বায়ুদূষণ রুখতে এবারের কালীপুজোয় বদলে যাচ্ছে বাজিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনে শহরে নিয়ে আসা হয়েছে 'সবুজ আতসবাজি'। যার নিক্ষেপ দূরত্ব কম, এবং শব্দও নির্ধারিত সীমার মধ্যে। কালীপুজো ও দীপাবলির পর বাতাসে দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি থাকে যে ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে যায় ভারতের প্রধান শহরগুলি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গতবছর দেশ জুড়ে আতসবাজি পোড়ানোর ওপর কিছু নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বদল করতে জোর দেন বাজি প্রস্তুতকারকরা। অবশেষে, শীর্ষ আদালতের তরফে স্রেফ রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত বাজি পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদিও গতবছর অসংখ্য ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয় এই নির্দেশ।
গতবছর কালীপুজো এবং দীপাবলির দিন-রাত কার্যত বেআব্রু করে দিয়ে গিয়েছিল এই শহরকেও। তীব্রতার নিরিখে বাজি পোড়ানোর মাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় নিশ্চিতভাবে কম হলেও, সুপ্রিম কোর্টের সময়সীমার নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিঃসীম ঔদ্ধত্য সহকারে ফেটেছিল চকলেট বোমা-দোদোমা-পটকা। কিন্তু এমনটা যে আর হতে দেওয়া যাবে না, সেকথা ক্রমশ বুঝছেন অনেকেই। এবার পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে তাই অভিনব পদক্ষেপ নিলেন বাজি নির্মাতাদের। বদলে দেওয়া হলো বাজির রাসায়নিক উপাদান।
আরও পড়ুন: ময়দানে ফিরে এল বাজি বাজার
এবছর কি কলকাতা দেখবে 'গ্রিন দেওয়ালি'?
বাজি নির্মাতা সন্দীপ বোস বলেন, "এবছর থেকে বাজিতে থাকবে বেরিয়াম নাইট্রেট। যার ফলে ধোঁয়ার পরিমাণ একেবারেই কমে যাবে। বেরিয়াম পোড়ার পর অত্যাধিক মাত্রায় ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। গ্রীন ট্রাইব্যুনালের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বেরিয়াম নাইট্রেট ব্যবহারের ফলে কমে গেছে ধোঁয়ার মাত্রা। কিন্তু বাড়ছে খরচ। যা শুধু বেরিয়ামের ক্ষেত্রে হতো না। কাজেই বাজির দাম সামান্য বাড়ানো হয়েছে"।
তিনি আরও বলেন, "আগে বাজি তৈরিতে কাঠকয়লা ব্যবহার করা হতো। বর্ষা পড়লে যা নষ্ট হয়ে যেত। তাই তার বদলে ব্যবহার করা হচ্ছিল বেরিয়াম সল্ট। এটা পোড়ার পর বেরিয়াম পেরক্সাইড তৈরি হয়। সাদা ধোঁয়া বা উজ্জ্বল ভাব আনে বেরিয়াম। আদালত পিভিসি (পলিভিনাইল ক্লোরাইড) নিষিদ্ধ করেনি, তাই বেরিয়াম কমিয়ে পিভিসি দেওয়া হচ্ছে। তাতে ধোঁয়া কম হবে, আবার আলো খুব উজ্জ্বল হবে।"
পরিবেশ রক্ষার কাজ কতটা হবে, তা জানতে অপেক্ষা আরও দিন পাঁচেকের।