Advertisment

জাগুয়ার দুর্ঘটনা কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়, এবার গ্রেফতার 'আসল' অপরাধী!

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, যিনি গ্রেফতার হয়েছেন, তিনি আদৌ ওই দুর্ঘটনা ঘটান নি। দোষী তাঁর ভাই, যে দুর্ঘটনার পরেই দুবাইয়ে পালিয়ে যায়। আজ দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকেও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
arsalan owner son kolkata

পুলিশি হেফাজতে আরসালান পারভেজ। এক্সপ্রেস ফোটো

চাঞ্চল্যকর নয়া মোড় নিল কলকাতার প্রাণঘাতী জাগুয়ার দুর্ঘটনা কাণ্ড, যে দুর্ঘটনায় গত শুক্রবার গভীর রাতে নিহত হন দুই বাংলাদেশী নাগরিক, এবং যে কাণ্ডের জেরে গ্রেফতার হয়েছিলেন কলকাতার আরসালান রেস্তরাঁ গোষ্ঠীর মালিকের পুত্র আরসালান পারভেজ। আজ, বুধবার, কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, যিনি গ্রেফতার হয়েছেন, তিনি আদৌ ওই দুর্ঘটনা ঘটান নি। দোষী তাঁর ভাই, যে দুর্ঘটনার পরেই দুবাইয়ে পালিয়ে যায়। আজ দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকেও।

Advertisment

কীভাবে ঘটল এই তাজ্জব ঘটনা? পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে শেক্সপিয়র সরণি-লাউডন স্ট্রিটের সংযোগস্থলে ওই দুর্ঘটনার পর পুলিশ মোটর ভেহিকল অ্যাক্টের ১৩৩ ধারায় নোটিশ পাঠায় জাগুয়ার গাড়ির মালিককে, অর্থাৎ আরসালান গোষ্ঠীকে। সেইমতো আরসালান পারভেজকে জাগুয়ার গাড়ির চালক হিসেবে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁর পরিবার। উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পরেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছিল জাগুয়ারের চালক। তবে ঠিক কী কারণে রাঘিবের বদলে আরসালানকে পুলিশের হেফাজতে তুলে দিলেন তাঁর পরিবার, তা এখনও জানা যায় নি।

আরও পড়ুন: ন’মাসে ৪৩ বার ট্রাফিক আইন ভঙ্গ আরসালান পারভেজের, তদন্তে নয়া তথ্য

কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনার সময় সংঘর্ষের তীব্রতায় খুলে গিয়েছিল জাগুয়ার গাড়িটির স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এয়ার ব্যাগ, যা দুর্ঘটনা ঘটলে চালকের মুখ এবং শরীরের উপরিভাগকে সুরক্ষিত রাখে। এই এয়ার ব্যাগের সঙ্গে মুখের ঘষা লাগলে মুখে 'সিলিকন বাইট'-এর চিহ্ন থাকা উচিত। কিন্তু ধৃত আরসালানের মুখে তা ছিল না, যা দেখে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। এরপর পুলিশের তরফে ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং জাগুয়ার সংস্থার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যা থেকে পাওয়া যায় গাড়িটি শেষ যিনি চালিয়েছেন তাঁর নাম এবং মোবাইল নম্বর।

একইসঙ্গে প্রায় ৪৫টি সিসিটিভি থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। সেখানে এক জায়গায় দেখা যায়, এক ব্যক্তি দৌড়ে পালাচ্ছে ঘটনাস্থল থেকে। ফুটেজ থেকে তার চেহারার বিশদ বিবরণ সংগ্রহ করে পূর্ব সংগৃহীত মোবাইল নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইল ছবির সঙ্গে ম্যাচ করা হয়, এবং দুটি মিলেও যায়। জানা যায়, এই ব্যক্তির নাম রাঘিব পারভেজ, যে দুর্ঘটনার সময় গাড়ি চালাচ্ছিল। কিন্তু ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়ার জন্য রাঘিব এবং আরসালান পারভেজের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে রাঘিব যে সময় জাগুয়ার নিয়ে বেরোয়, সে সময় বাড়িতেই ছিলেন আরসালান।

এই নতুন পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ, এবং অবশেষে শহরে ফেরে রাঘিব। আজ দুপুর ২.১৫ নাগাদ পার্ক সার্কাস এলাকার এক নার্সিং হোমের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। তার মামা মহম্মদ হামজাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের প্রমাণ লোপাট, অথবা অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টায় ভুল তথ্য প্রদান)। আগামীকাল, বৃহস্পতিবার, আদালতে তোলা হবে তাদের।

আরও পড়ুন: ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতে আরসালান পারভেজ

গত শুক্রবার রাতে কলকাতার শেক্সপিয়র সরণি-লাউডন স্ট্রিটের সংযোগস্থলে পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসা দুই বাংলাদেশী নাগরিক। জাগুয়ার গাড়িটি ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্য করে প্রায় ১০০ কিমি বেগে ধাক্কা মারে একটি মার্সিডিজ গাড়িকে। সংঘর্ষের তীব্রতা সামলাতে না পেরে এরপর জাগুয়ারটি ছিটকে গিয়ে ফের ধাক্কা মারে তিনজন পথচারীকে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহতরা হলেন ঝিনাইদহের কাজি মহম্মদ মইনুল আলম (৩৬) এবং ঢাকার বাসিন্দা ফারহানা ইসলাম তানিয়া (৩০)। পুলিশ সূত্রে সেসময় জানানো হয়েছিল, জাগুয়ার গাড়িটি চালাচ্ছিলেন আরসালান, এবং ঘটনার পরেই গাড়ি ফেলে পালান তিনি।

মার্সিডিজ গাড়িটিতে ছিলেন রিয়েল এস্টেট সংস্থা ডায়মন্ড গ্রুপের কর্ণধার অমিত কাজারিয়া ও তাঁর স্ত্রী কণিকা। তাঁদেরকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে অমিত কাজারিয়ার কানে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে বলে জানা যায়। তবে সুস্থ আছেন তাঁর স্ত্রী, এমনটাই খবর।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ (বেপরোয়া গাড়ি চালানো), ৪২৭ (মারাত্মক ক্ষতিসাধন), ৩০৪ (অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা) ধারায় আরসালান পারভেজের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। তাঁকে আদালতে তুললে ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতেরও আদেশ দেওয়া হয়, কিন্তু এই নতুন তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় সব হিসেব ফের গুলিয়ে গেল।

Advertisment