হাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। বাড়িতে তুলে রাখতে হবে ২১ দিনের মুদিসদাই ও বাজার। ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণার পরই দোকানে গিয়ে লাইন দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। মারণ করোনাভাইরাসের হানায় দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্য়া। এই পরিস্থিতিতে আজ রাত ১২ টা থেকে আগামী ৩ সপ্তাহের জন্য় (১৪ এপ্রিল পর্যন্ত) সারা দেশ লকডাউন করা হচ্ছে, জাতির উদ্দেশে ভাষণে ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দেশবাসীকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ ছাড়া আর উপায় ছিল না। এটা একধরনের কার্ফু। দয়া করে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না, যাই হয়ে যাক।"
তবে লকডাউনের বাইরে রাখা হয়েছে সমস্ত জরুরি পরিষেবা। এবং অত্যাবশকীয় পণ্য পাওয়া যাবে বলেও জানিয়েছেন মোদী। কিন্তু যেহেতু আজ রাতের পর অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোনোর ওপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, সে কারণে দোকানে দোকানে থলে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন সাধারণ মানুষ। উপচে পড়ছে ভিড়। খাবার মজুত রাখতে হবে। সরকারিভাবে ঘোষণা করলেও সাবধান থাকতে চান মানুষ।
দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বিনয় ঘোষ ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, "কখন কী সিদ্ধান্ত নেবে জানা নেই। বারোটার আগে প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।" আরেক ক্রেতা কমলা গুপ্ত বলেন, "স্বামী দিন এনে দিন খায়। কী করে পারব ২১ দিনের বাজার তুলে রাখতে? যতটা টাকা ছিল বাড়িতে, তাই দিয়ে বাজার করছি।"
আরও পড়ুন: লকডাউন ইন্ডিয়া: কী করতে পারবেন, কী পারবেন না
দোকানে দোকানে ঘুরে দেখা গেল, পর্যাপ্ত আলু নেই। আলমবাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, "অনেকেই গত কয়েকদিন ধরে বেশি করে বাজার করে রাখছে। এদিকে টান্সপোর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত মাল আসতে পারেনি। তাহলে কীভাবে যোগান দেওয়া সম্ভব? কাল সকালে দোকান খোলা যাবে না বলেই মনে করছি।" একই সুর আলমবাজারের এক দোকানদারের কথায়। রীতিমত উচ্চস্বরে বলেন, "খোলা তো নাহয় রাখব, কিন্তু যে পরিমাণ মাল আসে সেটা আসছে না তো। এরপর আগামীকাল থেকে আরও কমে যাবে, বুঝতে পারছি।"
দোকানদার রাম আউন বলেন, "একদিন সময় দিলে ভালো হতো, আমরাও দোকানে সেরকম মাল তুলে রাখতে পারিনি যে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করতে পারব। দোকান খুলে রাখতে পারব শুনলাম, কিন্তু মাল আসে নি। প্যাকেটজাত খাবারের ক্ষেত্রে অনেক কোম্পানি এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কর্মচারী নেই।" দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা রবীন পাল বলেন, "সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একদিন খোলা রাখলে আরও ছড়িয়ে যেত করোনাভাইরাস। সমস্যা হবে ঠিকই, নুন ভাত খেয়ে থাকতে হবে ২১ দিন। কিন্তু মহামারীর চেয়ে তো ভালো।"
বেশ কিছু এলাকা ঘুরে আরও দেখা গেল, পাইকারি হারে বিক্রি করা দোকানগুলি জিনিসপত্রের দাম একই রেখেছে। কিন্তু যাঁরা খুচরো বিক্রেতা, তাঁরা এই সময় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তাঁদের সাফ কথা, "মাল নেই বাজারে, নিতে হলে নিন।"