করোনা আবহে কেমন হবে এবার কলকাতার দুর্গাপুুজোর আয়োজন? নিউ নর্মালে কী কী বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে? ক্লাবগুলোকে নতুন নির্দেশই বা কী দেওয়া হল? এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুজো সমন্বয় সমিতির এই বৈঠকে হাজির ছিলেন কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তারা, বিভিন্ন দফতরের আধিকারিক, পুজো কমিটিগুলির উদ্যোক্তারা। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সাধন পান্ডে, সুজিত বসু, ফিরহাদ হাকিম-সহ অন্য মন্ত্রীরা হাজির ছিলেন।
এদিন করোনা পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজো নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এদিনের অনুষ্ঠানে নাম না করে গেরুয়া শিবিরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন তিনি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "অনেকে জায়গায় দাঙ্গা-ফ্যাঁসাদ লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলার মাটি একতার মাটি।" একইসঙ্গে তিনি দুর্গাপুজো নিয়ে একাধিক সুযোগ সুবিধার কথাও ঘোষণা করেছেন।
দুর্গাপুজো কমিটির জন্য সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, "করোনা পরিস্থিতিতে পুজো কমিটিগুলিরও মাথায় হাত। এবার ফায়ার ব্রিগেডের অনুমতি পুরো ফ্রি, পুরসভা কোনও কর নেবে না, সিইএসসি ৫০ শতাংশ ছাড়, রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর ৫০ শতাংশ ফ্রি। রাজ্য সরকার এবার ৫০ হাজার টাকা করে দেবে প্রতি পুজো কমিটিকে। তৃতীয়ার দিন রাত থেকে একাদশীর দিন পর্যন্ত পুজো দেখা চলবে।"
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এবার রাজ্যে ৩৭ হাজার পুজো হচ্ছে। রাজ্য পুলিশ এলাকায় ৩৪,৪৩৭টি, কলকাতায় ২,৫০৯টি, ১৭০৬টি মহিলা পরিচালিত পুজো আছে। তাঁর নির্দেশ, "খোলামেলা মণ্ডপ করুন। যাতে হাওয়া চলাচল করে। উপরে চালা থাকবে। চারপাশটা খোলা রাখুন। আর চারপাশটা বন্ধ রাখলে ছাদ খোলা রাখুন। মানুষের ভিড়ে যাতে কোনওরকম সংক্রমণ না ছড়ায়। এবারের পরিস্থিতি আলাদা। মণ্ডপ এমনভাবে করুন ফিজিক্যাল ডিসট্য়ান্সিংয়ের ব্যবস্থা যেন থাকে। এক জায়গা দিয়ে প্রবেশ, অন্য গেট দিয়ে বেরনোর ব্যবস্থা করতে হবে। ঢোকার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিন। মাস্ক পরে না এলে আপনারা দেবেন বা অনুরোধ করবেন মাস্ক পরতে।"
পুজোর উদ্বোধন থেকে বিসর্জন কীভাবে করতে হবে তারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে কোনও ভাবে সংক্রমণ না ছড়ায় তা নিয়ে বারে বারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, "বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে। অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সিঁদুর খেলা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অল্প অল্প লোক পালা করে অঞ্জলি দেবেন। প্রসাদ বিতরণ করবেন সিস্টেম মেনে। সিঁদুর খেলুন কিন্তু একসঙ্গে না করে দু-তিনটে জায়গায় খেলার ব্যবস্থা করতে হবে।"
নেতাজি ইন্ডোরের এই সভায় নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দেগেছেন গেরুয়া বাহিনীকে। মমতা বলেন, "সংক্রমণ ছড়ালে অনেকে এটা নিয়ে রাজনীতি করবে। শকুনের মত ওঁত পেতে বসে আছে। যদি বলি পুজো হবে না তাও হবে না। পুজো করলে তখন বলবে এই পুজো করতে দিল কোভিড বাড়ল।" তিনি বলেন, "পুজোর সময় কালচারাল অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করছি। পুরস্কারের সময় একসঙ্গে দুটোর বেশি গাড়ি নিয়ে কেউ ঢুকবেন না। ভার্চুয়ালি প্রাইজ ঘোষণা করবে বিশ্ব বাংলা। অন্যরাও ভার্চুয়ালি করতে পারেন। পুরস্কার যাঁরা দিতে আসবেন ১০টা থেকে ৩টের মধ্যে মণ্ডপে আসবেন। ভিড়ের মধ্যে নয়। যে কোনও মূল্য ভিড় এড়াতে হবে। বিসর্জন অল্প লোক নিয়ে করবেন। অনুমতির অনলাইন ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামী ২ অক্টোবর তা থেকে শুরু হবে।" এবার রোড রোডে পুজো কার্নিভ্যাল হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন