কলকাতা পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ি বহু শহরবাসীর কাছেই পরিচিত। পার্ক স্ট্রিট-ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে আকছার দেখতে পাওয়া যায় এই গাড়ি। কিন্তু এবার সেই পরিচিত গাড়ির ভেতরে এবং বাইরে দেখা যাবে অপরিচিত কিছু মুখ। এঁরা হলেন কলকাতা পুলিশের নতুন মহিলা সদস্য, 'উইনার্স'-এর পর আরও একটি প্রমীলা বাহিনী, নাম 'ওয়ারিয়রর্স', হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল।
মঙ্গলবার সকালেই নগরপাল অনুজ শর্মার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করে এই বাহিনী। উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম কমিশনার (সশস্ত্র পুলিশ) প্রবীণ ত্রিপাঠি এবং ডিসি (কমব্যাট) নভেন্দর সিং পল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি নিযুক্ত ২০০ জন মহিলা কনস্টেবলের মধ্যে থেকে ৩০ জনকে বেছে নেওয়া হয় সন্ত্রাস দমন থেকে শুরু করে যে কোনও সশস্ত্র হামলার মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য। দু'মাস ধরে চলে এই প্রশিক্ষণে, যা চলাকালীন তাঁরা শিখেছেন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার, লড়াইয়ের কৌশল, বিনা অস্ত্রে খালি হাতে লড়াই করার প্রক্রিয়া, এবং সহ্যক্ষমতা অথবা 'এনডিউরান্স' বৃদ্ধি।
তবে নতুনত্বের অভিযানে বাদ পড়ছে না 'উইনার্স' বাহিনীও। যে বাহিনী গঠিত হয় গত বছরের জুলাই মাসে, মূলত শহরে ইভটিজিং বা মহিলাদের লক্ষ্য করে প্রকাশ্য অশ্লীলতার মতো অপরাধ ঠেকাতে। এবার বাড়ানো হয়েছে উইনার্স টিমের সদস্য সংখ্যা। শহরের রাস্তায় নামানো হয়েছে সাতটি ‘শক্তি’ ভ্যান, যেগুলি পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে সম্পূর্ণভাবে মহিলাদের হাতে।
এ ছাড়াও শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘উইনার্স’-এর নতুন সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ১০টি নতুন স্কুটার। নগরপাল অনুজ শর্মার বক্তব্য, কলকাতা পুলিশের ‘রেসপেক্ট উইমেন’ প্রকল্পের অধীনে এই গাড়িগুলি পথে নেমেছে।
এতেই শেষ নয়। বড়দিনে কলকাতার রাস্তাঘাটে মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কলকাতা পুলিশের জিপিএস-যুক্ত একাধিক গাড়ি রাস্তায় থাকবে। সোমবারই পথে নামে এই গাড়িগুলি। প্রতি বছরের মতোই পার্ক স্ট্রিট এলাকায় বিশেষ নজরদারি রাখছে পুলিশ।
জিপিএস সম্বলিত ২৭টি গাড়ি এবং ৪০টি মোটরবাইকের মধ্যে ২০টি গাড়ি বিভিন্ন ডিভিশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭টি গাড়ি থাকবে লালবাজার কন্ট্রোল রুমের অধীনে। বিপদে পড়ে কেউ ১০০ নম্বরে ফোন করলে লালবাজার থেকে এই গাড়িগুলিকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হবে।
বড়দিন উপলক্ষে শহরে আন্দাজ ১০০টি বিশেষ পিকেটের বন্দোবস্তও করেছে কলকাতা পুলিশ। প্রতিটি ডিভিশনের এসি, ডিসি এবং থানার ওসি-দের সংশ্লিষ্ট এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু করে দু’দিন ধরে বাড়তি নজরদারি রয়েছে একাধিক ধর্মীয় স্থান এবং শপিং মলগুলিতেও। শহরের প্রায় ৬০টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে থাকছে নাকা তল্লাশি। বিশেষ করে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কেউ গাড়ি চালালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।