রাত পোহালেই বড়দিন। কলকাতা মেতে উঠবে বড়দিনের উৎসবে। ক্রিস্টমাস ডে পালন করতে গত কয়েকদিন ধরেই মানুষের ঢল মধ্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে। বুধবার থেকেই সেজে উঠেছে গোটা এলাকা। আলোর রোশনাই থেকে বাহারি গেট দেখতে অভ্যস্ত বাংলার মানুষ। গোটা রাস্তা ধরেই আলো দিয়ে সেজে উঠেছে পার্ক স্ট্রিট। আর বড়দিনের আগেই কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে। অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক। কারুর বা মাস্ক ঝুলছে থুতনিতে।
আলো ঝলমলে রাস্তা, রঙিন টুপির বাহার, ভিড়ের মধ্যেই রকমারি হরেক আওয়াজ জানান দিচ্ছে রাত পেরলেই বড়দিনের আনন্দে গা ভাসাবে সাধারণ মানুষ। আর তার আগের দিন মধ্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিট অন্যান্য বছরের মতোই সেজে উঠেছে আলোর রোশনাইয়ে। ভিড় উপচে পড়ছে রেস্তোরাঁ পানশালা গুলিতে। ওমিক্রন থাবাকে উপেক্ষা করেই কাতারে কাতারে মানুষ পথে নেমেছে।
পার্ক স্ট্রিটের ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল অবস্থা পুলিশ প্রশাসনের। বিকেল হতেই জমজমাট গোটা এলাকা। রঙ বাহারি পোশাকে সেজে সেলফি তোলার হিড়িক। মনে শঙ্কা নিয়েই, কোভিড বিধি মেনে বড়দিনের আনন্দে ভাসতে শুরু করেছে তিলোত্তমা। বড়দিনের পার্ক স্ট্রিটে ঝলমলে আলোর সঙ্গে এবার বাড়তি পাওনা পেল্লাই ক্রিসমাস ট্রি! বড় বলে বড়! একেবারে ৫৪ ফুট লম্বা! অ্যালেন পার্কের অদূরে, আলোয় সাজানো সেই বিশাল ক্রিসমাস ট্রি এখন স্বাগত জানাচ্ছে দর্শকদের।
ক্রিসমাস ট্রি’র সঙ্গে হাজির সাত ফুটের সান্টা ক্লজ! সেই সঙ্গে সাত ফুট লম্বা এক পরী! দুজনের সামনে ঢালাও করে সাজানো রয়েছে উপহারের বাক্স! দর্শকদের জন্য ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে এই ক্রিসমাস ট্রি। শীত, সান্তার টুপি, বাহারি আলো থেকে কেক সবই আছে।
আজ বিকেল থেকেই গোটা পার্ক স্ট্রিট এলাকা কার্যত মুড়ে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। পার্ক স্ট্রিট ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ৩ হাজার পুলিশ কর্মী। ৩টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে চলবে নজরদারি। থাকছে ১০টি পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র। মোতায়েন থাকবে ২টি কুইক রেসপন্স টিম। পাশাপাশি, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেও চলবে নজরদারি। নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে পার্ক স্ট্রিট মোড়ের কাছে থাকছে পুলিশের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম। এছাড়াও মহিলাদের সুরক্ষায় মোতায়েন থাকছেন কলকাতা পুলিশের বিশেষ মহিলা বাহিনী।
সেজে উঠেছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পার্ক স্ট্রিট। বড়দিন আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। বড়দিনের আমেজ যেন রাতের আলোয় ছড়িয়ে পড়ছে শহরজুড়ে। উৎসবের আগাম স্বাদ নিতে এরই মধ্যে বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন পার্কস্ট্রিটের আলোকসজ্জা দেখতে।
পার্ক স্ট্রিটে এ সময়টায় সাধারণত তিল ধারণের জায়গা থাকে না। উৎসব আনন্দে মেতে ওঠেন ছোট থেকে বড়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্ক, সেন্ট পলস ক্যার্থিডাল প্রতি বছরই সেজে ওঠে ২৫ ডিসেম্বরের অনেক আগে থেকেই। বড়দিনের অপেক্ষায় প্রহর গোনেন শহরবাসী। রংবাহারি আলোয় উৎসবের মেজাজে চিরকাল মেতে উঠতে ভালোবাসেন মহানগরবাসী। তবে কোভিড বিধি মেনে অ্যালেন পার্ক সংলগ্ন এলাকাতে এবারেও বসছে না কোনও খাবারের স্টল।
এখানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এই বছরের ক্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল। তবে গোটা অনুষ্ঠান হবে কোভিড বিধি মেনেই। ২০২২ সালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কলকাতার পার্ক স্ট্রিট। মানুষ আনন্দ–উৎসবে মেতে উঠবে এই দিনটিতে। গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন। তাঁর কথায়, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’
ওমিক্রন আতঙ্কে এবারও অ্যালেন পার্কের সামনে কোনও খাবারের স্টল বসবে না। অ্যালেন পার্ক থেকে লাইভ পারফরম্যান্স হবে। তবে সেখানে নিয়ন্ত্রণ করা হবে মানুষজনের। যেহেতু এখনও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আসেনি। তাই প্রত্যেকদিন আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠান হবে। এমনকি বিষয়টি ফেসবুক লাইভে দেখতে পারবেন সকলেই। তবে এদিন এত জমায়েত দেখে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ওমিক্রনের হাত ধরেই ভারতে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে WHO তার মঝেই বড়দিনের আগেই বেলাগাম ভিড় চিন্তায় কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
কলকাতার পাশাপাশি জেলায়ও বড়দিনের উৎসব করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে জেলা থেকে মানুষ এখানে এসে ভিড় না বাড়ান। প্রত্যেক জেলাতেই কিছু না কিছু আয়োজন করা হয়েছে। শীতের মরসুমে যাতে মানুষ উৎসবে মেতে উঠতে পারে তার জন্যই এই উদ্যোগ। একাধিক জেলায় শুরু হচ্ছে সাংস্কৃতিক আদান–প্রদানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের উৎসব। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদহ, পুরুলিয়া, হুগলি জেলাতেও পালিত হবে এই ক্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন