কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সাজ সাজ রব। বাংলায় প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে প্লাজমা থেরাপির জন্য প্রস্তুত এশিয়ার প্রাচীনতম মেডিক্যাল কলেজ। প্লাজমা থেরাপি শুরু করার জন্য ইতিমধ্যে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতিও পৌঁছে গিয়েছে। সোমবারই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ শুরু করল প্লাজমা গ্রহণ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এদিনই ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ করোনা-মুক্ত দুই দাতার শরীর থেকে প্লাজমা গ্রহণ করেছে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ট্রান্সফিউশনের অধ্যাপক ডাঃ প্রসূন ভট্টাচার্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "সোমবার থেকে আমরা প্লাজমা গ্রহণ শুরু করেছি। আগামীকাল আরও দুজনের শরীর থেকে প্লাজমা নেওয়া হবে"। পরীক্ষামূলক প্লাজমা থেরাপির কাজ কবে শুরু হবে? ডা: প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, "ঝড় বৃষ্টির জন্য দিন দুয়েক কোনো কাজ সেভাবে এগোবে না। দাতাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে না। আশা করছি, দাতা ঠিকঠাক পাওয়া গেলে এই সপ্তাহ থেকেই কোভিড-আক্রান্ত রোগীদের উপর প্লাজমা চিকিৎসা শুরু করতে পারব।" তবে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের আইসোলেশন ওয়ার্ডের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, "এখনও প্লাজমা থেরাপি শুরু হওয়ার কোনো খবর আসেনি। অনেক রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। যত তাড়াতাড়ি এই চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু করা যায়, ততই ভালো।"
জানা যাচ্ছে, রক্তদাতা নির্বাচনে বেশ কিছু পরীক্ষা রয়েছে। সেই পরীক্ষার পর যদি দেখা যায়, রক্তদাতারা সক্ষম এবং পরীক্ষার ফলাফল সঠিক, তাহলেই প্লাজমা গ্রহণ করা হবে। যন্ত্র মারফত সংগ্রহণ করা হবে। মেশিনে রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা হয়ে যায়। সেই রক্ত পুনরায় রোগীর শরীরে ফিরে যাবে। ফলে দাতার শরীরে রক্তের অভাব হতে পারে, সেই সমস্যা হবে না। বরং জল খেলেই সেই শূন্যতা পূরণ হয়ে যাবে। সাধারণত রক্ত দিতে যদি দশ মিনিট সময় লাগে, তবে এ ক্ষেত্রে সময় লাগছে ঘণ্টাখানেক।
ডাঃ ভট্টাচার্য আরও বলেন, "করোনা-মুক্ত শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেই অ্যান্টিবডি সবচেয়ে বেশি থাকে রক্তরসে (প্লাজমা) অর্থাৎ রক্তের জলীয়পদার্থের মধ্যে। তাই সুস্থ হয়ে ওঠার ২৮ দিন পর রোগীর দেহ থেকে সংগ্রহ করা হবে প্লাজমা। তবে এক্ষেত্রে আইসিএমআর-এর নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে কাজ করতে হচ্ছে। অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা করোনায় আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীকেও করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে। মেডিক্যাল কলেজের তরফে ইচ্ছুক দাতাদের বাড়ি থেকে সমস্ত রকম সুরক্ষা দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। সমস্ত রকম পরীক্ষা করে প্লাজমা সংরক্ষণ করার পর দাতাকে ফের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।"
পূর্ত দফতর ইতিমধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্রিন বিল্ডিং-এ ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লাজমা গ্রহণের জন্য নতুন ওয়ার্ড নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।