বইমেলার দ্বিতীয় দিন শুরু হতে না হতেই মিনিট পনেরোর তুমুল বৃষ্টি তাল কাটিয়ে দিল। যে তুমুল বৃষ্টিকে সুনামি বিপর্যয়ের সঙ্গে তুলনা করবেন গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে।
এদিন বেলা বারোটার কিছু পরে প্রবল বৃষ্টি নামে প্রায় সারা কলকাতা ও সল্টলেক ও সন্নিহিত এলাকা জুড়ে। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ছিল বটে, কিন্তু বৃষ্টির এই প্রাবল্য আঁচ করতে পারেননি, মেলায় অংশগ্রহণকারীরা। আঁচ নিশ্চিতভাবেই করতে পারেননি গিল্ড কর্তারাও। ফলে বহু স্টলের মাথায় যে ত্রিপলের ছাদ, তাতে ফাঁক ছিল প্রভূত। সেখান দিয়ে জল পড়ে বই ভিজেছে, মাথায় হাত প্রকাশকদের।
কাফে টেবিলের অভিষেক আইচ জানালেন, যেদিকে স্টলের গেট থাকে সেদিকে মাথার দিক সম্পূর্ণ খালি। একই কথা জানা গেল গুরুচণ্ডালীর সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। তিনি জানালেন, "যখন মেলা শুরু হয়, সে সময়ে ক্রেতা বা দর্শকরা স্টলে হাজির হননি। তার ঠিক আগেই স্টলে প্রকাশক-বিক্রেতারা এসে পৌঁছনোয় অনেকটা বই বাঁচানো গিয়েছে। তাতেও প্রায় ৪০টি বই ভিজেছে। গিল্ড যেভাবে স্টলগুলি তৈরি করেছে, তাতে এই ধরনের বিপর্যয় আটকানোর কোনও পূর্বপরিকল্পনা ছিল না বলেই মনে করেন সৈকত।"
ধ্যানবিন্দুর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সুধন্য জানালেন, " কোনও রকমে ফ্লেক্স জড়িয়ে কিছু বই বাঁচানো গিয়েছে। কিন্তু আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। এত টাকার বই তুলে যদি এ ভাবে নষ্ট হয়, তাহলে কী করে চলবে! আমরা তো স্টল তৈরির জন্য টাকা দিই।"
সৃষ্টিসুখের রোহণ কুদ্দুস এর পিছনে গিল্ডের পলিসিকে দায়ী করছেন। তিনি বললেন, "আগে কিছু ডেকরেটর থাকতেন, তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা হত প্রকাশকদের। গত কয়েক বছর সে নিয়ম পাল্টে গিয়েছে। এখন গিল্ড ডেকরেটরদের দিয়ে স্টল বানিয়ে দেয়, প্রকাশকরা সরাসরি কথা বলতে পারেন না ডেকরেটরদের সঙ্গে। ফলে তাঁদের স্টল অরক্ষিত থাকলেও, তাঁদের কিছু করার নেই, হাতে পায়ে ধরা ছাড়া।"
কাফে টেবিলের অভিষেকের সঙ্গে কথা বলার সময়েই, তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল এক ডেকরেটরের। তিনি ডেকরেটরকে মাথার উপর ছাদটা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও, ডেকরেটর তাঁকে বলে দিলেন, এ তাঁর কাজ নয়, তিনি করতে পারবেন না।
বইমেলা তো একদিন আগে শুরু হয়ে গেল, তারপর?
লিরিক্যালের সুমেরু মুখোপাধ্যায় জানালেন, কিছু নির্দিষ্ট ডেকরেটরের কাজ নিয়ে আগেও অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু গিল্ড তাদের কাজ দিয়েই চলেছে। লিরিক্যালের ক্ষতির পরিমাণ ৪০ হাজার টাকা বলে দাবি করলেন তিনি। সুমেরু জানালেন, "প্রেস থেকে আজই যে বই নিয়ে এসেছিলাম, তা আবার ফেরত পাঠাচ্ছি শুকোনোর জন্য।"
এত অভিযোগ ও অব্যবস্থা নিয়ে কী বলছেন গিল্ড কর্তা! সুধাংশুশেখর দে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষপাতী। তিনি বললেন, "বিপর্যয় বইমেলা অনেক দেখেছে। এক সময়ে মেলা হত রবীন্দ্রসদনের উল্টোদিকে, সেখান থেকে ময়দানে, সেখান থেকে পার্ক সার্কাস, তারপর মিলন মেলা, এখন সেন্ট্রাল পার্ক। আমরা বিপর্যয়ের মধ্যেও বেঁচে আছি।" কিন্তু সামাল দেওয়ার কী হবে! সুধাংশু বললেন, "সুনামি এলে কী হবে! এ তো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আমরা সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিয়েছি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সব পরীক্ষা করে ফের বিদ্যুৎ চালু করা হয়েছে। মেলায় কয়েক লক্ষ লোক বিকেল চারটের মধ্যেই ঢুকে পড়েছেন। বিভিন্ন স্টলের সামনে লাইনও পড়ে গেছে।" কিন্তু প্রকাশকরা যে ক্ষতির কথা বলছেন তার কী হবে! গিল্ড কর্তা বললেন, "ক্ষতির দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকানোই তো ভাল।"