/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/06/cats-254.jpg)
কলকাতার কাবাব বিপ্লব অবশ্যই দেবাংশুর মত অনেকেই সাফল্যের পথ দেখিয়েছে।
ওয়াজিদ আলি শাহের সময় থেকে কাবাব কলকাতার বুকে রাজ করেছে। সেই সময় শহরের হাতে গোনা কয়েকটি হেঁশেলের মধ্যেই কাবাব সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে খানা-পিনার প্রতি মানুষজনের ‘প্যাশন’ যখন একটু অন্য ধাঁচে গিয়ে পৌঁছায় তখন থেকেই শুরু হয়েছে কাবাব বিল্পব। শহরের রাজপথ থেকে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ আজ সবেতেই কাবাবিয়ানা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খোশমেজাজে আড্ডার মাঝে কাবাবে কামড়ের মজাটা যেন অনেকটাই আলাদা।
আজকের দিনে রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে প্রাইভেট পার্টি সর্বত্রই কাবাবের দাপট অব্যাহত। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় শুরু হয়েছে ‘কাবাব বিল্পব’। দমদমের বাসিন্দা শুভদীপ মুখার্জির হাত ধরেই শুরু হয় এই বিল্পব। প্রথম কার্টে কাবাব নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে তা শহরের রাস্তায় নিয়ে আসেন তিনি। এরপর থেকে বহু মানুষ নানান সময়ে কার্টে কাবাব বিক্রির সাহস দেখিয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কাবাব কার্টের সাফল্যে চাকরি ছেড়ে শুভদীপকে কাবাব বিপ্লবে সামিল হওয়ার শক্তি জুগিয়েছে। এক বন্ধুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি প্রথম ফুড ভ্যান চালু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তার এই সাফল্য আরও অনেক তরুণ স্টার্ট আপদের কাবাব ব্যবসায়ের আগ্রহী করে তোলেন। তাদের মধ্যেই অন্যতম অরিজিৎ শেঠ।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/06/cats-255.jpg)
ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে তিনি কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটে শুরু করেন তার ফুড কার্ট। স্কুটারকে কার্টে পরিণত করে গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের ব্যবসা। তবে ফিউশন কাবাবের অন্যতম সেরা রোস্টেড কার্টের দেবাংশু। কর্পোরেটে ঠাণ্ডা ঘরে নিজেকে লুকিয়ে না রেখে গনগনে আঁচে হাত পুড়িয়ে রাস্তার ধারে কাবাব বিক্রির এই জার্নিটা কিন্তু দেবাংশুর কাছে মোটেও সহজ ছিল না। স্ত্রী সরকারি চাকরি করেন। বরাবরই দেবাশুর সব কাজেই উৎসাহ জুগিয়েছেন তিনি। তাই দেবাংশু যখন প্রথম কাবাব কার্টের কথা স্ত্রীকে জানান, সেভাবে আপত্তি আসেনি। দেবাংশু বলেন, ‘যেহেতু স্ত্রী সরকারি চাকরি করেন তাই আমার নিজের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিটা অনেকটাই সহজ ছিল। যেহেতু ইভেন্টের একাধিক দায়িত্ব সামলেছেন তাই মানুষের সঙ্গে কথা সহজেই মিশতে পারেন তিনি। তার সেই সাবলীল ভঙ্গি কাজে আসে ব্যবসায়েও’।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/06/cats-256.jpg)
প্রথম যখন ব্যবসা শুরু করেন কেবল টিক্কা কাবাব আর মাত্র গুটি কয়েক কাবারের মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রেখেছিলেন দেবাংশু। তবে তাতে গ্রাহকরা তাকে নিরাশ করেন নি। দেবাংশু হাতের জাদু চেটেপুটে উপভোগ করতে রোজই কলেজ পড়ুয়া থেকে অফিসযাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকত তার কার্টের সামনে। ধীরে ধীরে নিজের সৃজনশীলতায় গ্রাহকদের মন কেড়ে আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রোস্টেড কার্টের দেবাংশু।
অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে দেবাংশু জানান, ‘আমার এই জনপ্রিয়তার পিছনে আমার ইউটিউবার বন্ধুদের অবদান নেহাতই কম নয়। এমন অনেক ভ্লগার আমার স্টলে এসেছেন যারা দিল্লি বা মুম্বইয়ে থাকেন। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকেও ভ্লগাররা আমাকে নিয়ে তাদের ভ্লগ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আমি খুব সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাই। তা ছাড়া গ্রাহকদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কও আমাকে আমার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এমনও সময় গিয়েছে যখন আমি নিজে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি অর্ডার করা খাবার ডেলিভারি করতাম। তবে আজ সকলের ভালবাসায় অনেকটা পথ এগিয়েছি। আরও অনেকটা জার্নি এখনও বাকী’।
দক্ষিণ কলকাতায় রোস্টেড কার্টের অভূতপূর্ব খ্যাতি অন্যদের অনুপ্রাণিত করেছিল কাবাব ব্যবসার প্রতি। দেবাংশু লক্ষ্য করেছিলেন যে যদিও কাবাবগুলি অভিজাত পার্টির মেনুতে একটি জনপ্রিয় আইটেম, তবুও এটি সকলের পছন্দের। তাই, তিনি কসবার বোসেপুকুরের কাছে রোস্টেড কার্ট শুরু করেন, যাতে সবার কাছে সুস্বাদু খাবারটি আনা হয়। তার সেই উদ্যোগটি এখন রীতিমত হিট। কাবাব নিয়ে রীতিমত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে ফিউশন কাবাবেও সকলের মন জয় করেছেন তিনি। তার জনপ্রিয়তা তাকে নিউ গড়িয়ার কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের কাছে দ্বিতীয় কার্ট স্থাপনে অনুপ্রাণিত করে। কলকাতার কাবাব বিপ্লব অবশ্যই দেবাংশুর মত অনেকেই সাফল্যের পথ দেখিয়েছে। "কাবাব-অন-হুইলস"এর ধারাবাহিক সাফল্য আগামীদিনেও অব্যাহত থাকবে বলেই আশা।