Advertisment

কাবুলে আটকে দত্ত বাড়ির 'আফগান বউ', চিন্তায় কলকাতায় বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন স্বামী

দিন দু-তিনেক হল ওপ্রান্ত থেকে কোনও সাড়া নেই। মোবাইল স্ক্রিনে চোখ সুব্রত দত্তর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Afghanistan, Taliban, Kolkata News, আফগানিস্তান-তালিবান, কলকাতা, bengali news today

'আফগান বউ' কাবুলে আটকে বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন সুব্রত

ভালবাসা মানে না কোনও কাঁটাতার, কোনও সীমান্ত। সে জাতপাত-ধর্মের উর্ধ্বে এক অনুভূতি। তাই তো কাবুলে প্রথম সাক্ষাতেই দমদমের যুবক মন দিয়ে ফেলেছিলেন আফগানিস্তানের কন্যাকে। সেই প্রেম পরিণতি পায় ছাদনাতলায়। কলকাতায় এসে ভারতীয় যুবকের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন আফগান-কন্যা। আজ যখন তালিবানদের কবজায় কাবুল। আফগানিস্তান জুড়ে তালিবানদের নারকীয় রাজত্বে বেঁচে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারুদ, গোলাগুলি, বোমাবাজিতে প্রতিক্ষণে কড়া নাড়ছে মৃত্যু। নৃশংস আচরণের শিকার হচ্ছেন আফগানিস্তানের (Afghanistan) মহিলারা, তখন দেশে বসে স্ত্রীর চিন্তায় বিনিদ্র রজনী কাটছে সুব্রত দত্তর। ক্ষণে ক্ষণেই মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রাখছেন। মেসেজের উত্তর এল কি? নাহ, দিন দু-তিনেক হল ওপ্রান্ত থেকে কোনও সাড়া নেই।

Advertisment

সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, 'কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ'। যাঁর রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা পিলে চমকে দিয়েছিল। তবে এবার দমদমের নাগেরবাজারের দত্ত বাড়ির আফগান বউ আটকে পড়েছেন কাবুলিওয়ালাদের দেশে। অতঃপর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দেখে স্ত্রীর জন্য চিন্তায় খানিক কাতর হয়ে পড়েছেন সুব্রতবাবু। পেশায় মোটিভেশনাল স্পিকার। কাজের সূত্রেই দেশ-বিদেশে যাওয়া। আফগানিস্তানেও যাতায়াত ছিল। সেখান থেকেই মন দেওয়া-নেওয়া আফগান-কন্যা হাসোর সঙ্গে। তারপর বিয়ে। গত ৫ বছর ধরে নাগেরবাজারেই সুখের দাম্পত্য তাঁদের। তবে বিয়ের পর থেকে আর বাপের বাড়ি যাননি হাসো। তাই গত জুন মাসের ২ তারিখে প্রথমবার বিয়ের পর পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে সুব্রতবাবুর স্ত্রী পাড়ি দেন আফগানিস্তানে। পৌঁছে জানিয়েছিলেন। নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় কথাবার্তাও হত তাঁদের। সেখানকার প্রকৃতি, পথঘাটের বেশ কিছু ছবিও স্বামীকে পাঠিয়েছিলেন হাসো।

সুব্রত দত্তকে ফোন ধরা হলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র কাছে তিনি জানান, "আফগানিস্তানে প্রচুর বন্ধুবান্ধব রয়েছে, তবে সেখানকার খবর পেলেও স্ত্রীয়ের কোনও খবর পাচ্ছি না। কারণ, ও এখন ওঁর বোনের বাড়িতে রয়েছে। আর সেই ঠিকানা আমার জানা নেই।" সুব্রত নিজে কখনও শ্বশুরবাড়ি যাননি। কেন? তাঁর কথায়, "প্রথমত আমি ভারতীয়। দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানে আমার সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীরা থাকতেন, অত লোক-লস্কর নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া মানেই লোকের নজরে ওঁদের পরিবারকে এনে দেওয়া।"

<আরও পড়ুন: ‘বেঁচে থাকলে তালিবানি হানা নিয়ে সিনেমা বানাব’, কাবুল থেকে পালাতে মরিয়া আফগান মহিলা পরিচালক>

