প্রথা মেনে ৪৪তম কলকাতা বইমেলা শুরু হয়ে গেল সল্ট লেকের সেন্ট্রাল পার্কে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘণ্টা বাজিয়ে মেলার সূচনা করলেন। উপস্থিত ছিলেন এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি রাশিয়ার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত কুদাশেভ নিকোলায়া রাস্তোভিচ। ছিলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ীও। এদিন বইমেলার উদ্বোধনের আগে কলকাতা পুলিশের স্টল উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে দুটি বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশও করেন তিনি। বইমেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে মমতা এদিন বলেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য খুঁজতে আমরা বইমেলায় আসি। এদিন মেলার মঞ্চ থেকেই বইমেলার বিবর্তনের ইতিহাস রচনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। সেই কথার রেশ ধরে মমতা বলেন, এ কাজ অত্যন্ত জরুরি। নতুন প্রজন্মের কাছে এ কাজ পৌঁছে দেবার জন্য তিনি নৃসিংহপ্রসাদকেই অনুরোধ জানান। মমতা বলেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সুর দেখা যায় কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়। মমতা বলেন, আমরা আপন আর পর-এ বিভেদ করি না। মনে করি, পুরোটাই নিজেদের। উৎসব সকলের। বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাষায় বই প্রকাশ করলেও, তাঁরা সকলে যে এই বইমেলায় মিলিত হন, সে কথার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন এই একতাই শক্তি।
এদিকে কলকাতা বইমেলা উপলক্ষে বিশেষ বাসের যেমন ব্যবস্থা করা হয়, তেমনটা তো আছেই। গত বছর বইমেলার জন্য শহরে ৩৫০ বাসের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। এবার মোট ৪০০টি বাস চলবে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা গত বছরের মতই এ বছরও বইমেলার প্যাকেজ ট্যুরের বন্দোবস্তও করেছে।
বইমেলায় টিকিট তুলে দেওয়া উচিত হয়নি, বললেন প্রাক্তন গিল্ড কর্তা
বইমেলা শুরু ও শেষের দিন অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারি ও ৯ ফেব্রুয়ারি ছাড়াও ১ ফেব্রুয়ারি, ২ ফেব্রুয়ারি, ৫ ফেব্রুয়ারি ও ৮ ফেব্রুয়ারি এই প্যাকেজ ট্যুরে বইমেলায় আসতে পারবেন দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার বইপ্রেমীরা।
পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, হুগলি জেলার বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও আসানসোল ও দুর্গাপুর থেকে বাস ছেড়ে বইমেলা আসবে। প্যাকেজ ট্যুরে বইমেলা যাত্রীদের লাঞ্চ ও পানীয় জল দেওয়ার বন্দোবস্তও করা হয়েছে।
এ বছর কলকাতা বইমেলা শুরুর কথা ছিল ২৯ জানুয়ারি বুধবার। উদ্বোধক হিসেবে গত বেশ কয়েকবছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পূর্বনির্ধারিত ও ঘোষিত থাকছে। এ বছর দুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, বুধবার সরস্বতী পুজোর জন্য তিনি মেলার উদ্বোধনে আসতে পারবেন না। তখনই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন একদিন এগিয়ে আনা হয়।
২ ফেব্রুয়ারি বইমেলা ময়দানে শিশু দিবস উদযাপিত হবে। ৯ ফেব্রুয়ারি পালিত হবে বাংলাদেশ দিবস। ৯ ফেব্রুয়ারিতেই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
বইমেলার বেশ কয়েকটি গেট বিশেষ স্মারক হিসেবে বানানো হয়েছে। ৫ নং গেটটি থিম গেট। এটি বানানো হয়েছে রাশিয়ার বলশয় থিয়েটারের অনুকরণে। ৪ নং গেট বানানো হয়েছে সংস্কৃত কলেজের অনুকরণে। ১ নং প্রবেশদ্বারের নাম সম্প্রীতি গেট। ঐক্য, সম্প্রীতি ও সংহতির প্রতীক এই প্রবেশদ্বার। ৩ নং গেট হচ্ছে ইন্ডিয়াগেটের অনুকরণে। ৬ নং গেট বিশ্ববাংলা গেটের অনুকরণে সাজানো হয়েছে এবং ৯ নং গেট হচ্ছে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অনুকরণে।
বইমেলার বিভিন্ন রাস্তা ও লেনের নামকরণ করা হয়েছে বাংলা ও রাশিয়ার প্রয়াত লেখকদের নামে।
বইমেলায় কলকাতা সাহিত্য উৎসব চলবে ৬ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি।