পরনে সাদা উর্দি, পায়ে কালো বুট পাশেই রাখা বাইক।কলকাতা সাউথ ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ প্রকাশ ঘোষের মনোযোগ ছাত্রের হাতের লেখার দিকে। মাস তিন-চারেক আগে ট্রাফিক সার্জেন্ট প্রকাশ বাবুর ছবি রীতিমত ভাইরাল হয়েছিল নেটদুনিয়ায়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সেই ছবির এখনো বদল ঘটেনি। আজ শিক্ষক দিবস। এই শিক্ষক দিবসে গুরুমশায় রোজ নিয়ম করে ছাত্র আকাশ রাউৎকে কাজের ফাঁকে পড়াতে আসেন। আকাশের মা সুনিতা রাউৎ ফুটপাথেরই স্থানীয় একটি খাবারের দোকানেই কাজ করেন। মা ছেলে দুজনেরই ঠিকানা ফুটপাথেই। ছোটবেলায় আকাশের বাবা মারা যান।
Advertisment
স্থানীয় ট্রাফিক গার্ডে কাজ করার সুবাদে প্রকাশ ঘোষকে আগে থেকে চিনতেন আকাশের মা। ছেলের ভবিষৎ এবং পড়াশুনা নিয়ে একদিন জানিয়েছিলেন প্রকাশ বাবুকে। এরপর থেকে আকাশের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। কোনও কোনও দিন ট্রাফিক সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে, আবার কোনওদিন ডিউটি শেষ করেও আকাশকে পড়া দেখিয়ে দেন তিনি। শুধু পড়ানো নয়, রীতিমতো হোমওয়ার্ক দেওয়া এবং তা দেখে দেওয়া, বানান ভুল শুধরে দেওয়া, উচ্চারণ করে দেওয়া, এমনকি হাতের লেখা পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া, সবটাই করেন প্রকাশবাবু।
আকাশ বর্তমানে কোলকাতা কর্পোরেশনের সুন্দরীমোহন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। "আমিও বড় হয়ে স্যারের মতন পুলিশ হতে চাই। স্যার আমাকে রোজ পড়া দেখিয়ে দেয়। আমার ওনার কাছে পড়তে ভালো লাগে। আজ স্কুলে টিচার্স ডে ছিল। স্কুল শেষ করেই স্যারের কাছে পড়তে চলে এসেছি।" এক নাগাড়ে গড়গড় করে বলে যায় আকাশ। আকাশের মা সুনীতা দেবী বলেন, "ও ছোট থেকেই শান্ত , কিন্তু পড়াশুনায় তেমন একটা ভালো ছিলনা। প্রকাশ স্যার যখন থেকে ওর পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছে আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে । এরকম শিক্ষক অনেক ভাগ্য করে পাওয়া যায়। আজ শিক্ষক দিবস আমার জানা ছিল না। আমরা গরীব স্যারকে আমার দেওয়ার মতন তেমন কিছু নেই।"
সার্জেন্ট ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে বাইক নিয়ে রাস্তায় যানজট সামলানোর পাশাপাশি ঢুঁ মেরে দেখে যাচ্ছেন ছাত্রের পড়া। হাতের লেখায় ভুল হলে আদর করে দিচ্ছেন ধমকও। শিক্ষক দিবসের দিন কলকাতার রাস্তায় এমন দৃশ্যে দেখে অবাক হচ্ছেন পথচলতি মানুষ। কেউ আবার দাঁড়িয়ে কুর্ণিশ জানিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ গুরুমশায়কে।