সুব্রতবাবু জানালেন, "আফগানিস্তানে যাওয়ার সময়েই স্ত্রী বলে গিয়েছিলেন, অন্তত ৮-৯ মাস থাকবেন। আর এখন যা পরিস্থিতি দেখছি, মনে হচ্ছে স্ত্রীয়ের জন্য অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হতে চলেছে। কারণ, আমার স্ত্রী ওঁর বোনকে ছাড়া এদেশে আসবে না। আমার শ্যালিকা ইচ্ছে করেই ভারতে আসতে চান না। এখন তো সব দেশই দরজা খুলে দিয়েছে আফগানিস্তানের জন্য। আমার স্ত্রীর যদিও কাগজপত্র রয়েছে, ও রিফিউজি নয়। তবে ওঁর বোনকে এদেশে নিয়ে আসতে হলে তো শরণার্থী হয়েই থাকতে হবে।"

"ভিতর থেকে কতটা সুরক্ষিত মনে করছে নিজেকে জানি না, তবে আমাকে শেষবার মেসেজে জানিয়েছে- চিন্তা কোরো না। আমাদের কিচ্ছু হবে না। আমরা ঠিক আছি এখানে। আসলে আমার স্ত্রী একরোখা প্রকৃতি, পালিয়ে আসার মেয়ে ও নয়। ওর বোনকে ছেড়ে আসবে বলে মনে হয় না।" কিন্তু দিন তিনেক বউয়ের সঙ্গে কথা না হওয়ার পর সুব্রতবাবু যেন আশঙ্কাতেই রয়েছেন। জানালেন, "বিয়ের পর প্রথমবার বাপেরবাড়ি গিয়েছে, ভারতকে ওঁর কতটা ভাল লেগেছে, আমাকে কতটা ভাল লেগেছে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে স্ত্রীকে ছেড়ে যে আমার মাসখানেক কাটাতে হবে, তা আগেই জানতাম।"

সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে সেভাবে কোনও ছবিই নেই সুব্রতবাবুর। কারণ, হিসেবে জানালেন, "ওদেশে কেউ যদি জানতে পারে যে ও একজন ভারতীয় ছেলেকে বিয়ে করেছে, তাহলে সমস্যা হতে পারে। আর এখন তো তালিবানি সন্ত্রাসে যা পরিস্থিতি তাতে সমস্যা আরও বাড়বে বই কমবে না!" সুব্রতবাবুর আক্ষেপ, "আফগানিস্তান কিংবা ভারত বলে নয় ভিনধর্মী বিয়েকে কেউই একটা ভাল মনে নেন না। হাসোকে নিয়ে লোকনাথ বাবার মন্দিরে গিয়েছিলাম, তখন খুব কাছ থেকে লোকদের ব্যবহার বদলে যেতে দেখেছি।" ভিনধর্মের হলেও আফগান-স্ত্রী বাড়িতে পুজো করতেন বলে জানান নাগেরবাজারের সুব্রত দত্ত।

<আরও পড়ুন: আফগান মহিলাদের পোশাকে দুই তালিবানের ভিন্ন মত! বিভ্রান্তি দূর করলেন তরুণী উদ্যোগপতি>

"কাজের সূত্রে যখন কাবুলে গিয়েছিলাম, দেখেছি ওখানে একটাই মন্দির। বিহারি পুরোহিত।" তিনি বলছেন, "আমি মন্দির ছেড়ে কোথায় যাব? আফগানরা ওখানে বসবাসকারী শিখদেরই হিন্দু বলে মনে করেন। আমি নিজেও যখন হিন্দিতে কথা বলতাম, তখন ওঁরা বলত, সর্দারজি আপকা উর্দু বহুত আচ্ছা হ্যায়। এরকম বিভ্রান্তি হতই। ওদের কাছে উর্দু মানে পাকিস্তানের ভাষা। ওরা মূলত হিন্দি আর উর্দুতে একরকম শব্দ থাকার জন্য সেগুলোকে গুলিয়ে ফেলত", বলছিলেন সুব্রত দত্ত।

পাশাপাশি তিনি এও জানালেন যে, তাঁর আফগানিস্তানের বন্ধুদের কথায়, আগামী ২-৩ মাস ওখানকার নাগরিকদের সমর্থন পেতে তালিবানরা মুখোশ পরে থাকবে। একবার সরকার গঠন করে ফেললে তখনই প্রকৃত রূপটা বেরবে। "তালিবানরা (Taliban) সবসময়েই নিজের কথার খেলাপ করেছে। তাই এই পরিস্থিতিতে যে ঠিক কী হতে পারে, বলা যাচ্ছে না। দিনে, রাতে বারবার মেসেজ চেক করছি, কখন উত্তর আসবে", আহমেদাবাদ থেকে ফোনে জানালেন সুব্রত দত্ত।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

kolkata news Bengali News Afghanistan Taliban
Advertisment