বড়দিনের মজা মাটি করল অ্যানাকোন্ডা! তবে মন ভরিয়ে দিয়েছে দুই বোন, ঈশা-নিশা। এই দুই সিংহশাবককে দেখতে খাঁচার সামনে ভিড় উপচে পড়েছে। চিড়িয়াখানায় পা রাখতেই সবার একটাই প্রশ্ন, অ্যানাকোন্ডা কোথায়? তবে অনেকেই আবার ঈশা-নিশার খোঁজও করছেন।
বড়দিন মানেই আলিপুরে শিম্পাঞ্জি, বাঘ, সিংহ, কুমীর দেখার হিড়িক। বুধবারও সেই রীতির অন্যথা হল না। দুই সিংহশাবক ঈশা, নিশা, চারটি বুনো কুকুর ও অ্যানাকোন্ডা দেখতেই মূলত সকাল থেকেই উপচে পড়েছিল ভিড়। গত রবিবারই এদের দর্শকদের সামনে নিয়ে আসা হয়। কয়েক মাসে আগেই চিড়িয়াখানায় জন্মেছে ওই দুই সিংহশাবক। তাই ওরাই এ বছর বড়দিনের ছুটিতে চিড়িয়াখানার বিশেষ আকর্ষণ।
চিড়িয়াখানার সরীসৃপ বিভাগের সামনে এদিন ভিড় জমান কাতারে কাতারে দর্শক। সেখানে প্রবেশ করেই সবার মুখে প্রথম প্রশ্ন, অ্যানাকোন্ডা কোথায়? কেউটে, চন্দ্রবোড়া, বার্মিজ পাইথন, রক পাইথন-সহ আরও একাধিক সাপ চোখে পড়লেও অ্যানাকোন্ডার দেখা মিলল না সেখানে। হতাশ হয়ে বেরিয়ে, বিরক্তি ভরা মুখ নিয়ে একজন বলে উঠলেন "কোথায় অ্যানাকোন্ডা?" দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা এক স্বেচ্ছাসেবী খুব ধীর গতিতেই সেই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, "এখানে রাখা হয়নি। তার জন্য আলাদা খাতির যত্ন। বাম দিক ধরে এগিয়ে যান, সামনেই পাবেন"। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল অ্যানাকোন্ডার খাঁচার সামনে চলছে গুঁতোগুঁতি। একঝলক যদি তার দেখা পাওয়া যায়, তাহলে জীবন যেন সার্থক। কিন্তু অ্যানাকোন্ডা বাবাজির দেখা নেই। কোথায় যে সে লুকিয়ে বসে আছে! তবে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকার পর এক ঝলক দেখা মেলা 'ভাগ্যবানদের' মুখ-চোখে হতাশা স্পষ্ট। আসলে অ্যানাকোন্ডার আকৃতি দেখে মন ভেঙেছে অনেকের। মন মরা হয়ে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেল, 'এখনও বেশ ছোট...পাইথনটাকে দেখেই ভালো লাগল'।
হরিণের খাঁচার সামনে দাঁড়ানো এক দর্শক আক্ষেপের সুরে বলে উঠলেন "ধুর! চিড়িয়াখানা জুড়ে শুধুই হরিণ"। অন্যদিকে, ক্যাসোয়ারি পাখিকে দেখে অনেকের 'মুরগী মুখ' মনে হয়েছে। এক মাঝবয়সী লোক ক্যাঙ্গারুর খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে আলিপুর চিড়িয়াখানায় পেঙ্গুইন দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে বসলেন পরিবারের সদস্যদের কাছে।
বেলা গড়াতেই ভিড় ক্রমশ আরও গাঢ় হতে শুরু করে। ইতিমধ্যে, অনেকেরই ব্যাগ থেকে বেরিয়ে পড়েছে কমলালেবু, কষা মাংস আর বিরিয়ানির গন্ধেও ম ম করছে চারপাশ। এদিকে, শীতের দুপুরে সদ্য ঘুম দিয়েছে সাদা বাঘটি, কিন্তু দর্শকদের উত্তেজনার ঠেলায় তার আর বিশ্রামের উপায় নেই। ডেকে ডেকে ঘুম ভাঙিয়ে দিচ্ছেন দর্শকরা। ওদিকে গন্ডার, দুই কচ্ছপ (কথা-কলি) নিজ খেয়ালেই রয়েছে। দর্শকদের মনোরঞ্জন করার কোনো ইচ্ছাই যে তাদের নেই তা ভঙ্গিমাতেই স্পষ্ট। তবে দর্শকদের মজা দিতে সর্বক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে শিম্পাঞ্জিকে। জিরাফও কম যায় না। পাহাড় সমান মাথা নিয়ে দিব্য দুলে দুলে দর্শকদের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে সে।
তথ্য বলছে, গত রবিবার ভিড়ের নিরিখে সবাইকে টেক্কা দিয়েছিল চিড়িয়াখানা। তবে বড়দিনে দর্শকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৮ হাজার। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত জানিয়েছেন, "নতুন সদস্য আনাতে আশা করেছিলাম বড়দিনে দর্শক সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়াবে। কিন্তু রবিবার প্রায় ৫৩ হাজার দর্শক এসে যাওয়ায় বুধবার তেমন ভিড় হল না"।