফুড স্ট্রিট’ গুলি। দেশের মধ্যে কলকাতা, লখনউ, দিল্লি, মুম্বাই, অমৃতসর, হায়দ্রাবাদ, জয়পুর এবং গ্যাংটক স্ট্রিট ফুডের জন্য বিখ্যাত।
২০১৮ সালে কলকাতায় পাঁচটি ফুড জোন স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল রাজ্য সরকারের। সেইজনু পাঁচটি অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়। তার মধ্যে ছিল ধর্মতলা, ডালহৌসি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আশেপাশের এলাকা, জোড়াসাঁকো এবং মিলেনিয়াম পার্ক। রাজ্য সরকার এই সকল এলাকার বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যকর উপায়ে তাদের খাবার তৈরি করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
কলকাতার দুর্গা পূজো ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে ইতিমধ্যেই। গত বছর দুর্গা পূজা কার্নিভালে প্রচুর সংখ্যক বিদেশী পর্যটক অংশ নিয়েছিল। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বাইরে থেকেও বহু মানুষ আসেন কলকাতার রাস্তার খাবার চেখে দেখতে। এবার সেই ভাবনা থেকেই বিদেশের মতো এবার কলকাতাতেও ফুড স্ট্রিট করবে পুরসভা।