Advertisment

ওমিক্রন আতঙ্ক দূরে সরিয়ে, বড়দিনের সকালে পার্কস্ট্রিট থেকে চিড়িয়াখানা সর্বত্রই যেন উৎসবের আমেজ

শুধু চিড়িয়াখানা নয়, বড়দিন মানে সারাদিনের প্ল্যানিং, বড়দিনের সকাল থেকেই ভিড় জমে উঠেছে ইকোপার্ক, নিকোপার্ক, পার্কস্ট্রিট, নিউমার্কেট চত্ত্বরে।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
NULL

বড়দিনের সকালে উৎসবের আমেজে মহানগরী। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

বড়দিন (Christmas) মানেই ছুটির মেজাজ, বড়দিন মানেই সুস্বাদু কেকে কামড় আর অবশ্যই পরিবার বন্ধুবান্ধব কচিকাঁচাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় ভ্রমণ। বলতে গেলে একাংশের কাছে বড়দিনে এটাই যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু চিড়িয়াখানা নয়, বড়দিন মানে সারাদিনের প্ল্যানিং, বড়দিনের সকাল থেকেই ভিড় জমে উঠেছে ইকোপার্ক, নিকোপার্ক, পার্কস্ট্রিট, নিউমার্কেট এলাকা। একেবারে খাবার দাবার নিয়ে সকাল সকাল চলে যাওয়া। পিকনিকের মেজাজে গোটা দিনটা কাটিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা।

Advertisment

বিগত বেশ কিছু বছর ধরে বড়দিনের দিন পিকনিকের মেজাজেই অভ্যস্ত শহরবাসী। তবে এই বছর করোনার (Corona) নয়া প্রজাতি ওমিক্রনের হানার কারণে অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতো বড়দিনের চিত্রটাও ভিন্ন। একইভাবে চিড়িয়াখানার ভিড়েও বিগত বছর গুলির তুলনায় দেখা গেল পার্থক্য। তবে তা সত্ত্বেও ভিড় যে একেবারেই কম হয়েছে তেমনটাও বলা যায় না। করোনা আতঙ্ককে উপেক্ষা করেই ঘর থেকে বেড়িয়েছেন অনেকেই।

চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর আশিসকুমার সামন্ত জানান, “গতবছর অনলাইনে ও অফলাইনে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ টিকিট বুক করেছেন। এবারে যেহেতু করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে তাই ভিড় গতবারের তুলনায় বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে”।

স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে করোনা আবহে সংক্রমণ ঠেকাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশিসবাবু জানান, “প্রতিদিন নিয়ম মাফিক সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। বিনা মাস্কে চিড়িয়াখানায় প্রবেশাধিকার নেই। এছাড়াও নিয়মিত সকাল ও সন্ধে চিড়িয়াখানা চত্বর জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে পুরোদমে”।

পাশাপাশি তিনি জানান, “চিড়িয়াখানার ভিতরে যদি কেউ মাস্ক ছাড়া থাকেন তবে তাঁকে তা পরে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে এবং চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচার”। ওয়াচ টাওয়ার সিসিটিভি ক্যামেরাতে চলছে নজরদারী”। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, কলকাতা পুলিশের তরফে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চিড়িয়াখানার বাইরে এবং ভিতরে মোতায়েন থাকছে পুলিশ” এক্ষেত্রে আগামী পয়লা জানুয়ারি সহ মরশুমের বাকি সময়টাতেও চিড়িয়াখানায় কমবেশি দর্শক সমাগম হবে বলেই মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে ওমিক্রন পরিস্থিতিতে কোন ঝুঁকি নিতে চাইছেন না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। 

এবারের চিড়িয়াখানার মূল আকর্ষণ কী?

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, ভারতবর্ষের সমস্ত চিড়িয়াখানার মধ্যে সবথেকে বেশি অ্যানাকোন্ডা রয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানাতেই। সংখ্যার ভিত্তিতে দেশের সমস্ত চিড়িয়াখানার মধ্যে এগিয়ে তারাই। গত ১১ জুলাই ৯টি অ্যানাকন্ডার জন্ম হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসে চেন্নাই থেকে আলিপুরে যে চারটি হলুদ অ্যানাকোন্ডা নিয়ে আসা হয়েছিল, প্রথম এক বছর পর তাদেরই আরও সাতটি অ্যানাকোন্ডার জন্ম হয়। সদ্যই চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি আসার পর এখন অ্যানাকোন্ডার সংখ্যা দাঁড়ালো মোট কুড়িটি। অন্যদিকে শিম্পাঞ্জি, বাঘ, হাতি, কুমিরের আকর্ষণ তো রয়েছেই।

এবার শীতে উপরি পাওনা সিংহ, জাগুয়ার, ইস্টার্ন গ্রে ক্যাঙারু। আজ, শনিবার সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়েছে চিড়িয়াখানা। সঙ্গে পিকনিক মুড। শীতের কলকাতায় চিড়িয়াখানার আকর্ষণ চির নতুন। বহুবার দেখেও যেন আশ মেটেনা। সেই ছোটবেলায় বাবা, মায়ের হাত ধরে বাঘ, সিংহ দেখতে আসার স্মৃতি যেন প্রতিবারই নতুন করে ফিরে আসে এখানে এলে।

