সারা বিশ্বে কলকাতাকে চেনানোর সহজতম উপায় সম্ভবত দুটি নির্মাণের ছবি - এক, হাওড়া ব্রিজ। দুই, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। সেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে এবার থেকে প্রতি শনি এবং রবিবার বিকেলে উপস্থিত থাকবে কলকাতা পুলিশের নিজস্ব ব্যান্ড, সপ্তাহ শেষের বিনোদনের বাড়তি রসদ হিসেবে। স্বাভাবিক নিয়মেই এই দুদিন সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় ভিক্টোরিয়ায়। অতএব মনোরঞ্জনের এই নতুন ভাবনা আনন্দ দেবে অনেককেই।
মূলত কলকাতার নয়া নগরপাল অনুজ শর্মার ভাবনাতেই শহরবাসী দেখবেন পুলিশ ব্যান্ডের এই নতুন রূপ। তাঁর কথায়, "কলকাতা পুলিশের পুরনো ঐতিহ্য কলকাতা পুলিশের ব্যান্ড। সাধারণত স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, এবং অন্যান্য সরকারি অনুষ্ঠানে শোনা যায় এই ব্যান্ড। পুলিশের জনসংযোগ বাড়াতেই এদের পারফরম্যান্স জনসাধারণ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবি। এখনও পরীক্ষামূলক এই ভাবনা। আপাতত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে নর্থ গেটেই উইকেন্ডে সবাই শুনতে পাবেন আমাদের ব্যান্ড। পরবর্তীকালে শহরের অন্যান্য জায়গাতেও পারফর্ম করার ইচ্ছে রয়েছে আমাদের।"
১৮৬৫ সালে কলকাতার ব্যান্ডস্ট্যান্ড
উল্লেখ্য, অতীতের কলকাতায় রীতিমতো ব্যান্ডস্ট্যান্ড ছিল। তৎকালীন ইডেন গার্ডেনস (যে উদ্যানের নামে ক্রিকেট মাঠের নাম)-এর একাধিক দ্রষ্টব্যের মধ্যে ছিল এই ব্যান্ডস্ট্যান্ডও। অধিকাংশ সময়েই এখানে শোনা যেত মিলিটারি ব্যান্ডের বাজনা, যা শুনতে রোজ বিকেলে ভিড় জমাতেন গঙ্গার পাড়ের সান্ধ্য ভ্রমণকারীরা। ১৮৬৫ সালে অস্কার ম্যালিট নামে এক চিত্রগ্রাহক ছবি তোলেন এই ব্যান্ডস্ট্যান্ডের, যা আজও ঘোরে ইন্টারনেটে। তৎকালীন বড়লাট লর্ড অকল্যান্ডের দুই বোন এমিলি এবং ফ্যানি ইডেনের নামাঙ্কিত উদ্যানটি গড়ে ওঠে ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে।
ময়দানের মালিকানা ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে আসার পর কালক্রমে ব্যান্ডস্ট্যান্ড এবং সংলগ্ন এলাকা চলে যায় রাজ্য সরকারের হাতে। ঠিক কীভাবে এই হস্তান্তর ঘটে, তা স্পষ্ট নয়। অনেকের মতে এই এলাকাটি সাময়িকভাবে রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়, তবে সেই সময়ের মেয়াদ কতটা, তা জানা যায় না। সত্যিটা যাই হোক, আজ যে ব্যান্ডস্ট্যান্ড স্রেফ একটি নোংরা, দুর্গন্ধময়, কোলাহলপূর্ণ বাস স্ট্যান্ড ছাড়া আর কিছুই নয়, তা সকলেই জানেন। সম্ভবত কথা ছিল, স্থায়ী বাস স্ট্যান্ড তৈরি হবে অন্য কোথাও, এবং ততদিন এলাকাটি থাকবে রাজ্য সরকারের দখলে। কিন্তু তা হয়ে ওঠে নি আজ পর্যন্ত। আজ থেকে কয়েক দশক আগেও যেখানে নদীর পাড়ে বেড়াতে আসতেন শহরবাসী, সেই জায়গায় আজ পা ফেলাই দায়।
কলকাতা পুলিশের এই উদ্যোগে যদি তিলোত্তমা ফিরে পায় তার ব্যান্ডস্ট্যান্ড, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে?