দেশে করোনা সংক্রমণ রুখতে লকডাউনেই ভরসা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিকে দেশের মানুষের পাশাপাশি গৃহবন্দি হয়েছেন ভগবান। এতদিন যার কাছে সঙ্কটমোচনের জন্য অনুরোধ জানাতেন তিনি নিজেই বন্দি হওয়ায় ভয়ঙ্কর অর্থসঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছেন এ শহরেরই পুরোহিতরা।
আয় বলতে ঠাকুরের সেবা করে, দক্ষিণাতে দিন গুজরান হত পুরোহিতদের। মার্চ-এপ্রিল মাসে মন্দ হত না পসারও। পুজো অর্চনার পাশাপাশি চৈত্র সংক্রান্তি, নববর্ষ, বিয়ে এই দুই মাস এভাবেই বছরের পর বছর কাটিয়েছে। কিন্তু ২০২০-এর গেরো করোনা। লকডাউনে বন্ধ সমস্ত মন্দির, কূলদেবতার পুজোও নমো নমো করেই সারছেন বাড়ির লোকেরাই। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় পিছিয়েছে সমস্ত বিয়ের অনুষ্ঠানও। আর এতেই মাথায় হাত পুরোহিতদের।
বহু মানুষদের মতো এক ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক চিন্তায় রয়েছেন তাঁরাও। এ শহরেরই এক পুরোহিত গৌতম চক্রবর্তীর গলায় ধরা পড়ল সেই সুর। দীর্ঘ এক নি:শ্বাস ছেড়ে গৌতমবাবু বলেন, "যখন আমি প্রথম লকডাউনের বিষয়টি শুনি, মারাত্মক মুষড়ে পড়েছিলাম। আমরা সত্যিই এক মহাসঙ্কটে ভুগছি।" তবে পুরোহিতের পাশপাশি তিনি জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা করেন। তাই পরিবারের সকল দায়িত্ব কাঁধে নিয়েও সেই আয় থেকেই চলছে দিন। কিন্তু ভালো নেই বাকিরা। গৌতম চক্রবর্তী বলেন, আমারা যারা এই কাজ করি তাঁদের অনেকেই এই অবস্থায় রোজগারের জন্য অন্য পথ বেছেছেন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সনাতন ব্রাক্ষণ ট্রাস্ট কমিটির সদস্য প্রসেনজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, "অনেক পুরোহিতরাই এখন অন্য কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এখন তো পুজো করে আয় করা সম্ভব নয়। তবে যারা বহু বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। আর আমাদের তো কোনও ফিক্সড রেট নেই। তাই এখন এক গভীর আর্থিক সংকটে রয়েছি।"
লকডাউনে নিজেদের জীবন বর্ণনা করতে গিয়ে যাদবপুরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব জগন্নাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই মুহুর্তে আমাদের আর কিছুই করার নেই। আমি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতাম। অবসর নেওয়ার পর পুরোহিতের কাজ শুরু করি। আমার পেনসনের টাকা দিয়েই ছেলের পড়ার খরচ চালাচ্ছি। কিছু টাকা বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে এখন। কোনও উপার্জন তো নেই। একবেলা খেয়েই দিন কাটাচ্ছি আমি।"
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন