"দোকান খোলা না থাকলে মানুষ খাবে কী? আমি যা বলছি, শোনো। পোস্তা খোলা রাখ। আমি যখন বলছি খোলা রাখ, তখন কথা শোন। পোস্তাবাজার খোলা না রাখলে লোকে কি করে (দরকারি জিনিস) পাবে?" বৃহস্পতিবার বিকালে পোস্তা বাজারে দাঁড়িয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে স্বকীয় ভঙ্গিতে এই নির্দেশ যিনি দিলেন, তিনি বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই বাজারে খাদ্য-সামগ্রীর দর হুহু করতে বাড়তে থেকেছে। পুলিশের ভয়ে দোকান খোলা রাখতে ভয় পাচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী, জরুরি প্রয়োজনেও রাস্তায় নামছেন না অনেকেই। আর এরপরই বুধবার নবান্ন থেকে জরুরি পরিষেবা অব্যাহত রাখতে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা। এরপর দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার নিজেই নেমে পড়লেন পথে। এদিন মমতা বলেন, "পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছে। আমি শুনেছিলাাম, তাই তো এলাম। সকালে দোকান খুলবেন, বিকাল পাঁচটায় বন্ধ করবেন। কাউকে রাস্তায় থাকতে হবে না, স্থানীয় ধর্মশালায় থাকার ব্যবস্থা করা হবে।"
করোন আবহে খাদ্যসামগ্রীর সংকট এড়াতে ত্রাতা সেই মুখ্যমন্ত্রীই। এর আগেও নানা সময়ে পথে নেমে দায়িত্ব সামলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার একদিকে পোস্তাবাজারে পাইকারি দোকান খোলার নির্দেশ, এরপর কলকাতার একের পর এক বাজার পরিদর্শন, এর মাধ্যমে ফের চেনা ছবি দেখা গেল। এমনকী এদিন খড়ি নিয়ে নিজ হাতে রাস্তায় দাগ কেটে দূরত্ব বজায় রেখে কেনা-কাটা করার পাঠ দেন মমতা।
লকডাউন ঘোষণার পর কলকাতা সহ রাজ্যের নানা জায়গায় অকারণে পুলিশি জুলুমের অভিযোগ উঠেছে। খোদ কলকাতাতেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। মমতা বলেন, "নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য সজাগ থাকতে বলেছি। এটা কার্ফু নয়। কোনও পুলিশ মারবে না। কারও জিনিস সিজ করবে না।" এদিন এক ডিসিকে পোস্তাবাজারের দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। খোঁজ নেন কোলে মার্কেট ও শিয়ালদা মার্কেটের।
আরও পড়ুন: করোনায় ১৮ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি মমতার, কী লিখলেন?
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বাজারের হালহকিকত সরেজমিনে দেখতে ছুটে যান লেক মার্কেট, গরিয়াহাট বাজার এবং জানবাজারও। মাঝ পথে রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের কছে বদ্ধ থাকা পশু-পাখিরও খোঁজ নেন। লেক মার্কেটে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় বাজার করতে আসা বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর। তাঁকে সচেতনতার পাঠ দিয়ে মাস্ক এগিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর গরিয়াহাট বাজারে গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়েন সবজির দোকানে। হাতে কলমে শিখিয়ে দেন কীভাবে, কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে সবজি কিনতে হবে। দোকানের সামনের দৃশ্যরূপটা তখন এরকম...
মুখ্যমন্ত্রী: আমাকে একটা খালি ঝুড়ি বা গামলা দাও। (একজনকে দেখিয়ে) তুমি ওখানে দঁড়িয়ে আছ। আমি কিনছি। ঢেঁড়সটা এমন ভাবে এগিয়ে দেবে (নিজে করে দেখালেন)। কাছে যাবে না। যারা পরে এসছে আবার দেখে নাও।"
এরপর, সাধারণ মানুষ বা দোকানদার-কে কতটা যাবে, কোথায় দাঁড়াবে, সব দেখিয়ে দিয়ে দোকানদারকে সাবধান করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে গামলা পুঁছে নেবে। হ্যান্ড গ্লাভস নাও। তোমারও প্রোটেকশন থাকবে।" মোটের উপর এদিন এভাবেই করোনা মোকাবিলার দাওয়াই বাতলান মমতা।
জানবাজারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সবজির দোকানের সামনে ইট দিয়ে বৃত্তাকার দাগ কাটেন। গোল দাগ কেটে দেখিয়ে দেন কীভাবে দাঁড়াতে হবে। যে গোল দাগটা সঠিক দূরত্বে হয়নি তা নিজেই কেটে দেন। এদিন পরিদর্শনের সময় রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের পাশে খাঁচার পাখিদের চিড়িয়াখানায় দিয়ে আসার পরামর্শও দেন মুখ্যমন্ত্রী। জায়গাটা অপরিচ্ছন্ন কেন তাও জানতে চান তিনি। সাধারণের জন্য তিনি যে করোনা আতঙ্কের লড়াইয়ে শামিল আছেন, এদিন সেই বার্তাই দেন মমতা।