Advertisment

কলকাতার সবথেকে পুরনো ক্যাফে, যার 'ফোম পুডিং' খুব প্রিয় ছিল সত্যজিৎ থেকে উত্তমকুমারের

এই শহরের খাদ্যরসিকদের অনেকেই মনে করেন হাজরা ক্যাফের পুডিং চোখে না দেখা একধরনের অপরাধ

author-image
Shashi Ghosh
New Update
satyajit ray, manna dey, uttam kumar, kolkata cafe, shashi ghosh story, kolkata food story

কলকাতার ক্যাফে - এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

কলকাতার প্রতি অলিতে গলিতে এখন কত শত ক্যাফে গজিয়ে উঠেছে। ব্যাঙের ছাতার মতন গজিয়ে ওঠা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাফেগুলোর সন্ধ্যেও বেশ দামী। প্রেম ফুরনো আধুনিক সময়ের যুবক যুবতীর প্রথম পছন্দ। বদলাতে থাকা পুরনো কলকাতার চরিত্রের সঙ্গে দিব্ব্যি মানিয়ে গিয়েছে এই নতুন ক্যাফেগুলো। বন্ধ হয়ে আসা সিনেমাহল, নতুন গজিয়ে ওঠা শপিং মলের ভিড়ে এই শহর নিজের খোলস বদলাচ্ছে। আসলে কলকাতা একটা আজব শহর। ইট কাঠ পাথরের শহরে পুরনো সময়েরা মুখ লুকিয়ে আছে। হঠাৎ দেখা হয়ে যেতে পারে কলকাতার রাস্তারই কোনও ফুটপাথে। আপনি অপ্রস্তুত হয়ে পড়বেন। চমকে উঠবেন। চোখের সামনে ভেসে উঠবে পুরনো শহরের স্মৃতিরা।

Advertisment

হাজরার মোড়ের কাছে মেট্রোর ঠিক গায়ে লাগানো ক্যাফেটিকে দেখলেই আপনি ঠিক এমনভাবেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়বেন। দোকানটির নাম 'ক্যাফে'। আগে এবং পড়ে কোন পদবী নেই। যদিও অনেকে এটিকে দক্ষিণ কলকাতার প্রথম ক্যাফে বলেন, অবশ্য এই নিয়ে বিতর্ক হবে। বিতর্ককে দূরে সরিয়ে রাখায় সমীচীন বলে মনে হয়। 

satyajit ray, manna dey, uttam kumar, kolkata cafe, shashi ghosh story, kolkata food story
কলকাতার ক্যাফে - এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

সময়টা ১৯৩৮। হাজরা মোড়ে বিদেশী রেসিপি নিয়ে উত্তর কলকাতার বাসিন্দা অমরনাথ ব্যানার্জি দোকান খুললেন সুদূর ভবানীপুর এলাকায়। দোকানের নাম রাখা হল 'ক্যাফে'। হাজরা মোড়ের কাছে হওয়ায় লোকের মুখে মুখে ক্যাফের নাম হয়ে উঠল হাজরা ক্যাফে। সাদামাঠা দোকানে আলো আধারি খেলা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর নেই,  মোটা মোটা গদিওলা ডুবে যাওয়া চেয়ার নেই, ক্যাপুচিনো, ক্যাফেমোকা, এসপ্রেসো নেই। না থাকার তালিকার মাঝে ছোট্ট দোকানটিতে একরাশ ভালো লাগা আছে। চিকেন স্টু, ফিশ ফ্রাই, মটন কিমবা চিকেন কবিরাজিরতে কামড় দিয়ে ডুবে যেতে পারেন ভালোলাগার সাগরে।

satyajit ray, manna dey, uttam kumar, kolkata cafe, shashi ghosh story, kolkata food story
কলকাতার ক্যাফে - এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

দোকানের বর্তমান মালিক অমরনাথ বাবুর ছেলে সিদ্ধেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্যাফের মধ্যিখানের একটি টেবিলেই তিনি বসে থাকেন। স্মৃতির পাতা ওলাটাতে ওলটাতে বলেন, "এই ক্যাফের একদম শেষ টেবিলটিতে এসে বসেতেন সত্যজিৎ এবং সৌমিত্র বাবু। সত্যজিৎ কাটলেট এবং পুডিং খেতেই বেশী ভালোবাসতেন। চা খেতে লেখালেখিও করতে এই টেবিলে বসেই। বর্তমান প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ে এসে আমায় বলে যায়, 'এই সাবেকি আমেজটার জন্যই আসা, পাল্টে ফেলবেন না'।" খান তিরিশেক চেয়ারের একেকটাতে এসে এককালে বসতেন উত্তম কুমার, সুপ্রিয়া দেবি, মান্না দের মতন কত বড় বড় ব্যাক্তিত্বরা। 

satyajit ray, manna dey, uttam kumar, kolkata cafe, shashi ghosh story, kolkata food story
কলকাতার ক্যাফে - এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

এই শহরের খাদ্যরসিকদের অনেকেই মনে করেন হাজরা ক্যাফের পুডিং জীবনে একবারও চেখে না দেখাটাকে রীতিমত অপরাধ হিসেবেই গণ্য হয়। পুডিং-এর ওপর আলাদা করে ফোম দেওয়া। একেবারে অভিনব। এরকম সুস্বাদু পুডিং কলকাতায় আর কোথাও পাওয়া যায়না। 'ক্যাফে'র' রাঁধুনিসহ সমস্ত কর্মচারী সকলেই বেশ পুরনো। দোকানের মত তাঁদেরও শিকর গাঁথা হয়ে গিয়েছে, ফলে পুরনো ঐতিহ্য এখনও টিকে আছে।

satyajit ray, manna dey, uttam kumar, kolkata cafe, shashi ghosh story, kolkata food story
কলকাতার ক্যাফে - এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

আগের মতন এখনও ব্রয়লার মুরগি এই দোকানে ঢোকে না। দেশি মুরগি দিয়েই সব পদ হয়। রন্ধন প্রনালীতেও বদল হয়নি এতটুকু। ঝড়-জল-বৃষ্টি যাই হোক প্রতিদিন বিকেল ৪টে বাজতে না বাজতে খুলে যায় ক্যাফের দরজা। ছুটির দিনে আড্ডা গড়ায় বেশ কিছু রাত পর্যন্ত। রাত বাড়লে দোকানের ঝাঁপ পড়ে। কলকাতার সঙ্গে একটু একটু করে নিজেই জীবন্ত ইতিহাস হয়ে ওঠে হাজরা ক্যাফে। যেন পুরনো সময় ফিরে আসে এই শহরের বুকে। বদলাতে থাকা কলকাতাকে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয় হাজরার 'ক্যাফে'। 

Manna Dey Uttam Kumar satyajit ray cafe food story kolkata cafe
Advertisment