সারাদিনে কম করে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস স্টপে অপেক্ষা করেন নিজের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য। দিনের হাজার ব্যস্ততার মধ্যে ১০/১৫ মিনিট সময় কিন্তু বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েই কেটে যায়। একজন মানুষ সেই নির্দিষ্ট সময়টুকু কী করেন? কেউ বলবেন মোবাইল ঘাঁটেন আবার কেউ বলবেন বই পড়েন কিংবা খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নেন। এবার তাদের স্বার্থেই ফের এক উদ্যোগ নিতে চলেছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বাসিন্দা সমাজকর্মী তৌসিফ রহমান। বাস স্ট্যান্ডে বই, আর্টকেল রাখতে চলেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, মানুষকে যদি একটু হলেও বইয়ের মধ্যে ঠেলে দেওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কী?
এর আগেও, গরমের দিনে পিপাসা মেটানোয় এক অনবদ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তৌসিফ। মাঝ রাস্তায় আস্ত একটা ফ্রিজ দাঁড় করিয়েছিলেন, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পানীয় জলের ব্যাবস্থা করেছিলেন। এবার একটু অন্যধরনের চিন্তাভাবনা। বললেন, "সার্ভে করে দেখেছি কম করে ৭৫% মানুষ বাস স্টপে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোন কিংবা গ্যাজেট থেকে বই পড়েন। তাই তাঁদের জন্যই এটা করা। মোবাইলের থেকে তো আশা করছি ভালই। অনেকেই রয়েছে, এই মোবাইলে মুখ গুঁজে হাঁটতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েন। অ্যালুমিনিয়ামের পেটি বানাতে দিয়েছি, যাতে বৃষ্টি হলেও সমস্যা না হয়, বই ভিজে না যায়"।
শুধু বই? একেবারেই না, তার সঙ্গে থাকবে বাছাই করা সংবাদপত্র। বেশ কিছু নিউজ আর্টিকেল, এমনকি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এমন কিছু মানুষের ছোট গল্প, কবিতা কিংবা ২/৩ পাতার গল্প। অবশ্যই রবি ঠাকুর, নজরুল ইসলামের লেখা থাকবে। তৌসিফ বলেন, "রবি ঠাকুর আমাদের গর্ব - উনার লেখা না রাখলে হয়। তারপর ধরুন, বাংলার বেশ কিছু বিখ্যাত মানুষ। এই যেমন নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায়, মানুষকে অনুপ্রাণিত করবেন যারা। কলকাতার ইতিহাস, এর হেরিটেজ, সংস্কৃতি বিষয়ক অনুগল্প থাকবে। বাংলা, উর্দু, ইংরেজি ভাষা মিলিয়ে- আপাতত ১৫/২০টি বই রাখার চেষ্টা করা হবে"।
আরও পড়ুন তীব্র গরমে তেষ্টা মেটাবে ঠান্ডা জল, রাস্তার ধারে ফ্রিজ বসালেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের তৌসিফ
আপাতত আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কিংবা জোড়া গির্জায় থাকবে এই ব্যবস্থা। শহরের আর কোথাও কি পরিকল্পনা রয়েছে? তৌসিফ জবাবে বলেন, "আমার এই কাজ যদি সফল হয়, দিনের মধ্যে ৪/৫ জন মানুষও যদি বই পড়েন, নিজেকে ধন্য মনে করব। কিন্তু রাস্তার ধারে ফ্রিজ রাখার সঙ্গে বাস স্টপে বই রাখা - দুটির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমি নিশ্চয়ই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে এই নিয়ে তখন আলোচনা করতে চাই। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে রয়েছে। উনিও শহর কলকাতাকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবেন, ভাল কাজ করেন। ওঁর যদি কোনও নতুন ভাবনা থাকে, সরকারের সাহায্য পাই, তবে অন্যান্য বাস স্টপেও এই কাজ আমরা শুরু করব - কারণ বাস স্টপ সরকারেরও জায়গা"।
তৌসিফ আশা করছেন সফল হবেন। তাঁর বক্তব্য, "এর আগেও তো অনেক কিছু শুনেছি। যে চুরি হয়ে যাবে, মানুষ আমায় পাগল বলবে। কিন্তু কাজ থামিয়ে রাখলে তো হবে না। মাথায় রাখতে হবে, যেন মানুষের মঙ্গল হয়। ওইভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। এবার দেখা যাক, মানুষ কতটা আমায় সহযোগিতা করেন"।