একচালা ঠাকুর কী? একটা চালচিত্র। তার মধ্যেই দেবী দুর্গা আর কার্তিক-গণেশ-লক্ষ্মী-সরস্বতী। আদি প্রতিমা একচালাই হয়। বাড়িতে-বাড়িতে এখনও একচালা বিগ্রহেই পুজো হয়। বাংলা শক্তি উপাসনার পীঠস্থান। বঙ্গীয় শিল্প-রীতিতেও শক্তি উপাসনার প্রতিফলন পাওয়া যায়। প্রতিমাশিল্প ও মৃৎশিল্পে প্রতিমার চালি ও চালচিত্রের ব্যবহার এই শাক্ত শিল্পরীতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাচীন বঙ্গদেশে দুর্গাপ্রতিমায় ধ্রুপদী চালা ও চালচিত্র ব্যবহার করা হত। এখনও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জমিদার ও রাজবাড়িতে এবং বেশকিছু সাবেকি পুজো মণ্ডপে ধ্রুপদী চালা এবং চালচিত্রের ব্যবহার করা হয়।
দিন বদলের সঙ্গে বদলেছে চিন্তা ধারাও। একচালা ঠাকুরের বদলে এসেছে থিম পুজো। কিন্তু করোনা আবহে এবার কুমোরটুলিতে এলে মনে হবে ফিরে এসেছে অতীতের পুজোর ফ্রেম। সারি-সারি একচালা প্রতিমা। আর সাইজে ছোট। থিমের ঠাকুর কম। মালা পালের পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে ঠাকুর তৈরf করেন। “এবারেই একচালা প্রতিমার অর্ডার আসছে বারোয়ারি পুজো থেকে। কোনওবার এমন হয় না,” বলছেন প্রতিমা শিল্পী মালা পাল।
শুধু মালা একা নন, ঠাকুর তৈরির সঙ্গে যুক্ত প্রায় সব শিল্পীরই এবারে একচালা ঠাকুরের অর্ডার এসেছে বেশি। করোনা মহামারী অর্থনীতিকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। রুজিরুটিতে কোপ ফেলেছে লকডাউন। বড় বারোয়ারিগুলি করোনা আবহে বাজেটে কাটছাঁট করেছে। আর তাতেই থিমের ঠাকুরের বদলে একচালা অর্ডার আসছে বারোয়ারি পুজো থেকে, এমনই মত অধিকাংশ শিল্পীদের।
আরও পড়ুন প্রবল বৃষ্টিতে নষ্ট অনেক তৈরি প্রতিমাও, মাথায় হাত কুমোরটুলির শিল্পীদের
তবে একচালা ঠাকুরের সংখ্যা বেশি হলেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বড় প্রতিমার সংখ্যাও। আগের বছর যেখানে দুই থেকে তিনটি বড় প্রতিমা শিল্পীরা সর্বসাকুল্যে অর্ডার পেয়েছিলেন সেখানে এই বছর সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন। এর সঙ্গেই ১২ ইঞ্চি, ১৬ ইঞ্চি, ৩০ ইঞ্চি ঠাকুরের চাহিদাও এবার অনেক বেশি। তবে সেই সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে একচালা ঠাকুরের সংখ্যাটা। তবে করোনা আবহে থিম পুজোকে ছাপিয়ে এবারের পুজোর মুল আকর্ষণ একচালা ঠাকুর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন