বাড়ছে ওমিক্রনের প্রকোপ। এবার করোনা আক্রান্ত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই তোলপাড় বিশ্ব। করোনার শিকার হয়ে আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে আপাতত তার অবস্থা স্থিতিশীল। সৌরভের শরীরের মৃদু উপসর্গ রয়েছে। এদিকে সৌরভ করোনা আক্রান্ত হলেও স্ত্রী ডোনা এবং মেয়ে সানার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ।
সৌরভের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের তরফে বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সেই বোর্ডে রয়েছেন চিকিৎসক সরোজ মন্ডল, সপ্তর্ষি বসু এবং সৌতিক পান্ডা। বলা হয়েছে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের চিকিৎসার জন্য ককটেল থেরাপি প্রয়োগ করা হচ্ছে। উচ্চরক্তচাপের সমস্যা রয়েছে মহারাজের। এর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সোমবার রাতে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ককটেল থেরাপি দেওয়া হয়। কী এই ককটেল থেরাপি?
আরও পড়ুন: মা কালী, রক্ষা করো দাদাকে! সৌরভের অসুস্থতায় দিনভর প্রার্থনায় গোটা দেশ
এর আগে শরীরের অ্যান্টিবডি ককটেল প্রয়োগ করে সুস্থ করে তোলা হয়েছিল আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। সেই পদ্ধতিতেই এ বার করোনা চিকিৎসা হচ্ছে মহারাজের। বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট, ডাক্তার অমিতাভ নন্দীর কথায়, সাধারণত অতিসঙ্কটজনক রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি ককটেল থেরাপি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে মৃত্যু সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ কমে যেতে পারে। ক্যাসিরিভিমাব এবং ইমডেভিমাব ওষুধ দিয়ে তৈরি হয় এই ককটেল। ক্যাসিরিভিমাব এবং ইমডেভিমাব হল ইমিউনোগ্লোবিন জি-১ মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিজ। শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার উপকরণ যোগায় এই সংমিশ্রণ। এই ককটেল মূলত করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকেই নিশানা কোষে ঢুকতে বাধা দেয়।
আদের ক্ষেত্রে এই ককটেল থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে, ডাক্তার নন্দী জানিয়েছেন, হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গের কোভিড রোগী, অক্সিজেন সাপোর্টে নেই অথচ অক্সিজেন দরকার, এমন রোগী, যাঁদের কোমর্বিডিটি আছে, যাঁদের বয়স ১২ বছরের বেশি এবং ওজন ৪০ কেজির বেশি, এমন যে কোনও ব্যক্তিকেই এই ককটেল দেওয়া যাবে।
সৌরভের ক্ষেত্রে কেন ককটেল থেরাপি?
এই মুহূর্তে সৌরভ করোনা আক্রান্ত। এর আগে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস রয়েছে তাঁর অন্যদিকে তিনি একজন উচ্চরক্তচাপের রোগী। তার আগাম সতর্কতা হিসাবে ককটেল থেরাপি প্রয়োগ করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে ঝুঁকি না বাড়ে। এবং কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় সেরে ওঠার পরও রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে সেহেতু ককটেল থেরাপি সৌরভের জন্য সময়োপযোগী এবং নিরাপদ বলেই মনে করছেন ডাক্তার নন্দী।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় সৌরভকে এবার ককটেল থেরাপি! শোনা হচ্ছে দেবী শেঠির পরামর্শও
কীভাবে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা, ডাক্তার নন্দী জানান, ইনফিউশন পাম্প বা স্যালাইনের বোতলে ৬০০ মিলিগ্রাম করে ক্যাসিরিভিমাব এবং ইমডেভিমাব মিশিয়ে রোগীকে দেওয়া হয়। ওই সংমিশ্রণ সাধারণত ২-৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখা হয়। ঘণ্টাখানেক চলে এই থেরাপি। তার পর পর্যবেক্ষণে রাখা হয় রোগীকে। অ্যান্টিবডি ককটেলের থেরাপিতে একটি ইঞ্জেকশনের খরচ ৬০ হাজার টাকা। তবে ডাক্তার নন্দী জানিয়েছেন, প্রতিটি ফাইলে দুটি করে ইঞ্জেকশন থাকে তা অনেকক্ষেত্রে রোগীদের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু দুটি ফাইল কিনতে হয়, সিঙ্গেল ফাইল এখনও পর্যন্ত উপলব্ধ নয়।
তবে কী করোনা চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত হতে চলেছে এই কক্টেল থেরাপি? এবিষয়ে ডাক্তার নন্দী বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে রোজই নতুন ধরণের পদ্ধতি আবিষ্কার হচ্ছে, তবে করোনা চিকিৎসায় ককটেল থেরাপিতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। কাজেই ককটেল থেরাপি যে করোনা চিকিৎসার নয়া দিক উন্মোচিত করছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মঙ্গলবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে এখনও পর্যন্ত কোভিডের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫৩ জন। ২১টি রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ পেরিয়ে গেল। একদিনে ১৩৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হলেন করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে। সোমবার করোনার নতুন স্ট্রেনে ছড়িয়েছে মণিপুর ও গোয়ায় । পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন।