Advertisment

বেড়েছে বরাত, আঁধার সরিয়ে আলোর দিশায় কুমোরটুলি

গতবছরের তুলনায় এবারের বাজার ভাল, এসেছে বড় ঠাকুরের বায়না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

চলছে শেষ পর্বের কাজ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

করোনা মহামারী অর্থনীতিকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। টান পড়েছে রুজি-রুটিতে। মার খেয়েছে কুমোর পাড়ার ব্যবসাও। তবে এর মধ্যেও যেন আঁধারে আশার আলো। গতবছরের তুলনায় এবারের বাজার ভাল, এসেছে বড় ঠাকুরের বায়না। তুলনায় বেশি বিগ্রহ পাড়ি দিয়েছে বিদেশে। ফলে স্বস্তিতে কুমোরটুলির শিল্পীরা।

Advertisment

আগের থেকে অর্ডারও এসেছে বেশি। বড় ঠাকুরের চাহিদাও বেড়েছে আগের বারের থেকে। তবে চাহিদা বাড়লেও ছয়, সাত ফুটের ঠাকুরের চাহিদা সবথেকে বেশি। এই ধরনের ঠাকুর বিকোচ্ছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যেই। অন্য দিকে গতবারের তৈরি ঠাকুরও এবারের পুজোর হাত ধরে বিক্রি হচ্ছে। স্বভাবতই খুশি কুমোরটুলির শিল্পীরা।

মহারাষ্ট্রের গণেশ পুজোর পর দুর্গাপুজোর মতো এত বড় মাপের ইন্ডাস্ট্রি ভূ-ভারতে নেই। লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে জড়িয়ে রয়েছে কম বেশি ২৫ লক্ষ মানুষের রুজি রোজগার। তার মধ্যে যেমন মৃৎশিল্পী আছেন, তেমনই আছেন থিম শিল্পী, ডেকরেটর, প্রতিমা বাহক, আলোক শিল্পী আরও অনেকে। তাই পুজো ছোট করে হলে বড় অংশের রুজিরুটি যে কোপ পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

কুমোরটুলিতে বংশ পরম্পরায় ঠাকুর তৈরি করে চলেছেন শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পাল। তিনি এবারের পুজো প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "গত বছর করোনার আবহে বাজারে যে মন্দা ছিল তা কাটতে শুরু করেছে, সেই রেশ পড়েছে দুর্গাপুজাতেও। এবারে আমি আগের বছরের থেকে প্রায়, ১২ থেকে ১৫ টা প্রতিমার অর্ডার বেশি পেয়েছি। ১০ ফুট, ১২ ফুটের ঠাকুরের চাহিদা এবারে অনেক বেশি। বিদেশ থেকে কম হলেও ঠাকুরের অর্ডার এসেছে। যে ঠাকুরগুলি বিদেশে ইতিমধ্যেই পাড়ি দিয়েছে সেগুলি মুলত পাঁচ ফুটের মধ্যে। তবে বৃষ্টির মধ্যে কাজ করতে খুবই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।"

তিনি একা নন নিউ নর্মালে কমবেশি সকলেই আগের বারের থেকে বেশি অর্ডার পেয়েছেন। ঠাকুর তৈরির কাজও প্রায় শেষের দিকে। কুমোরটুলির অপর এক শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পাল তাঁর ঠাকুর তৈরিতে এনেছেন অভিনবত্বের ছোঁয়া। অসুরের ভুমিকায় দেখা মিলবে করোনার ডেল্টা প্রজাতিকে। তাঁর কথায়, "এবারের বাজার গত বছরের থেকে বেশ ভাল। অর্ডারও পেয়েছি আগের বারের থেকে বেশি। তবে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ যে ঠাকুর আনতে কুমোরটুলিতে আসেন, করোনা এবং লকডাউনের ফলে তারা আসতে না পারার ফলে ব্যবসা কিছুটা মার খেয়েছে।"

আরও পড়ুন: প্রবল বৃষ্টিতে নষ্ট অনেক তৈরি প্রতিমাও, মাথায় হাত কুমোরটুলির শিল্পীদের

পুজোর ১০০ দিন বাকি থাকতেও কপালে একরাশ চিন্তার ভাজ নিয়ে বসে ছিলেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। কী হবে তা তাঁদের জানা ছিল না, করোনাকালে পুজোর জন্য পরিচিত ক্লাবে কোথাও অক্সিজেন পার্লার, কোথাও সেফ হোমের ব্যবস্থা। অনেক বড় পুজো কমিটিগুলি বাজেটে অনেক কাটছাঁট করেছে। ফলে গত বছরের মতো আশঙ্কার মেঘ দানা বেঁধেছিল কুমোরটুলির শিল্পীদের মনে। তবে দিন যত এগিয়েছে অর্ডারের সংখ্যাও বেড়েছে। তাই কুমোরটুলির চেনা ব্যস্ততা যেন আবারও ফিরে এসেছে। হাঁসি ফুটেছে শিল্পীদের মুখে। এপ্রসঙ্গে শিল্পী মালা পাল বলেন, "বড় ঠাকুর সেভাবে অর্ডার না পেলেও ১২ ইঞ্চি, ১৬ ইঞ্চি, ৩০ ইঞ্চি ঠাকুরের প্রচুর অর্ডার এসেছে, সেই সঙ্গে ছয় সাত ফুটের এলচালা ঠাকুরের চাহিদাও এবারে নেহাত কম নয়।"

প্রশান্ত পালের স্টুডিও ভর্তি শুধুই ফাইবারের দুর্গা। দেখেই বোঝা যায় বিলেত পাঠানোর প্রতিমা। “সিঙ্গাপুরের ঠাকুর কিছু পরে গেলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু আরও লং জার্নি যাদের ভেনেজুয়েলা, অস্ট্রেলিয়ায় তারা পাড়ি দিচ্ছেন এখনই,” জানালেন প্রশান্ত। প্রশান্ত পালের দুর্গা গতবার বিদেশে গিয়েছে ৪টে। এবার বেড়ে ৬টা। তার মধ্যে লন্ডন, ভেনেজুয়েলা, নেদারল্যান্ড আছে। তার কথায়, “বাইরের দেশে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তাই তাঁরা পুজোর কথা ভাবছেন।”

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

durga puja 2021 Kumartuli
Advertisment