ভিড় শুরু হয়েছিল আগে থেকেই। তবে বড়দিনে তা যেন বাঁধ ভাঙল। সকাল থেকেই চিড়িয়াখানার সামনে লম্বা লাইন। শিম্পাঞ্জি বাবু এবারও সুপারহিট। খেলা দেখাতে সবসময় রেডি সে। ভিড় বাঘ, হাতি দেখতেও। নতুন আসা অতিথিদের খুনসুঁটিতেও মন মজেছে অনেকের। জাঁকিয়ে শীত না পড়াতে মনখারাপ অনেকেরই তবে উৎসবে খামতি ছিল না কারোরই। ক্যাঙারু, সিংহ, জাগুয়ার, মাউস ডিয়ারদের সঙ্গে দিনভর কাটাতে ব্যস্ত সাত থেকে সত্তর সকলেই।

শুধুই পশুপাখি দেখা নয়। ঘোরাঘুরির ফাঁকে মাঠে বসে জমিয়ে পিকনিক। চিড়িয়াখানা ছাড়া এ আনন্দ আর কোথায়? বাড়ি থেকে খাবার এনে জমিয়ে ভোজ। মাঠেই একটু গড়িয়ে নেওয়া। মাঝে অবশ্য বাদ যায়নি খেলাধুলো।

আগড়পাড়া থেকে মা বাবা হাত ধরে চিড়িয়াখানা বেড়াতে এসেছে ছোট্ট সৃজা। তার কথায়, “সকাল বেলা টিফিন করেই বাবা, মা’র সঙ্গে চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছি, দারুণ মজা করেছি। শিম্পাঞ্জি, অ্যালিগেটর তার প্রথম পছন্দ। তবে বাঘ তার সব থেকে প্রিয়। অনেকে পাখি দেখেছে সে। সকলের সঙ্গে দারুণ ভাবেই উপভোগ করেছে আজকের এই দিনটা, এর সঙ্গেই প্ল্যানিং রয়েছে চিড়িয়াখানা থেকে পার্কস্ট্রিট ঘুরে বাড়ি ফেরার”।

publive-image
সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়ছে চিড়িয়াখানায়, তবে অনেকেই ছিলেন মাস্কহীন। নিজস্ব চিত্র

চিড়িয়াখানার পাশাপাশি সকাল থেকেই উৎসবের মেজাজে পার্কস্ট্রিট। বড়দিন উপলক্ষে সেজে উঠেছে পার্কস্ট্রিট। অন্যান্য বারের মতই, ভিড় উপচে পড়ছে পার্কস্ট্রিটের রাস্তায়। পার্কস্ট্রিটের বড়দিনে জায়গা করে নেয় ডাক ভিন্দালু, পিজ পোলাও, ইয়েলো রাইস, কোপ্তা মালাইকারি, চিকেন বা টার্কি রোস্ট, সল্ট মিট, রোজ-কুকিজ ও কুলকুলসের মতো আরও নানা পছন্দের পদ। ক্রিসমাসের কেকের বিভিন্ন স্বাদের সঙ্গে এইসব পদও আলাদা করে তৃপ্তি দেয় বড়দিনে।বড়দিনে কলকাতার হৃদস্পন্দন হল পার্কস্ট্রিট। কলকাতার ক্রিসমাস পার্কস্ট্রিটকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই সুসজ্জিত হয়ে ওঠে পার্কস্ট্রিট। ক্রিসমাস কার্নিভালে অন্য রূপ পায় পার্কস্ট্রিট। ডিসেম্বর জুড়েই শীতকালীন কলকাতার নজর এই পার্কস্ট্রিটের দিকে। গোটা পার্কস্ট্রিট আলোকমালায় সেজে ওঠে। তার সঙ্গে ক্রিসমাস ট্রি অপরূপ শোভাদান করে।

পার্ক স্ট্রিটে ঝলমলে আলোর সঙ্গে এবার বাড়তি পাওনা পেল্লাই ক্রিসমাস ট্রি! বড় বলে বড়! একেবারে ৫৪ ফুট লম্বা! অ্যালেন পার্কের অদূরে, আলোয় সাজানো সেই বিশাল ক্রিসমাস ট্রি এখন স্বাগত জানাচ্ছে দর্শকদের। ক্রিসমাস ট্রি’র সঙ্গে হাজির সাত ফুটের সান্তা ক্লজ! সেই সঙ্গে সাত ফুট লম্বা এক পরী! দুজনের সামনে ঢালাও করে সাজানো রয়েছে উপহারের বাক্স! দর্শকদের জন্য ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে এই ক্রিসমাস ট্রি। শীত, সান্তার টুপি, বাহারি আলো থেকে কেক সবই আছে।

ওমিক্রন আতঙ্কে এবারও অ্যালেন পার্কের সামনে কোনও খাবারের স্টল বসবে না। তবে শুধু পার্কস্ট্রিট এবং চিড়িয়াখানা নয়। বড়দিনের আমেজে সেজে সকাল থেকেই সাজ সাজ রব গোটা কলকাতার। পার্কস্ট্রিট চিড়িয়াখানার পাশাপাশি, ইকোপার্ক থেকে শুরু করে নিকোপার্ক সর্বত্রই উপচে পড়ছে ভিড়। করোনা আতঙ্ককে দূরে সরিয়ে রেখে উৎসবের সবটুকু আনন্দ নিতে রাস্তায় নেমে পড়েছে কাতারে কাতারে মানুষ।

ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তেথাকুন

kolkata alipore zoo Christmas Festival Parkstreet
Advertisment