শনিবারের সন্ধ্যায় কলকাতার পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলেন মেট্রো রেলের যাত্রীরা। দরজায় হাত আটকে গেল যাত্রীর, সেই অবস্থাতেই ছুটল ট্রেন। সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রৌঢ় ওই যাত্রীর। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মৃতের নাম সজল কুমার কাঞ্জিলাল, বয়স ৬৬, বাড়ি কসবা এলাকায়। তাঁর দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। ঘটনার জেরে তীব্র বিক্ষোভের সৃষ্টি হয় নিত্যযাত্রীদের মধ্যে। এর ফলে অন্তত এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে পার্ক স্ট্রিট স্টেশন থেকে ডাউন লাইনের সমস্ত গাড়ি।
এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, সন্ধ্যা ৬.৪০ নাগাদ নিউ গড়িয়াগামী এসি ট্রেনটি পার্ক স্ট্রিট স্টেশন ছেড়ে ময়দানের দিকে এগোনোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পোড়া গন্ধ ছড়াতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রথমে যাত্রীরা ভাবেন, সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার মতোই ফের আগুন লেগেছে মেট্রোর রেকে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বোঝা যায়, পোড়া গন্ধ কিসের। তার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় থার্ড রেলের বৈদ্যুতিক সংযোগ।
আরও পড়ুন: কলকাতা মেট্রোয় ফের আগুন-আতঙ্ক
সূত্রের খবর, ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে ওঠার সময় দরজায় হাত আটকে যায় সজলবাবুর। যেখানে দরজায় বসানো সেন্সরের কারণে দরজা বন্ধ না হলে ট্রেন ছাড়ার কথা নয়, সেখানে সজলবাবুকে হিঁচড়ে টেনে নিয়েই রওয়ানা দেয় ট্রেন। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান তিনি।
কেন এই মর্মান্তিক গাফিলতি চোখে পড়ল না ট্রেনের ড্রাইভার অথবা গার্ডের, কেন বেজে উঠল না অ্যালার্ম, তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিত্যযাত্রীরা। ঘটনায় প্রশ্নের মুখে রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স বা আরপিএফ কর্মীদের ভূমিকাও। ঘটনার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে আরপিএফ কর্মী পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে মোতায়েন ছিলেন কিনা, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
ট্রেনের তিন নম্বর কামরায় উঠতে গিয়েই প্রাণ হারালেন সজলবাবু, এমনটাই প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। দুর্ঘটনার ফলে ট্রেনটি পার্ক স্ট্রিট স্টেশন ছেড়ে পুরোপুরি বেরোতে পারে নি, কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, সেটি প্রায় আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও কোনও ঘোষণা বা হুঁশিয়ারি জারি করেন নি কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, বারবার কন্ট্রোল রুম এবং ট্রেনের ড্রাইভারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বিফল হন তাঁরা। কিছুক্ষণ পর যাত্রীদের ড্রাইভারের কেবিন দিয়ে বের করে আনা হয়।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে যান কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আশ্বাস দেন তিনি।