scorecardresearch

মার খেতে খেতে ক্লান্ত, বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ সমকামী যুবকের

“আমার বাবা আমায় বলেন, ওঁর বড় বড় জায়গায় জানোশোনা রয়েছে, ভাড়াটে খুনি দিয়ে বিরাটকে খুন করতে উনি পিছপা হবেন না।”

মার খেতে খেতে ক্লান্ত, বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ সমকামী যুবকের

তিনি যে সমকামী, সে কথা নিজের বাবা-মাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন শুভংকর রায়। এ বছরের ২১ সেপ্টেম্বর।  তারিখটা জীবনেও ভুলবেন না তিনি। “আমার দিনটা ভাল যাচ্ছিল না। আমার বয়ফ্রেন্ড আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। ও বলেছিল আমি যদি ব্যাপারটা না-জানাই তাহলে আমি কোনও দিন সম্পর্ক নিয়ে সৎ হতে পারব না। সে কারণেই আমি এত বড় ঝুঁকিটা নিই, বলছিলেন বছর পঁচিশেকের শুভংকর। তিনি বারাসাতের বাসিন্দা। তিনি নিজেই নিজেকে বাবা-মায়ের বাধ্য ছেলে বলে জানেন। ফলে কিছুটা প্রতিক্রিয়া  হবে এমনটা তিনি আশঙ্কাই করেছিলেন। কিন্তু যা হল তা শুধু হিংস্রই নয়, ভয়ংকরও। আমার বাবা-মা আমাকে বিশ্বাসই করেননি। সেটা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওঁরা নিজেদের মত করে গোটা ব্যাপারটা ভেবে নেন। ওঁরা বলতে থাকেন এসবের জন্য আমার বয়ফ্রেন্ড বিরাটই দায়ী।”

কলকাতার এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন শুভংকর। এর কয়েকদিন পর থেকেই বাবা-মা তাঁর উপর শারীরিক-মানসিক অত্যাচার শুরু করেন বলে অভিযোগ শুভংকরের। “ওঁরা আমাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যান, যিনি পরিষ্কার বলে দেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আমার যৌন পছন্দের ব্যাপারটা কোনও অসুখ নয়। বাবা-মা এ কথায় খুশি হননি। ওঁরা বলতে থাকে আমি অসুস্থ। আমার প্রতিটা পদক্ষেপ নজরে রাখা শুরু হয়।”

আরও পড়ুন, প্রেমিকের বাড়িতে ধর্না, ‘থাপ্পড় মেরে’ নাবালিকাকে থানায় নিয়ে গেল পুলিশ!

পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। শুভংকরের বাবা-মা একটি মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি শুরু করেন। শুভংকর বললেন, “আমি ওদের বললাম যে এরকম সম্পর্ক আমি আমার বয়ফ্রেন্ড ছাড়া আর কারও সঙ্গে ভাবতেই পারি না। ওর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে গেলে তার জায়গায় অন্য কোনও ছেলের সঙ্গেই সম্পর্ক হবে আমার। এ ঘটনার পর বাবা-মায়ের আক্রোশ আরও বাড়তে থাকে।” তিনি বলেন, “একদিন সন্ধেবেলা আমি বেরোনোর সময়ে বাবা-মা জোর করে আমাকে আটকান। বাবা প্রতিবেশীদের ডেকে শারীরিকভাবে আমাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। সে সময়ে আমার মায়ের গায়ে আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলি, একেবারেই অনিচ্ছাকৃতভাবে। আমার বাবা এরপর আমায় ভয়ংকর মারেন। আমার গা থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে।”

এর পর থেকে শুরু হয় খুনের হুমকি। “আমার বাবা আমায় বলেন, ওঁর বড় বড় জায়গায় জানোশোনা রয়েছে, ভাড়াটে খুনি দিয়ে বিরাটকে খুন করতে উনি পিছপা হবেন না।” শুভংকরের বয়ফ্রেন্ড বিরাট দে-র বয়স ২৯। তিনিও শুভংকরের কথা সমর্থন করলেন। জানালেন, “ওরা সোশাল মিডিয়ায় আমার উপর নজর রাখা শুরু করেন, আমাকে ফোন করে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করেন। কিছু গুণ্ডা আমাকে অনুসরণ করা শুরু করে। আমি চূড়ান্ত ভয়ের মধ্যে রয়েছি।” অভিযোগ, শুভংকরের বাবা-মা বিরাটের আধার কার্ডের কপিসহ ব্যক্তিগত কাগজপত্র নিয়ে নেন এবং বলেন, তাকে মামলায় ফাঁসানো হবে। শুভংকর বললেন, “এসব ঘটার আগে. আমি বিরাটের কাগজপত্র নিয়ে  আমার এক সম্পর্কিত ভাইকে দিয়েছিলাম, ও বলেছিল ও একটা চাকরির ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করে দেবে। আমার সেই ভাই বিরাটের সব ডকুমেন্ট আমার বাবা মাকে দিয়ে দেয়। এখন ওঁরা সেগুলো কাজে লাগিয়ে হুমকি দিচ্ছেন।”

অভিযোগপত্র

ঘটনা আরও গড়ায়। শুভংকরের বাবা মায়ের অনুরোধে আসরে নামেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর চম্পক কুমার দাস। “আমার বাবা চম্পক দাসের ঘনিষ্ঠ। বাবা চাইছিলেন যাতে আমি ওঁদের কথা মত কাজ করি। কাউন্সিলর বাবাকে বলেন আমি বেপরোয়া হয়ে গেছি এবং ওঁদের উচিত ভেবে চিন্তে কাজ করা। ঘরে কিছু গুণ্ডাও ছিল, যে কারণে আমরা বেশি কথা বলতে পারিনি।”

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইনের তরফে তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর চম্পক কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তিনি বলেন, “আমি ওর বাবাকে শুধু বলেছি, ওঁর ছেলে স্বাভাবিক নয়, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে না। তিনি সে কথা মেনেও নিয়েছেন। আমাদের এলাকায় এরকম আরেকজন আছে। সে মেয়ে হয়ে ছেলেদের মত পোশাক পরে। তার বাবা-মাও খুব ভেঙে পড়েছেন। কিন্তু কী আর করা যাবে, সবাই তো একরকম হয় না।”

১৫ নভেম্বর শুভংকর স্থির করেন তিনি বাড়ি ছেড়ে ট্রান্সজেন্ডার সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিনহার বাড়িতে আশ্রয় নেবেন।

“ওরা আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল কিন্তু আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে ওর বাড়ি ছাড়ার অধিকার রয়েছে, আমিও ওকে আশ্রয় দিতে পারলে খুশি হব। খুনের হুমকির কারণে ও একটু ভয়ের মধ্যে রয়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যের যে ৩৭৭ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের এক বছর পরেও এরকম ঘটনা আমাদের দেশে ঘটে চলেছে। একবার ভাবুন যার বাবা-মা এরকম তার উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে যায়।” বললেন রঞ্জিতা।

১৭ নভেম্বর শুভংকর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বারাসাত থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বারাসাত থানার ওসির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। শুভংকরের বাবা গোপাল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমরা আদৌ ওকে মারধর করিনি। ওই ওর মাকে মেরেছে, যার জন্য ওর মায়ের সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছে।”

 

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Kolkata news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Kolkata gay man abused by parents complaint filed in police